6658
Published on মে 16, 2018সাপ্তাহিক এই সময়-এ আমি মাঝেমধ্যে কলাম লিখি। পত্রিকাটি বাজারের অন্য সব সংবাদভিত্তিক ম্যাগাজিন থেকে নিজের আলাদা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পেরেছে পাঠক মহলে। তাই এই সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যাচ্ছে। পাঠকসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি এই পত্রিকার একটি প্রচ্ছদ কাহিনি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত (বর্ষ ৫ সংখ্যা ১৬) এই প্রচ্ছদের শিরোনাম ছিল ‘এই লজ্জা কার?’ যেখানে নারীর অগ্রযাত্রায় নানা বাধা-বিপত্তির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। নারী নিপীড়নের সামাজিক একটি চিত্রও ওঠে এসেছে। নারীর প্রতি যে সহিংসতা, অবিচার তা থেকে অবশ্যই উত্তরণ দরকার। এ বিষয়ে আমি একমত। তবে আমাদের দেশে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক ধারা বহমান, সেই দিকটি নিয়ে আমি আলোচনা করবো এখানে। প্রথমেই বলতে হয় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। কিছু দিন আগেই তিনি নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্মানজনক ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। গত ২৭ এপ্রিল সিডনিতে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন এই পুরস্কার দেয়। তার মানে শুধু দেশেই একটি ভ‚-অঞ্চলের নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রেখে চলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন- শীর্ষ পর্যায়ে না হয় নারী নেতৃত্ব আছে, তৃণমূল পর্যায়ের নারীর অগ্রগতির চিত্রটা কেমন? এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিতে চাই। গত বছর বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন শারমীন আক্তার। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি পান ‘গোল্ড মেডেল।’ অথচ পড়াশোনার সময়েই বিয়ে হয়েছিল শারমীনের। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন ২০১১ সালে। ২০১০-১১ সেশনের বাংলা বিভাগ ও কলা অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেন ২০১৫ সালে। তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৫৮। ২০১৪-১৫ সেশনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকের ফলাফলের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৬’-এর জন্য মনোনীত হন। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রæয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। শারমীনের সঙ্গে সারা দেশের ২৬৫ জন স্নাতকে বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। শারমীন অনুষদভিত্তিক এ সম্মাননার জন্য মনোনয়ন পান গত বছরের এপ্রিলে। কয়েক বছর ধরেই প্রধানমন্ত্রী এ পদক দিচ্ছেন। এভাবে শিক্ষার প্রতিটি ধাপেই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল করছে। শিক্ষার্থী সংখ্যায় মেয়েরা কোথাও এগিয়ে, কোথাও সমানে সমান। বৈশ্বিক পর্যায় থেকে আমাদের এই অগ্রগতি প্রশংসিত শুধু নয়, পুরস্কৃতও হচ্ছে।
তবে এখানেই থেমে থাকলে হবে না। নারীর ক্ষমতায়নের যে বৈশ্বিক মান, তার সব ধাপ অতিক্রম করতে হবে আমাদের। নইলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) যে পথযাত্রা তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে বড় বাধা হিসেবে আছে একশ্রেণির উগ্রবাদী। তারা সবসময়ই নারীকে অন্দরমহলে বন্দি করে রাখতে চায়। অথচ ধর্মীয় দিক বিবেচনায় নিলেও কর্মক্ষেত্রে নারীর বিচরণ ইতিবাচক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করার কথা। মানবাধিকার ও মানবিক আত্মমর্যাদাবোধে নারী-পুরুষ একই কাতারে থাকতে হবে- এ বিষয়ে সারা দুনিয়া মোটামুটি একই অবস্থানে আছে। ইসলামে মানবাধিকার নিয়ে যে কায়রো ঘোষণা (সিডিএইচআরআই) রয়েছে সেখানেও এর প্রতিফলন আছে। এই ঘোষণা কিন্তু ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর গৃহীত জাতিসংঘ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও- দ্য কমিশন অন দ্য অ্যালিমিনেশন অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনেস্ট উইমেন) সনদকেও সমর্থন দেয়। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার সিডও সনদটি অনুমোদন করে। অনুমোদনের সময় সরকার চারটি ধারায় আপত্তিসহ স্বাক্ষর করে। পরে ১৯৯৭ সালে দুটি ধারা থেকে বাংলাদেশ তার আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়। বাকি দুটি ধারা থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। তবে সিডও সনদের পুরোপুরি বাস্তবায়নে আমাদের দেশকে আরো অনেকটা পথ যেতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, নারী অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেই পথ থেকে কখনো সরে দাঁড়ায়নি।
