বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতা ক্যাটাগরির তালিকায় ২৭ জনের মধ্যে তিনি আছেন ২১ নম্বরে। মুসলিমদের মধ্যে তিনি প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফোর্বস’ সাময়িকী এই তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৯ এপ্রিল। ২০১৭ সালে এই তালিকায় তিনি ছিলেন ৫৯তম অবস্থানে। সে সময় বলা হয় বিশ্বের রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ২৬ নারীর তালিকায় তাঁর অবস্থান ১৫তম। তবে শত ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান আছেন মাত্র ১১ জন। অন্যদিকে বৈশ্বিক নারী নেতৃত্বের খেতাব অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা। ২৭ এপ্রিল (২০১৮) নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে সম্মানজনক ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন তিনি। বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন এই পুরস্কার দিয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য স্ট্যাটিস্টিকস ইন্টারন্যাশনালে’র জরিপে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। জরিপে যোগ্য নেতৃত্ব, রাষ্ট্রনায়ক, মানবতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বিষয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে সর্বোচ্চ উপস্থিতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় দেওয়ার ইস্যু সামনে আসে। এই ইস্যুটি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে শেখ হাসিনা যেভাবে সফল হয়েছেন, খুব কম রাষ্ট্রনায়কই তা পারেন।
২. বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হওয়ার অন্যতম কারণ হলো উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। আর এর পিছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও শেখ হাসিনার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি। শেখ হাসিনার আমলেই আমাদের গড় আয়ু ৭১ বছর হয়েছে; মৃত্যুর হার কমেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। সাত বছর ও তার বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশই শিক্ষিত; তারা সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’-এর তালিকা অনুসারে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি শান্তিপূর্ণ। দেশ-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার অবদান আছে। এজন্যই ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৮টি আন্তর্জাতিক পদক পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিকভাবেই শেখ হাসিনা বিশ্বের তৃতীয় সত্ সরকারপ্রধান হিসেবে গণ্য হয়েছেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং-এর পরই তাঁর অবস্থান। বিশ্বের বর্তমান ১৮ জন শীর্ষ নারী জাতীয় নেতার অন্যতম হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের একটি গ্রন্থে উঠে এসেছেন। নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক ওই গ্রন্থের প্রচ্ছদে অন্য ৬ জন বিশ্ব নেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবিও ছাপা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদ রিচার্ড ও’ব্রেইন গ্রন্থটি প্রকাশ করেন।
২০১৫ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’র তথ্যানুযায়ী ‘ডিসিশন মেকারস’ ক্যাটাগরিতে ১৩ জন নেতৃস্থানীয় চিন্তাবিদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনা। ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাঁর দেশে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে জাতীয় অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে নিয়েছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
৩. কিছুদিন আগে ব্রিটিশ প্রভাবশালী সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী শাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা দুই মেয়াদসহ তিনি ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। এর মাধ্যমে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলকেও পেছনে ফেলেছেন তিনি। অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। শেখ হাসিনার বৈশ্বিক ভাবমূর্তির ঔজ্জ্বল্যের কারণে জাতিসংঘ প্রধান থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এদেশ সফর করেছেন। উপরন্তু শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সেসব দেশ ভ্রমণে।
লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক