খাল দখল করে অবৈধ বসতবাড়ি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

37704

Published on এপ্রিল 3, 2018
  • Details Image

রাজধানীর হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ী খাল পুনঃখননের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হবে ৬০৭ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা জোগান দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি সরকারি খাল দখল করে যারা অবৈধভাবে বাসাবাড়ি করেছে, তাদের বাসাবাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষ হলে এ-বিষয়ক তথ্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালের জায়গা দখল করে কেউ যদি ২০ তলা ভবনও করে থাকে, সেটি ভেঙে ফেলতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় ২০১৯ সালের মধ্যেই খাল খননের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা ওয়াসা।

গতকালের একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া ১০টি বিশেষ উদ্যোগ প্রচারে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্প। ১০ উদ্যোগের তথ্য প্রচারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৬০ কোটি টাকা। ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ অধিদপ্তর। এর আওতায় স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে পাঁচটি। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে ২১ হাজার ৯৬০টি। সংগীতানুষ্ঠান হবে প্রায় ১০ হাজার। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আউটরিচ প্রগ্রাম হবে সাড়ে চার হাজার। নারী সমাবেশ হবে দেড় হাজার। শিল্পীদের সম্মানী দেওয়া হবে এই প্রকল্পের আওতায়। কিশোর-কিশোরী ক্লাব সারা দেশে বাস্তবায়িত হবে ৫৫১ কোটি টাকায়। এর আওতায় চার হাজার ৮৮৩টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হবে। কিশোর-কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। খেলাধুলার উপকরণ কিনে দেবে সরকার। মাদক ও বাল্যবিয়ে রুখতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাল পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে মাণ্ডা খাল খনন করতে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ১৩ একর। বাইশটেকী ও সাংবাদিক কলোনি খাল খননে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া হাজারীবাগ খালে চার একর, কুর্মিটোলা খালে পাঁচ একর, বেগুনবাড়ী খালে দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অবশ্য এই ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধদের উচ্ছেদ করা নিয়ে নিজের সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, কাজটি করতে পারলে ভালো। তবে করাটা বেশ চ্যালেঞ্জ হবে।

ঢাকা ওয়াসার দেওয়া তথ্য মতে, রাজধানীর ৪৬টি খালের মধ্যে ওয়াসার নথিতে ২০টি বিলীন ও ২৬টির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ আছে। ২৬টি খালও বাস্তবে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। সেখান থেকে পাঁচটি খাল উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা খাল খনন ও পাড় উন্নয়ন করা হবে। দুই হাজার ২০০ ডিমারকেশন পিলার দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রেখেছে সরকার। প্রকল্পটি নেওয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে ওয়াসা জানিয়েছে, বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির সময় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রেখে জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত মাণ্ডা, সবুজবাগ ও বাসাবো এলাকা এবং উত্তরের অধিভুক্ত মিরপুর, পল্লবী, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকা।

ওয়াসা সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সোয়া এক কিলোমিটার বাইশটেকি খালটি ৪০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। এ ছাড়া ১৮০ মিটারের সাংবাদিক কলোনির খালটি ৩০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে খোদ ওয়াসা। কারণ নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু খাল বর্তমানে নগরবাসীর ব্যক্তিগত জমির মাধ্যমে ব্যবহূত হচ্ছে। যেখানে ওয়াসার কোনো আইনগত কর্তৃত্ব নেই। এতে করে জমির মালিকরা যেকোনো সময় তাদের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নগরীর সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা ঢাকা ওয়াসার। অবশ্য একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, এই পাঁচটি খাল খনন ও উদ্ধার করতে পারলে ঢাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে আসবে।

একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সভায় তিন হাজার ৪১৫ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরো টাকাই আসবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। গতকাল অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন, জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ, আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি পুরাতন এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে (বিআইএম) শক্তিশালীকরণ প্রকল্প; বরগুনা জেলার উপকূলীয় পোল্ডারসমূহে সেচকাজের জন্য খাল পুনঃখনন এবং এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ প্রকল্প।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত