4963
Published on মার্চ 5, 2018বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিন দিন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা। আর এই এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে দেশের অন্যান্য খাতের মতো কৃষির অবদানও অনেক। কৃষিতে বিপ্লব নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে। আর এই বিপ্লবের পেছনে কৃষি-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সাধারণ কৃষক যেমন জড়িত, তেমনি প্রযুক্তির অবদান রয়েছে ব্যাপক। কৃষি খাতে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে নতুন এক সম্ভাবনা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। মুঠোফোন, কম্পিউটার ও নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ব্যাপক ভূমিকা রাখছে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৮৪ শতাংশ কৃষক মুঠোফোন ব্যবহার করেন। তাদের অধিকাংশই এখন কৃষিতথ্য পেতে সহায়তা নিচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তির। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের সুপ্রসারিত কৃষিনীতিতে রয়েছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্যিক কৃষি উন্নয়ন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়নসহ কৃষির আধুনিকীকরণ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ। অন্যদিকে কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।
বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে চার দফায় সারের দাম কমানো হয়। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সুবিধা পাচ্ছে কৃষক। সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মধ্যে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল ফলত। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই এসেছে এ সাফল্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ১৫ হাজার মাঠকর্মী দিয়ে গড়ে তুলেছে নেটওয়ার্ক। এসব কর্মী তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা দিচ্ছে কৃষকদের। অন্যদিকে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি এ দেশের ফলন অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কম জমিতে বেশি উৎপাদনের সুফল পাচ্ছে দেশের কৃষক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) আরও ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কৃষি খাতে প্রযুক্তি ও আইসিটির প্রভাব দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করছে। এতে কম সময়ে, কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে দেশের প্রতি হেক্টর জমিতে ধানের গড় ফলন ছিল এক টন। উফশীর ব্যবহারে তা চার টনে পৌঁছবে। আর পুরো জমিতে হাইব্রিড ব্যবহার হলে তা যাবে ছয় টনে। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সিফোরের ব্যবহারে তা আট টন ছাড়িয়ে যাবে। এভাবে শত শত প্রযুক্তি দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করেছে।
সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রকাশঃ ৩ মার্চ ২০১৮