সিডনিতে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নেওয়ার আয়োজনে গিয়েও শেখ হাসিনা নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। যেসব নারী তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন সেই নারীদের উৎসর্গ করেছেন তার পুরস্কার। পুরস্কার গ্রহণ করার পর তিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি একটি জোট গঠনের তাগিদ দেন। নারী ক্ষমতায়ন এবং নারী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের প্রতি সমর্থন ও অধিকার নিশ্চিতে একটি নতুন জোট গঠন করতে হবে। যে যার জায়গা থেকে নারীদের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’ তার চার দফা হচ্ছে- প্রথমত, নারীর সক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রচলিত একমুখী ধারণা পরিহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রান্তিক ও ঝুঁকির মুখে থাকা নারীরা এখনো কম খাদ্য পাচ্ছে, স্কুলে যেতে পারছে না, কম মজুরিতে কাজ করছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কোনো নারী ও মেয়েকে পেছনে রাখা উচিত নয়। তৃতীয়ত, নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে এবং চতুর্থত, জীবন ও জীবিকার সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম- সে দিনের বক্তব্যে এ বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ধর্মের নামে যারা নারী জাতিকে পিছিয়ে রাখতে চায়, তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছে। তাদের উদ্দেশে এবার কিছু উল্লেখ করতে চাই। আমি বলতে চাই, ইসলাম ধর্ম নারীর স্বাধীন অর্থনৈতিক সত্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্পত্তির মালিকানা এবং ভোগদখলের অখণ্ড অধিকার দিয়েছে নারীকে। মানব জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে অর্থনৈতিক অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কন্যা, স্ত্রী, বোন ও মাতা হিসেবে মুসলিম নারীর মিরাস বা উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত সম্পত্তির মালিক পিতা ও স্বামী উভয় দিক থেকে উত্তরাধিকার লাভ করে তারা পেয়েছে মালিকানাস্বত্ব এবং তা স্বাধীনভাবে ব্যয় করার পূর্ণ অধিকার। ইসলাম নারীকে পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে মতামত প্রকাশ ও সমাজকল্যাণের যেকোনো কর্মকাণ্ডে নারীরা পুরুষের মতোই অংশগ্রহণ করতে পারবে।
জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। একজন পুরুষের যেমন অধিকার আছে নিজের পছন্দের কাউকে বেছে নেওয়ার তেমনটি নারীর জন্যও রয়েছে। ইসলাম বলেছে, কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেওয়া আইনগত অপরাধ। বিবাহ বিচ্ছেদ ও তালাকের ক্ষেত্রে ইসলাম নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। একজন স্বামীর তার অবাধ্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি অত্যাচারী অযোগ্য অকর্মন্য স্বামীর কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য একজন স্ত্রীরও তালাক দেওয়ার অধিকার আছে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মর্যাদা ও পারিবারিক-সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদা লাভে সহায়তা করেছে ইসলাম। অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এসব বিষয় সামনে আনছে। তারা চাইছে সদস্য দেশগুলো যাতে নারীর অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে। নারীর অধিকার সুরক্ষায় ইসলামের যে বিধান, তা যদি প্রতিটি রাষ্ট্রে কার্যকর হয়, তবে তা পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ হতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনেক মুসলিম দেশ আছে উল্টোপথে। তারা ইসলামের আলোকে নারীর অধিকার নিশ্চিত করছে না। বরং নারীর অধিকার আরো খর্ব করছে। এ কারণে ইসলাম ও মুসলমান প্রসঙ্গে ভুল ব্যাখ্যা তৈরির সুযোগ নিচ্ছে ইসলামবিদ্বেষীরা। আশার কথা হচ্ছে, নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এখন আইসির অধীনে থাকার ইনডিপেনডেন্ট পারমানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইপিএইচআরসি) আরো সক্রিয় হয়েছে। তারা সদস্য দেশগুলোয় নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে মেয়েরা যাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রের জন্য আরো উপযোগী করা। এতে করে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রা কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে, যা এগিয়ে দেবে নারী-পুরুষ সমতার বিষয়টিকে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে উন্নীত হয়েছে। এর জন্য এই দেশের নারী সমাজের রয়েছে উদ্যোগী সক্রিয় অংশগ্রহণ। