জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি এবং জাতির পিতার অবদান

9377

Published on মে 28, 2018
  • Details Image

কাজী সেলিমঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের সামরিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শিরোনামে আমার লেখাটি বাংলার বাণীসহ অন্যান্য পত্রিকায় আশির দশকের মাঝামাঝি (দেশ যখন সামরিক শাসনের কবলে শাসিত হচ্ছিল) প্রকাশিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের অবদানের ওপর লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে পরিণত করা।

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু যখন কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একাডেমির দ্বার উদঘাটন করেছিলেন, তখনকার ওই স্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনার বিস্তারিতসহ স্মৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবহুল বিষয়টি বিশদভাবে উল্লেখ করে বর্ণনা করেছিলাম ওই লেখায়। আমার লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল- স্বাধীন বাংলাদেশে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে শূন্য হাতে পুনর্গঠন করার মহাপরিকল্পনা ও অসাধ্য প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে কিভাবে গড়ে তুলেছিলেন। প্রথমে তিনি সামরিক বাহিনীর একাডেমি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। জাতির পিতার এই বিশাল কৃতিত্বপূর্ণ অবদানকে কোনদিনই তখনকার সামরিক শাসকদের নেতৃবৃন্দ, তথা পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনকারী অফিসারগণ এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর বদান্যতায় ও মহানুভবতায়, আমাদের বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি ও দ্রুত পদোন্নতিপ্রাপ্ত লে. জেনারেল ও জেনারেলগণ কখনই প্রচার বা প্রকাশ করেনি কিংবা এখনও রাজনীতিতে জড়িত ২/১ জন পাক-প্রত্যাবর্তনকারী অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের কথায় বা ভাষায় উচ্চারিত হয় না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করার মহাপরিকল্পনার মিথ্যা, বানোয়াট কুরুচিপূর্ণ ভিত্তিহীন অবাস্তব প্রচারণার অন্যতম একটি প্রচারণা ছিল, বঙ্গবন্ধু তথা তার সরকার কর্তৃক দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি অবহেলা। ’৭১-এর দালাল-রাজাকার-আলবদর তথা আমাদের সামরিক বাহিনীতে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনকারী কিছুসংখ্যক উচ্চাবিলাসী, ক্ষমতাদখলকারী সুবিধাভোগী ষড়যন্ত্রকারী এবং জাতির পিতার হত্যাকারী খুনী ঘাতকদের মতলববাজি প্রচারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কোন সুযোগ ছিলো না। সেই সুযোগে ’৭৫-এর ঘাতক খুনী, পাকি দালাল রাজাকার তথা সকল ষড়যন্ত্রকারীদের নিখুঁতভাবে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ এবং অপপ্রচার চালায়।

পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনকারী, ’৭৫-এর পরবর্তী অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী ও তার অমিয় স্বাদ ভোগকারী ওই সকল উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্তগণ কোনদিনই টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিস্থলে কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদের শ্রদ্ধাটুকু প্রদর্শন করেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের বাহিনীর উচ্চতর পদে অবসর গ্রহণের পর আজও ওই সফল পাক প্রত্যাবর্তনকারীরা আরাম-আয়েশে বিলাসিতা ও উচ্চ তকমার সকল সুবিধাই পরিবার পরিজন নিয়ে ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে, জাতির পিতার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনকারী, বীর মুক্তিযোদ্ধারা সরকারের সীমিত সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে কোন প্রকারে জীবনযাপন করছেন। বাঁচার তাগিতে আজও ’৭১-এর ওই সকল বীর সন্তান কেউ কেউ রিক্সা ও ভ্যান চালিয়ে, নয়ত বা ছোট্ট একটি পান চায়ের দোকান দিয়ে সামান্যতম রোজগার দিয়ে জীবনমরণ যুদ্ধে লিপ্ত আছেন। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ও লজ্জাকর বিষয় আজ ’৭১-এর বীরদের জন্য চরম অসম্মান ও অবহেলিত বলে বিবেচিত হচ্ছে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সামরিক বাহিনীর অফিসারদের আরও উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করে আমাদের সামরিক অফিসারদের পেশাগত দক্ষতা, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করেন। আমাদের প্রতিরক্ষার মানকে বিশ্বের চাহিদা ও যে কোন জাতীয় সঙ্কট ও দুর্যোগে নিয়োজিত করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার সর্বাত্মক প্রস্তুতির একটি অধ্যায় বা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচী হিসেবে ঢাকার মিরপুরের বর্তমান ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই এনডিসিতে প্রতিবছর আমাদের তিন বাহিনীর অফিসারসহ বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করে থাকেন। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন সামরিকভাবে পরিগণিত পরাক্রমশালী রাষ্ট্রসমূহের উচ্চপদস্থ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারাও বাংলাদেশের এই এনডিসিতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

অত্যন্ত গর্ব ও অহঙ্কারের বিষয় যে- বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালসহ তিনবার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সুসজ্জিত করে বর্তমান বিশ্বের সামরিক, কূটনৈতিক ও বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের সামরিক কূটনৈতিক ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে, সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমুদ্রসীমা ঘাঁটি, পতাকা ও সঙ্গীতকে রক্ষার ও স্বযত্নে লালিত পালিত করার সর্বাত্মক পরিকল্পনা ও কর্মসূচী গ্রহণ করে তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় এবং আমাদের নিজস্ব অধিকারকে সমুন্নত ও নিজস্ব, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের মহান আদর্শ ও দীক্ষায় দিক্ষিত হয়ে, গর্বিত পিতার ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’কে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে অদক্ষ ও সুদূরপ্রসারী প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহকে আধুনিক ও উন্নত বাহিনীতে পরিণত করার মহাপরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ, শ্রম ও নিষ্ঠাকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করেছেন। তিনি ও তার সরকার আধুনিক যুদ্ধ, প্রযুক্তির সবধরনের প্রশিক্ষণের বহুমাত্রা ব্যবহার করে, দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সদাপ্রস্তুত, দেশ জাতির অতন্ত্র প্রহরীর এক শক্তিশালী গর্বিত বাহিনীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় এবং ফোর্সেস গোল ২০৩০ ‘আওতাধীন বাংলাদেশের জল, স্থল আকাশ এবং আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মাটি পতাকা ও সঙ্গীতকে সুরক্ষা করে, দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ’৭১ ও ’৭৫-এর ষড়যন্ত্রকারী, খুনী ঘাতক, সম্ভাব্য জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে গোটা দেশের জনগণ তথা জাতির নিরাপত্তার আচ্ছাদনে আবৃত করে একটি শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করে তার খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। বিশ্ব এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রের স্ব-স্ব নিরাপত্তা, পরিকল্পনার পরিবর্তন ও উন্নয়নের লক্ষে বাংলাদেশকে বিশ্বের নিরাপত্তার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জ্য ও সঙ্গতি রেখে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির বাস্তবায়নের দৃঢ় ও শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহকে শক্তিশালী, দক্ষ, পেশাগত, সুশৃঙ্খল একটি যুগোপযোগী, বাহিনীতে রূপান্তরিত করার সর্বাত্মক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জাতির পিতার কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার।

১৯ মার্চ ২০১৮, মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ২০১৮ খসড়াটি বর্তমান বিদ্যমান ও প্রচলিত নীতি- যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালেই প্রণয়ন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুমোদিত এই জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন হবে একটি মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে। যার পরিপ্রেক্ষতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিরাপত্তাবিষয়ক একটি জাতীয় কমিটি থাকবে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব মাটি, আমাদের পতাকা রাষ্ট্রীয় ভূ-খন্ড, সমুদ্রসীমা, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জাতীয় সঙ্গীতকে রক্ষার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ হিসেবে থাকবে এই কমিটি। ‘নীতিমালা’য় সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তিকে সামরিক ও সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

এই প্রতিরক্ষা নীতির খসড়া ঘোষণার পরপরই বিজ্ঞ মন্তব্যকারী টকশো এবং মিডিয়াকে বলেছেন, ‘এই প্রতিরক্ষা নীতি আরও আগেই ঘোষণা করা উচিত ছিল’। মন্তব্যটি আমার কাছে শোভনীয় ও যৌক্তিক মনে হয়নি। কারণ তারা বলেনি কাদের করা উচিত ছিল বা কার দ্বারা করা উচিত ছিলো। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকা-ের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের ধ্যান-ধারণা ছিল ক্ষমতা দখল করে বিলাসবহুল জীবনযাপন আর জনগণকে ধোঁকা দিয়ে দেশ পরিচালনা করা। দেশকে রক্ষা করা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাদের লক্ষ্য ছিলো না। তাই সেই শাসকের সময় কেন হয়নি তা তাদের স্পষ্ট করে বলা উচিত ছিল।

সবকিছুর সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮ হবে একটি সূদূরপ্রসারী, সময়োপযোগী দেশ ও জাতির একটি কল্যাণমূলক নীতি। যার সর্বাঙ্গীন বাস্তবায়নে থাকবে বাংলাদেশের একটি দক্ষ সুশিক্ষিত, নিষ্ঠাবান উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বর্তমান বিশ্বের রাজনীতি, কূটনীতি ও রণনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চৌকস সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ আমাদের আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী। এই বাহিনী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ জঙ্গীবিরোধী তৎপরতার পাশাপাশি ভয়ঙ্কর মাদক ব্যবহার কালোবাজার, বাজারজাতকরণ ও মাদকদ্রব্য আমদানির বিরুদ্ধেও দেশব্যাপী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- যা আমাদের এই প্রতিরক্ষা নীতির অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। এই প্রতিরক্ষা নীতির আওতাধীন থাকা উচিত হবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোন জঙ্গীবিরোধী, জঙ্গী মদদ, লালন পালন জঙ্গীর অনুপ্রবেশকারী যে কোন ধরনের সংগঠন, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর উদ্যোগ বা মিডিয়া ব্যবহারকারী, সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ, ত্রাস সৃষ্টি করার যে কোন অপপ্রয়াসের উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টাকে প্রাথমিক পর্যায়েই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস, বা মূলৎপাটন করা। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তার প্রয়োজনীয়তা মোতাবেক প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সাজসরঞ্জামি ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ দ্বারা সুসজ্জিত করার সম্পূর্ণ অধিকার রাখে। তেমনি আবার একটি প্রতিরক্ষা নীতি এবং মিত্ররাষ্ট্র ও দেশসমূহের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সামরিক বিষয়ে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তামূলক স্বার্থ বজায় রাখার লক্ষ্যে এটাই আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল বাণী, যা জাতির জনক স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করতেন। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কার সঙ্গে শত্রুতা নয়‘ বঙ্গবন্ধুর অনূসৃত পররাষ্ট্র নীতির এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ও নীতিমালায় সৃষ্ট আমাদের দেশের অর্থনীতি কূটনীতির পাশাপাশি বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সামাজিক সাংস্কৃতিক বন্ধুপ্রতিম সুসস্পর্ক এখনও বজায় রাখছে। দক্ষিণ এশিয়া, তথা আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সর্বদা নিয়োজিত ও লিপ্ত থাকতে হবে। এভাবেই বাংলাদেশ একদিন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী প্রভাবশালী দেশ হিসাবে পরিগণিত হবে। এই জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা শুধু ‘ডিফেন্স গোলস ২০৩০’ এর মধ্যেই সীমবদ্ধ থাকবে না।

বাংলাদেশের এই প্রতিরক্ষা নীতিমালা দেশের জনগণকে রক্ষা করবে আমাদের ’৭১-এর মুক্তি সংগ্রামের ভিত্তিতে রচিত জাতীয় চেতনাকে, জনগণের স্বার্থ কল্যাণ নিরাপত্তা তথা ভাল-মন্দকে দেখভাল করাসহ সুরক্ষিত করবে দেশের অতন্ত্রপ্রহরী হিসেবে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে, ভূখ-কে। রক্ষা করবে বাংলাদেশের জল, স্থল অন্তরিক্ষ, আমাদের দেশ জাতির বীরত্বগাথা গৌরব ও অহঙ্কারের প্রতীক, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতকে, গোটা দেশ ও জাতির এক অভেদ্য ইস্পাত দৃঢ় নিরাপত্তার বলয় হিসেবে সদাসতর্ক অতন্দ্র প্রহরীর মতো দেশের যে কোন জাতীয় সঙ্কট বা ক্রান্তিকালীন সময়ে দেশের জনগণের পাশে নিরাপত্তার জাতীয় বলয় হিসেবে বিদ্যমান থাকবে।

আমরা বাঙালী জাতি একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে ঔপনিবেশিক পাকহানাদার মুক্ত করেছি, দেশকে আমরা সকলে মিলে স্বাধীন করেছি। একটি গর্বিত বীরের জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে নিজেদের অর্জিত গৌরব, সম্মান, মর্যাদা ও স্বাধীনতার চেতনাকে লালন পালন ও সংরক্ষণ করে বিশ্বের দরবারে সমুন্নত রাখব আমাদের দেশ জাতি ও স্বাধীনতাকে সার্বভৌমত্বকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আমাদের গৌরবান্বিত পদচারণা থাকবে ’৭১-এর গর্বিত বীরের বীর উন্নত মমশিরের শক্তি-সাহস, চিন্তা-চেতনার সাহসী জাতির মনের দীক্ষিত, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে- জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির এটাই হবে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত