4617
Published on মে 9, 2018প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখার অনেক কিছু আছে এখন। এই যে তিনি সিডনি এলেন দেখলেন জয় করলেন তার ভেতর যে বার্তা সেটি আমাদের জন্য বড় আনন্দের। এক সময় অবহেলা আর তুচ্ছতার শিকার দেশ এখন অনেক বড় আসনে। এই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাণ্ডারি শেখ হাসিনা। এবার তিনি এসেছিলেন পদক নিতে। বিশ্বজোড়া নারী নেতৃত্বের দিশারী তিনি। যে সব মানুষ সেদিন টিকেট পেয়ে পাস পেয়ে অনুষ্ঠানে যেতে পেরেছিলেন তাদের বাইরেও এক বিশাল জনগোষ্ঠী ছিল এবং আছেন যারা তাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। বরং বলব তারাই তার মূলশক্তি। আজকাল পরিবেশটা এমন সবাই কোনো না কোনোভাবে রাজনীতি এড়িবে চলতে চায়। দেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা যত পপুলার হয়েছেন দল ততই নানাভাবে বিপদে পড়ে ক্লিশ হয়েছে। এবং এ জন্য দায়ী কতিপয় নেতাদের কর্মকাণ্ড। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ ঘুষ রাহাজানি জোর জবরদস্তিহীন সমাজ চাইলেও মেলেনি। বরং এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে এরা- মানুষ ক্রমেই উন্নয়নে অভ্যস্ত হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে উঠছে। সেই জায়গায় নেত্রী একা লড়াই করছেন এবং সত্য জানা তার জন্য জরুরি।
সিডনি আর দশটা বাঙালি অধ্যুষিত বিদেশি শহরের মতো নানা বিষয়ে কলহ আনন্দ আর জীবনযাপনে ব্যস্ত। হিসাব করে দেখেছি বিগত এক দশকে আওয়ামী লীগের যতগুলো শাখা গড়ে উঠেছে আর কোনো দলের তা নেই। বিএনপি ভেতরে ভেতরে শক্তিশালী হলেও তাদের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল। শো ডাউনেও পিছিয়ে। অবশ্য এ জন্য তাদের ভ্রান্ত নেতৃত্বও দায়ী। গঠনমূলক যে কোনো কিছুর পরিবর্তে তারা নামে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড। রেগে যাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া যেমন হটতে হটতে জেলে তেমনি দলও আজ কোণঠাসা। তাদের প্রতিবাদ করার দরকার থাকলে তারা তা অন্যভাবে করতে পারত। বা এমন প্রতিবাদ আসলে এখন আর দরকারও নেই। কারণ এতে বিদেশে দেশের অপমান আর ভামূর্তি বিনষ্ট ছাড়া আর কিছু হয়নি। তারা যেভাবে মারমুখী তাদের শ্লোগান এবং আচরণ এতটাই নিম্নমানের যে রুচিবান মানুষ ভড়কে যেতে বাধ্য। যার প্রমাণ আমরা বিলেতে দেখেছি। আওয়ামী লীগের লোকাল পলিটিকস আর এখানকার নেতৃত্ব অবশ্য তাদের এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তারা থাকতে লীগের আর কোনো দুশমনের দরকার পড়ে না। শ্রুত যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও কাউকে কাউকে দলের নামে দোকান খোলার জন্য তিরষ্কার করতে ছাড়েননি।
আমরা বড় আশা নিয়ে গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভায়। আশা পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার মনে রাখার অসীম ইচ্ছা আর শক্তি আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। হতাশ করেছেন যথারীতি এখানকার নেতারা। আমরা হতাশ হয়েছি দুটো কারণে। বক্তাদের কেউ কেউ তাক লাগানো ভাষণের ফাঁকে নিজেদের কথা জাহির করলেও এ দেশে চলমান রাজনৈতিক সমস্যা ঘরে ঘরে স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব দমনের কথা বলেননি। বলেননি শেখ হাসিনা কেন এদের চোখের বালি। এবং কীভাবে এ থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আর একটা কথা, আমরা জানি সিডনিতে বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা আছেন। শুধু আছেন নয় তাদের কর্মকাণ্ড আছে। এমন মুক্তিযোদ্ধা আছেন যার সহোদররা প্রাণ দিয়েছেন যুদ্ধ করতে গিয়ে। এমন একজনের নাম জানি যিনি তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধুর বুকে আশ্রয় পেয়েছিলেন। আছেন নানা সেক্টরে কাজ করা মুক্তিযোদ্ধারা। কই কেউ তো তাদের কিছু বলতে দেয়নি। শুধু বলতে দেয়া নয়, তাদের এমন কোনো সুযোগও দেয়নি যাতে তারা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সালাম জানিয়ে, ভালোবাসা জানিয়ে নিজেদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন। এই কি তবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের দায়? এরা যুদ্ধে না গেলে যুদ্ধ না করলে এ দেশ স্বাধীন হতো? এই পতাকা এই সম্মান এই পাসপোর্ট এই আনন্দ এর যারা মূলশক্তি সেই মুক্তিযোদ্ধারাই হলেন অবহেলিত। অথচ আওয়ামী লীগই একমাত্র বড় দল যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি সে চেতনাকে লালন করে। আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করার কারণও ওই একটাই। তিনি যে ইতিহাসকে শুদ্ধ করেছেন তিনি যে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন সেটা যারা মেনে নিতে পারেনি তারাই তার বিরোধিতা করে। আর সে জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের কেউই পাত্তা পেলেন না। নিজের পাতে ঝোলটানা নেতারা সেটা মাথায়ও রাখেননি। মাথায় ছিল না যুদ্ধশিশুদের বিষয়টা। আমার জানা মতে এ দেশে বেশকিছু যুদ্ধশিশু ও শহীদ পরিবারের সন্তান আছেন। এটা তাদের প্রাপ্য ছিল। তারা যদি জাতির জনকের কন্যার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে না পারে কিসের রাজনীতি আর কিসের দল? আওয়ামী লীগই যদি তা করতে না পারে তো তারা কার কাছে যাবে?
বলাবাহুল্য পেশাজীবী লেখক-শিল্পীদের কাউকে ডাকেননি তারা। নাগরিক সংবর্ধনা কথাটার মানেই বদলে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে জানলাম নাগরিক সভার মানে তারা নাগরিকদের ডেকে নিয়ে নিজেরা কথা বলবেন বা তাদের দাপট দেখাবেন। মানুষরা গিয়েছিল শুধু শেখ হাসিনার টানে। তাদের জানা আছে তিনি না থাকলে দেশে কি হতে পারে। আজ আমরা যখন গণতন্ত্র আর উন্নয়নকে সমান্তরাল করে দেখতে চাইছি বা একটির সঙ্গে আরেকটি মিলিয়ে নিজেদের আধুনিক করতে চাইছে তখন এমন আয়োজন প্রশ্নবোধক বৈকি। জানি যারা আয়োজক তাদের যুক্তি আছে। সে যুক্তি যদি আমাদের বোঝাতে পারে তো ভালো। আর না পারলে এটাই ধরে নিতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতি দেশে যা বাইরেও তা।
অনেকে বলেন দেশের বাইরে দেশের রাজনীতির দরকার নেই। এ কথার সঙ্গে পরিপূর্ণ একমত হতে পারি না। এ কথা লেখার জোর জবরদস্তি ছিল বলে দেশের সবচেয়ে চালু দৈনিকে কলাম লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ এটাও ভাবতে হচ্ছে যে রাজনীতি মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধশিশু কিংবা দেশ মুক্ত করার সংগ্রামীদের বা শহীদদের স্মরণ করে না তার প্রয়োজন আদৌ কতটা? তবু বলি যতদিন দেশের বাইরে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র যতদিন স্বাধীনতাবিরোধীরা সক্রিয় যতদিন পাকি চক্রান্তের সহযোগীরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সক্রিয় ততদিন এর দরকার আছে। সে দরকারটায় এখন পরিবর্তনের প্রয়োজন। অন্যথায় দেশের মতো দেশের বাইরেও সাধারণ ও মেধাবী জনগণের সমর্থন ক্রমেই ফিকে হয়ে আসবে। মানুষ এত বোকা না যে কাউকে নেতা বানানো বা কারো বিরুদ্ধে কাউকে মদদ দেয়ার জন্য এ সব বিষয়ে মাথা গলাবে। তাদের সে সন্ধ্যায় যাওয়ার একমাত্র কারণ ছিলেন দেশকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়া নেত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানানো।
একটা ব্যাপার জানতে চেয়েই শেষ করব। এই যে এত দল উপদল এবং এদের পেছনে দেশের নেতারা বা লবিং সেটা কি সবার অজানা? এবার তো কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউও নাকি চোখের পানি নিয়ে বিদায় নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর ও শক্ত ভ‚মিকার কারণে তাদের কথা কাজে লাগেনি। এই যখন বাস্তবতা তখন কেন্দ্রীয় কমিটি বা দলের মূল নেতাদের কাজ কি এদের সীমানা ও কলহ সীমিত করা নয়? মেঘে মেঘে বেলা বাড়ছে। বহু কারণে দেশের ভেতর এক ধরনের অশান্তি বিরাজমান। কোটা আন্দোলনের নামে আমি রাজাকার লিখে রাস্তায় নেমে আসা তরুণ প্রমাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ এখনো কোথাও ঝুঁকির মুখে। আর প্রশান্তপাড়ে সেই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানরাই হলেন অবহেলিত। আশা একটাই এখন এখানে মর্মর মূর্তিতে জেগে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা যে শক্তির আভাস রেখে গেছেন হয়তো সেখানেই ঘুরে দাঁড়াবে আগামী দিনের কেউ।