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে এই ক্ষেত্রের প্রায় ২২ ধরনের কাজের ১৯ ধরনের কাজ হয় নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আজকে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে, ফসল উৎপাদন, শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে অর্জন হয়েছে, তাতে নারীর ভূমিকা দৃশ্যমান। মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগির খামারসহ এই কাজগুলোতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার এক বিশাল উল্লেখযোগ্য অংশ। যে শিল্পের শতকরা আশি-পঁচাশি ভাগ হচ্ছে নারী শ্রমিক তাদের জীবনে এখনো যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। যদিও এটা সত্য যে, শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের ফলে তাদের জীবনে একটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। আর্থিক উপার্জনের ভেতর দিয়ে তারা ক্ষমতায়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। পরিবারে তার অবস্থান অনেকখানি পরিবর্তিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা ও আর্থিক সুযোগ এখনো তার জীবনে পুরো অধিকার ও সম্মান আনতে পারেনি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জীবনের নানা ঝুঁকিপূর্ণ দিক ধরা পড়েছে। তাই এক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন এখনো ঝুঁকিতে আছে। তাদের গৃহায়ন, যাতায়াত এবং সন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। এসব হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের বড় চ্যালেঞ্জ।
এখানে বলতে চাই, বৈশ্বিকভাবে গৃহীত এসডিজির ৫ এবং ১০ নম্বর ধারায় নারী পুরুষের সমতা ও বৈষম্য বিলোপের ধারা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের অতি জরুরিভাবে নিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেনারেল ইকোনোমিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সবার জন্য যে নির্দেশনা পুস্তিকা তৈরি ও প্রকাশ করেছে তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে যথাযথ বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকা দরকার। এসডিজির ধারা-৫ বাস্তবায়নে নারীর মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মসূচি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা কিভাবে স্থায়ী করা যায়- এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে যেমন ভূমিকা রাখতে হবে, তেমনি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
দীর্ঘকাল ধরেই এ দেশের অবরোধবাসিনীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা দ্রুত নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছে, এগিয়ে দিচ্ছে দেশকে। প্রায় শতবর্ষ পূর্বে যার শুভ সূচনা করেছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। সীমাহীন বাধা-বিপত্তির দেয়াল ভেঙে তাদের যে অগ্রযাত্রা তার মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে এই দেশের নারীরা আরো এগিয়ে যাবে- এর বিকল্প কিছু গ্রহণীয় হতে পারে না। নারী জাতির জয় হোক। জয় হোক মানবতার।
লেখকঃ সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার
সাপ্তাহিক এই সময়-এ আমি মাঝেমধ্যে কলাম লিখি। পত্রিকাটি বাজারের অন্য সব সংবাদভিত্তিক ম্যাগাজিন থেকে নিজের আলাদা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পেরেছে পাঠক মহলে। তাই এই সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যাচ্ছে। পাঠকসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি এই পত্রিকার একটি প্রচ্ছদ কাহিনি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত (বর্ষ ৫ সংখ্যা ১৬) এই প্রচ্ছদের শিরোনাম ছিল ‘এই লজ্জা কার?’ যেখানে নারীর অগ্রযাত্রায় নানা বাধা-বিপত্তির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। নারী নিপীড়নের সামাজিক একটি চিত্রও ওঠে এসেছে। নারীর প্রতি যে সহিংসতা, অবিচার তা থেকে অবশ্যই উত্তরণ দরকার। এ বিষয়ে আমি একমত। তবে আমাদের দেশে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক ধারা বহমান, সেই দিকটি নিয়ে আমি আলোচনা করবো এখানে। প্রথমেই বলতে হয় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। কিছু দিন আগেই তিনি নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্মানজনক ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। গত ২৭ এপ্রিল সিডনিতে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন এই পুরস্কার দেয়। তার মানে শুধু দেশেই একটি ভ‚-অঞ্চলের নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রেখে চলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন- শীর্ষ পর্যায়ে না হয় নারী নেতৃত্ব আছে, তৃণমূল পর্যায়ের নারীর অগ্রগতির চিত্রটা কেমন? এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিতে চাই। গত বছর বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন শারমীন আক্তার। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি পান ‘গোল্ড মেডেল।’ অথচ পড়াশোনার সময়েই বিয়ে হয়েছিল শারমীনের। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন ২০১১ সালে। ২০১০-১১ সেশনের বাংলা বিভাগ ও কলা অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেন ২০১৫ সালে। তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৫৮। ২০১৪-১৫ সেশনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকের ফলাফলের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৬’-এর জন্য মনোনীত হন। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রæয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। শারমীনের সঙ্গে সারা দেশের ২৬৫ জন স্নাতকে বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। শারমীন অনুষদভিত্তিক এ সম্মাননার জন্য মনোনয়ন পান গত বছরের এপ্রিলে। কয়েক বছর ধরেই প্রধানমন্ত্রী এ পদক দিচ্ছেন। এভাবে শিক্ষার প্রতিটি ধাপেই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল করছে। শিক্ষার্থী সংখ্যায় মেয়েরা কোথাও এগিয়ে, কোথাও সমানে সমান। বৈশ্বিক পর্যায় থেকে আমাদের এই অগ্রগতি প্রশংসিত শুধু নয়, পুরস্কৃতও হচ্ছে।
তবে এখানেই থেমে থাকলে হবে না। নারীর ক্ষমতায়নের যে বৈশ্বিক মান, তার সব ধাপ অতিক্রম করতে হবে আমাদের। নইলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) যে পথযাত্রা তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে বড় বাধা হিসেবে আছে একশ্রেণির উগ্রবাদী। তারা সবসময়ই নারীকে অন্দরমহলে বন্দি করে রাখতে চায়। অথচ ধর্মীয় দিক বিবেচনায় নিলেও কর্মক্ষেত্রে নারীর বিচরণ ইতিবাচক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করার কথা। মানবাধিকার ও মানবিক আত্মমর্যাদাবোধে নারী-পুরুষ একই কাতারে থাকতে হবে- এ বিষয়ে সারা দুনিয়া মোটামুটি একই অবস্থানে আছে। ইসলামে মানবাধিকার নিয়ে যে কায়রো ঘোষণা (সিডিএইচআরআই) রয়েছে সেখানেও এর প্রতিফলন আছে। এই ঘোষণা কিন্তু ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর গৃহীত জাতিসংঘ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও- দ্য কমিশন অন দ্য অ্যালিমিনেশন অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনেস্ট উইমেন) সনদকেও সমর্থন দেয়। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার সিডও সনদটি অনুমোদন করে। অনুমোদনের সময় সরকার চারটি ধারায় আপত্তিসহ স্বাক্ষর করে। পরে ১৯৯৭ সালে দুটি ধারা থেকে বাংলাদেশ তার আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়। বাকি দুটি ধারা থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। তবে সিডও সনদের পুরোপুরি বাস্তবায়নে আমাদের দেশকে আরো অনেকটা পথ যেতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, নারী অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেই পথ থেকে কখনো সরে দাঁড়ায়নি।
সিডনিতে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নেওয়ার আয়োজনে গিয়েও শেখ হাসিনা নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। যেসব নারী তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন সেই নারীদের উৎসর্গ করেছেন তার পুরস্কার। পুরস্কার গ্রহণ করার পর তিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি একটি জোট গঠনের তাগিদ দেন। নারী ক্ষমতায়ন এবং নারী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের প্রতি সমর্থন ও অধিকার নিশ্চিতে একটি নতুন জোট গঠন করতে হবে। যে যার জায়গা থেকে নারীদের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’ তার চার দফা হচ্ছে- প্রথমত, নারীর সক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রচলিত একমুখী ধারণা পরিহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রান্তিক ও ঝুঁকির মুখে থাকা নারীরা এখনো কম খাদ্য পাচ্ছে, স্কুলে যেতে পারছে না, কম মজুরিতে কাজ করছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কোনো নারী ও মেয়েকে পেছনে রাখা উচিত নয়। তৃতীয়ত, নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে এবং চতুর্থত, জীবন ও জীবিকার সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম- সে দিনের বক্তব্যে এ বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ধর্মের নামে যারা নারী জাতিকে পিছিয়ে রাখতে চায়, তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছে। তাদের উদ্দেশে এবার কিছু উল্লেখ করতে চাই। আমি বলতে চাই, ইসলাম ধর্ম নারীর স্বাধীন অর্থনৈতিক সত্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্পত্তির মালিকানা এবং ভোগদখলের অখণ্ড অধিকার দিয়েছে নারীকে। মানব জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে অর্থনৈতিক অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কন্যা, স্ত্রী, বোন ও মাতা হিসেবে মুসলিম নারীর মিরাস বা উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত সম্পত্তির মালিক পিতা ও স্বামী উভয় দিক থেকে উত্তরাধিকার লাভ করে তারা পেয়েছে মালিকানাস্বত্ব এবং তা স্বাধীনভাবে ব্যয় করার পূর্ণ অধিকার। ইসলাম নারীকে পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে মতামত প্রকাশ ও সমাজকল্যাণের যেকোনো কর্মকাণ্ডে নারীরা পুরুষের মতোই অংশগ্রহণ করতে পারবে।
জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। একজন পুরুষের যেমন অধিকার আছে নিজের পছন্দের কাউকে বেছে নেওয়ার তেমনটি নারীর জন্যও রয়েছে। ইসলাম বলেছে, কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেওয়া আইনগত অপরাধ। বিবাহ বিচ্ছেদ ও তালাকের ক্ষেত্রে ইসলাম নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। একজন স্বামীর তার অবাধ্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি অত্যাচারী অযোগ্য অকর্মন্য স্বামীর কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য একজন স্ত্রীরও তালাক দেওয়ার অধিকার আছে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মর্যাদা ও পারিবারিক-সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদা লাভে সহায়তা করেছে ইসলাম। অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এসব বিষয় সামনে আনছে। তারা চাইছে সদস্য দেশগুলো যাতে নারীর অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে। নারীর অধিকার সুরক্ষায় ইসলামের যে বিধান, তা যদি প্রতিটি রাষ্ট্রে কার্যকর হয়, তবে তা পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ হতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনেক মুসলিম দেশ আছে উল্টোপথে। তারা ইসলামের আলোকে নারীর অধিকার নিশ্চিত করছে না। বরং নারীর অধিকার আরো খর্ব করছে। এ কারণে ইসলাম ও মুসলমান প্রসঙ্গে ভুল ব্যাখ্যা তৈরির সুযোগ নিচ্ছে ইসলামবিদ্বেষীরা। আশার কথা হচ্ছে, নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এখন আইসির অধীনে থাকার ইনডিপেনডেন্ট পারমানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইপিএইচআরসি) আরো সক্রিয় হয়েছে। তারা সদস্য দেশগুলোয় নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে মেয়েরা যাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রের জন্য আরো উপযোগী করা। এতে করে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রা কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে, যা এগিয়ে দেবে নারী-পুরুষ সমতার বিষয়টিকে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে উন্নীত হয়েছে। এর জন্য এই দেশের নারী সমাজের রয়েছে উদ্যোগী সক্রিয় অংশগ্রহণ। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে এই ক্ষেত্রের প্রায় ২২ ধরনের কাজের ১৯ ধরনের কাজ হয় নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আজকে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে, ফসল উৎপাদন, শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে অর্জন হয়েছে, তাতে নারীর ভূমিকা দৃশ্যমান। মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগির খামারসহ এই কাজগুলোতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার এক বিশাল উল্লেখযোগ্য অংশ। যে শিল্পের শতকরা আশি-পঁচাশি ভাগ হচ্ছে নারী শ্রমিক তাদের জীবনে এখনো যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। যদিও এটা সত্য যে, শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের ফলে তাদের জীবনে একটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। আর্থিক উপার্জনের ভেতর দিয়ে তারা ক্ষমতায়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। পরিবারে তার অবস্থান অনেকখানি পরিবর্তিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা ও আর্থিক সুযোগ এখনো তার জীবনে পুরো অধিকার ও সম্মান আনতে পারেনি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জীবনের নানা ঝুঁকিপূর্ণ দিক ধরা পড়েছে। তাই এক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন এখনো ঝুঁকিতে আছে। তাদের গৃহায়ন, যাতায়াত এবং সন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। এসব হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের বড় চ্যালেঞ্জ।
এখানে বলতে চাই, বৈশ্বিকভাবে গৃহীত এসডিজির ৫ এবং ১০ নম্বর ধারায় নারী পুরুষের সমতা ও বৈষম্য বিলোপের ধারা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের অতি জরুরিভাবে নিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেনারেল ইকোনোমিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সবার জন্য যে নির্দেশনা পুস্তিকা তৈরি ও প্রকাশ করেছে তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে যথাযথ বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকা দরকার। এসডিজির ধারা-৫ বাস্তবায়নে নারীর মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মসূচি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা কিভাবে স্থায়ী করা যায়- এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে যেমন ভূমিকা রাখতে হবে, তেমনি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
দীর্ঘকাল ধরেই এ দেশের অবরোধবাসিনীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা দ্রুত নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছে, এগিয়ে দিচ্ছে দেশকে। প্রায় শতবর্ষ পূর্বে যার শুভ সূচনা করেছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। সীমাহীন বাধা-বিপত্তির দেয়াল ভেঙে তাদের যে অগ্রযাত্রা তার মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে এই দেশের নারীরা আরো এগিয়ে যাবে- এর বিকল্প কিছু গ্রহণীয় হতে পারে না। নারী জাতির জয় হোক। জয় হোক মানবতার।
মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার