7034
Published on মার্চ 3, 2018রাজশাহীতে নতুন দুয়ার খুলছে কর্মসংস্থানের। প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিলিকন সিটির অপেক্ষায় এখন রাজশাহীর তারুণ্য। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বিশাল কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে হাজারো প্রযুক্তিনির্ভর তারুণ্যের স্বপ্নের দুয়ার। এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের। শিক্ষানগরী রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিলিকন সিটি। তাই এখন থেকেই স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর তারুণ্য। রাজশাহীতে এ সিলিকন সিটির নির্মাণ কাজের মধ্য দিয়ে নতুন স্বপ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। শুধু এ সিলিকন সিটির মাধ্যমে বদলে যেতে পারে বড় ধরনের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী আখেরুজ্জামান বলেন, ‘রাজশাহীতে সিলিকন সিটি শুরু হলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য আর দৌড়াতে হবে না। এটি আমাদের জন্য সুখবর। রাজশাহীর জন্য সুখবর। দেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।’ রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারাজানা করিম বলেন, ‘সিলিকন সিটি আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। রাজশাহীতে আরও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা দূর হবে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল ওয়াদুদ জানান, সিলিকন সিটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকাও চাঙা হবে। বিপুল সংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। বাড়বে এ খাতে কর্মসংস্থান। ফলে কর্মের জন্য রাজধানীমুখী মানুষের সংখ্যাও কমে আসবে। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান বলেন, সিলিকন সিটি রাজশাহীর জন্য অনেক বড় স্বপ্ন। এটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে। বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগে বদলে যাবে রাজশাহীর চেহারা। তারুণ্যে প্রাণ পাবে সেইসঙ্গে সহজে মিলবে কর্মসংস্থানের অপার সুযোগ। তিনি বলেন, এ সিলিকন সিটির মাধ্যমে রাজশাহীতো বটেই বাংলাদেশকে নতুন করে চিনবে পুরো বিশ্ব। রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক সিলিকন সিটির নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। এই সিলিকন সিটির কাজ শেষ হলে ১৪ হাজার তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান হবে। যা রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে।’ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সিলিকন সিটি রাজশাহীর স্বপ্ন। এটি এখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। তিনিই প্রথম এখানে তারুণ্যের কর্মসংস্থানের জন্য এ সিলিকন সিটির পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টায় এ স্বপ্ন এখন রাজশাহীর দুয়ারে কড়া নাড়ছে। লিটন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে এই সিলিকন সিটি নির্মিত হতে যাচ্ছে রাজশাহীতে। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো এবং সান হোসে শহরের মাঝামাঝিতে ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা সিলিকন ভ্যালি ইন্টারনেট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সেটির আদলে গড়ে উঠতে যাওয়া রাজশাহীর এই সিলিকন সিটিতেও তৈরি হবে বিশ্বমানের প্রযুক্তি পণ্য।
এদিকে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত এ সিলিকন সিটির নির্মাণ কাজের প্রাথমিক পর্ব। গেট ও সীমানা প্রাচীরের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির অবকাঠামো নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে গত বছর। গত বছরের ১৮ জুলাই বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি। এর আগে রাজশাহী নগরীর নবীনগর মৌজায় হড়গ্রাম বাজারের পাশে চলতিগত বছরের ১৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ শেষে এখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ২০২১ সাল নাগাদ রাজশাহীকে সারা বিশ্বই চিনবে এই হাই-টেক পার্কের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, রাজশাহীর মানুষ শুধু শ্রমনির্ভর থাকবে না। ভারতের ব্যাংগালোর, আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো ও ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন সিটির মতো বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি হবে। শুধু মেধার বিকাশ ঘটিয়ে রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানান, বিওবির অর্থায়নে সিলিকন সিটিতে ১০ তলা বিশিষ্ট একটি এমটিবি ভবন নির্মাণ করা হবে। এমটিবি ছাড়াও ৬২ হাজার বর্গফুট আয়তনের পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি আইটি ইনকুবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। যা রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে। সিলিকন সিটিতে প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান-দুটোই দেওয়া হবে। প্রথমে প্রশিক্ষণ ও পরে কাজ দেওয়া হবে আগ্রহীদের। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সিলিকন সিটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৩২ একর জমির ওপর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।