বিএনপির ‘ডু অর ডাই’ জঙ্গী কৌশলঃ জাফর ওয়াজেদ

11300

Published on ফেব্রুয়ারি 6, 2018
  • Details Image

বিএনপি নামক ক্রমশ লুপ্ত হয়ে আসা দলটির এমনই করুণ অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, কোন বিষয়ে আর জনগণের দরবারে হাজির হতে পারছে না। দলপ্রধান তো বলেছেনই, প্রশাসন, পুলিশ সশস্ত্রবাহিনী তার সঙ্গে আছেন। কিন্তু জনগণ আছেন কিনা সে কথা বলতে পারেননি। জনগণ নেই বলেই তাকে বিদেশীদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে বার বার। যেন বিদেশীরাই তাকে ও তার দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এমনিতেই সামান্য কিছু হলেই বিদেশীদের কাছে দৌড়ে যান। অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। আর অনুনয়বিনয় করে এমনসব ভাষ্য তুলে ধরেন- যা মিথ্যাচারকেও ছাড়িয়ে যায়। দেশের সব বিষয়ে বিদেশীদের কাছে তুলে ধরার মধ্য দিয়েই সম্ভবত তিনি শান্তি ও স্বস্তি খুঁজে পান। তৃপ্তিতে নিমগ্ন হন। অথচ তার মহাসচিব বলে বেড়ান, দলীয় নেত্রী হচ্ছেন এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু গভীর অনুধ্যানে স্পষ্ট হয় তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিদেশীদের কাছে তুলে দিতে সক্রিয় সব সময়। এই যে ক’দিন আগে বিদেশী কূটনীতিকদের ডেকে এনে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে সরকার ও আদালত সম্পর্কে একরাশ নেতিবাচক কথা বলে অনুকম্পা চেয়ে বসলেন, তা কি সার্বভৌমত্বের প্রতীকের পক্ষে মানায়। এসব দেখে শুনে রেলওয়ের এক সাবেক কর্মকর্তা খায়রুল বাশার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘লজ্জা শরম বলতে আর কিছুই রইলো না।’ স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে খারাপ লাগারই কথা। কিন্তু বিএনপি নেত্রী ও নেতাদের কাছে দেশ এবং জনগণ অতি তুচ্ছ। গুরুত্ব হচ্ছে ক্ষমতা। আর তা দখল করা হলে অবাধ লুটপাট, দুর্নীতি আর জনগণসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ চালানো সহজতর হয়। অতীতে যেসব অপকর্ম চালিয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যেতে পারেন অনায়াসে। বিদেশীদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং গোপনীয় বিষয় তুলে ধরা বিএনপির কাছে নতুন কোন বিষয় নয়। এটা তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে আসছেন; শ্বেত চামড়া পেলে তো কথাই নেই গদগদ ভঙ্গিতে নতজানু হতে থাকেন তখন। এটাই বিএনপির বৈশিষ্ট্য।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেনদরবার করে হোটেলে সাক্ষাতকালে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে লিখিত ফর্দ তুলে ধরেছিলেন বিএনপি নেত্রী। অভিযোগনামা পেশ করে তিনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন হয়ত। কিন্তু ফলাফল শূন্য। অপর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চর্চাটা ভারতের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবহার সঙ্গে যায় না। আর তাই এই ফর্দ স্রেফ ফর্দই থেকে গেছে। বিদেশীদের দ্বারস্থ হওয়া বিএনপির আদি অকৃত্রিম অভ্যাস এবং চর্চা। অতীতের ভূরি ভূরি আরও উদারহণ টানা যায়। কিন্তু এবার তারা ধরনা দিলেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত দলীয় প্রধানের মামলার বিষয়ে কোন সুবিধা বা মামলা থেকে রেহাই পেতে। যেন আদালত বিদেশীদের নিয়ন্ত্রণে, তাদের কথায় আদালত যে চলে না, তা নিশ্চয় উনাদের বোধ্যগম্য হওয়ার কথা। কিন্তু তারপরও যদি বিদেশীরা সার্টিফিকেট দেয় যে, তিনি দুর্নীতিবাজ নন। ‘ক্লিন ইমেজ’ ধারণ করেন। তাহলে উল্লম্ফন শুরু করা যায় দেশজুড়ে। বিদেশীদের সাহায্য তিনি চাইতেই পারেন। দেশের উন্নয়নে তারা যেন সহযোগিতার হাত বাড়ান। কিন্তু দুর্নীতির মামলার রায়ে যেন শাস্তি না হয় সেজন্য কূটনীতিকরা সরকার ও আদালতের ওপর যাতে চাপ প্রয়োগ করে, এ রকম গোলমেলে স্বপ্ন তিনিই দেখতে পারেন, যিনি দুর্নীতিটি করার আগে ও পরে কী হতে পারে, তা নিয়ে মোটেই ভাবিত ছিলেন না, এখনও নয়। তাদের এহেন আচরণ দেখে কাঁদব না হাসব বোঝা খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। দশ বছর আগে বিএনপির সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দুটি দায়ের করেছিলেন। এই দশ বছর ধরে মামলা চলছিল; এখন রায়ের অপেক্ষা। এই দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি চলে আসছে, কিন্তু বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সে নিয়ে কোন তৎপরতা দেখাননি। বরং প্রায়শই সময় বাড়িয়ে কালক্ষেপণের সংস্কৃতি চালু করেছিলেন স্বয়ং দলনেত্রী, এই দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি প্রমাণ করতে পারেনি যে- তারা দুর্নীতি করতে পারেনি। বিদেশীরাও জানে মাতা-পুত্রের দুর্নীতির বিস্তর কাহিনী। এখন এসে কূটনীতিকদের বলছেন। মামলা পুরোটাই সাজানো। বিএনপি নেত্রীকে হয়রানি করতে এই মামলা করা হয়েছে। সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে এই মামলা সাজিয়ে বিচারকাজ চালাচ্ছে। মিথ্যাচারের এই আরেক নমুনা। মামলা করেছেন খালেদা সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অথচ তিনি দায়-দায়িত্ব ঘাড়ে চাপাচ্ছেন বর্তমান সরকারের। কূটনীতিকরা তো আর বিএনপির সমর্থক নন যে, তারা এই মিথ্যার বালিয়াড়িতে পা রাখবেন। মামলার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। এখানে কূটনীতিকদের কী করণীয় থাকতে পারে। তা হয়ত জানে বিএনপি নেত্রী নেতারা। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় কি পালটে দিতে পারবেন কূটনীতিকরা এটা তাদের কাজও নয়। বেগম জিয়াকে যাতে শাস্তি প্রদান না করা হয় এবং তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সেজন্য জনগণের নয়, সাহায্য চাওয়া হয়েছে কূটনীতিকদের কাছে। জনগণের কাছে যাওয়ার সাহস ও শক্তিমত্তা বেগম জিয়া হারিয়েছেন অনেক আগেই। তাই বিদেশী সহায়তাই তার মুখ্য চাওয়া এখন। বেগম জিয়া সেই নব্বই দশক থেকে চেঁচিয়ে আসছেন তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চান। আর আওয়ামী লীগ ‘দেশ বিক্রি’ করে দিচ্ছে বলে ‘অলীক’ তথ্য প্রচারেও পিছপা ছিলেন না। সেই তিনি যখন দুর্নীতির মামলা ঠেকাতে বিদেশীদের সাহায্য চান, তখন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কী রক্ষা পায়। কূটনীতিকরা এই অসহায় আর্তনাদ শুধু শুনে গেছেন, সাহায্য-সহযোগিতার প্রশ্নে কিছুই বলেননি। দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতাচ্যুত বহু রাষ্ট্রনায়কের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজাও। কিন্তু সেসব দেশের কারও কেউই বিদেশী হস্তক্ষেপ দাবি করেননি তাদের রক্ষা করার জন্য। বেগম জিয়া ও তার পুত্ররা যে ক্ষমতায় থাকাকালে দুহাতে দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে, এটা সার্বজনবিদিত। শুধু তারা দুজন নয়, দলের আরও বহু নেতা এই কাজে নিবেদিত ছিল। তা জানেন বিদেশী কূটনীতিকরাও। ত্রিশটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠককালে বিএনপি নেতারা যে লিখিত প্রতিবেদন পেশ করেন, তাতে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়ারই নামান্তর। শতাধিক বিদেশী কূটনীতিক ও দাতা সংস্থা প্রধানদের অমান্ত্রণ জানালেও হাজির হয়েছেন মাত্র ত্রিশটি দেশের কূটনীতিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে অংশ নেয়নি। এভাবে বিদেশীদের কাছে ধরনা দেয়ার অভ্যাস পরিবর্তন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব, কারণ তারা গণবিচ্ছিন্ন। গণমানুষের রায় নিতে তাদের আগ্রহ কম। বরং বিদেশী সহায়তার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সক্ষমতায় যাওয়ার পথটি খুঁজে বেড়ানোই তাদের একমাত্র অবলম্বন। বিষয়টি সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘বিদেশী কূটনীতিকরা এবার কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে হয়ে সরকারের ওপর চাপ দেবেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যায় কোন আবদার পূরণে বিদেশী কূটনীতিকরা এবং রাষ্ট্রগুলো অতীতের মতো এবার আর সময় নষ্ট করবে না। এর আগে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন দেশের এক ধরনের তৎপরতা দেখা গেছে। কোন দলের ওপর ভিত্তি করে কোন দেশ চাপ প্রয়োগ করবে না।’ সুতরাং স্পষ্ট হয় যে, বিএনপির এই ধর্নার বিপরীতে কিছুই মিলবে না একমাত্র পাকিস্তানের কাছ থেকে ছাড়া। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তাদের মতো করে বিশ্লেষণ করা প্রতিবেদন বিদেশীদের কাছে পেশ করে নিজেদের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করেছে বিএনপি। এমনকি নিজেদের অক্ষমতা, অযোগ্যতা, অথর্বতা এবং দল নেতারা যে অকর্মার ধাড়ি ও সন্ত্রাসীধারায় আসক্ত, তার প্রমাণ দিয়েছে। বিএনপিতে নেতা বলে কিছু নেই আর। যাদের নেতা বলা হয়। তারা মূলত কেউ খালেদার, কেউ তারেকের বশংবদ। তাদের মর্জিমাফিক চলাই তাদের ধর্ম। নিজস্ব সত্তা বলে কিছুই নেই। যে কারণে খালেদা-তারেক বলে দিয়েছে, নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষা না করেই মামলার রায়ের পর দেশজুড়ে যে যার অবস্থান থেকে নাশকতা নামক আন্দোলন চালিয়ে যেতে। দেশজুড়ে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটিয়ে জঙ্গীদের নেত্রীতে পরিণত বেগম জিয়া দলের বর্ধিত সভায় পরিষ্কারভাবে বলেছেন, তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোন লাভ নেই। কোন ভয়ভীতি তাকে দমাতে পারেনি, পারবেও না। বিএনপির কোন ভয় নেই। এটা তো পরিষ্কার যে, তারা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ লালনপালন শুধু নয়, ব্যবহারও করে আসছে এবং তা সাহসের সঙ্গে করে আসছে। যেভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সর্বশেষ হোলি আর্টিজান ঘটাতে সাহস দেখিয়েছেন। বাংলা ভাই নামক জঙ্গীর উত্থান ঘটিয়েছিল বিএনপি নামক বিদেশী খেতাবপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠনটি। ক্ষমতায় থাকাকালে জঙ্গীবাদী তৎপরতা বাড়াতে বেগম জিয়া দলের নেতা, মন্ত্রী, এমপি, গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন। নেপথ্যে পৃষ্ঠপোষক পেয়েছেন প্রভুর মর্যাদাপুষ্ট পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর। যারা ১৯৯১ ও ২০০১ সালের মতো এবারও নির্বাচনী ব্যয় শুধু নয়, সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে অর্থ সহায়তাও দিয়ে আসছে। বেগম জিয়া দাবি করেছেন, বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনী আছে। ক্ষমতায় থাকাকালে প্রশাসনের বিএনপির সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে অযোগ্য অথর্বদেরও প্রশাসনে ঠাঁই দিয়েছেন। তারা ‘জাতীয়তাবাদী পুলিশ দল’ গঠিত করেছেন ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। ছাত্র ও যুবদলের ক্যাডারদের তিনি প্রশাসনে বসিয়ে দিয়ে গেছেন। দলীয়করণের চূড়ান্ত নিদর্শন রেখে গিয়েছেন বলে জোরালোভাবে দাবি করতে পারছেন এরা সব তার সঙ্গে। সেনাবাহিনীকে নিয়ে প্রায়শই তার যেসব বক্তব্য প্রচারিত হয়, তা রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণ হলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন বিএনপি বান্ধব সরকার, এসব বিষয় নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বেগম জিয়া এমনটাও বলেছেন, দেশের বাইরে যারা আছেন, তারাও আছেন তার সঙ্গে। পলাতক পুত্র এবং তার মাফিয়া ডন বন্ধু দাউদ ইব্রাহীম, লস্কর-ই-তৈয়বা, তালেবান, আল-কায়েদা ইত্যকার জঙ্গীরা তার সঙ্গেই আছে। থাকবেও। যে কারণে বিএনপির কোন ভয় নেই। ভয়টা আওয়ামী লীগের, অবশ্যই ভয় আওয়ামী লীগের। কারণ এখনই বিএনপি নামক দলটি জঙ্গীবাদী শক্তি এমনই অর্জন করেছে যে, ক্ষমতায় এলে তারা দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সব নিদর্শন মুছে ফেলবেন। প্রয়োজনে একসঙ্গে ৬৪টি জেলায় বোমা হামলা চালাবে অতীতের মতো। এবার তো পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে জঙ্গী কায়দায় দু’জন কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাদের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। বিএনপি সমর্থক নামধারী সন্ত্রাসীরা মারমুখী আচরণ অব্যাহত রেখেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে বেগম জিয়ার সাজা হতে পারে এমন আশঙ্কায় সারা দেশে অস্থিরতা ছড়াতে চাচ্ছে বিএনপি। আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে আইনি পথ অবলম্বন না করে আদালতের প্রতি হুমকি প্রদর্শনে রায় বদলে যাবে, এমনটা নয়। আইন তার নিজস্ব পথে চলবেÑ এমনটা মানে না খালেদা ও তার পলাতক পুত্র। দুর্নীতিবাজ পুত্রটি পলাতক স্থান বিলাত থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে আসছে। মায়ের মামলাকে কেন্দ্র করে পুত্রের ষড়যন্ত্রের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে মাতাকে আহত করতেও পিছপা হবে না এই লুটেরা পুত্র। তারই নির্দেশে সেদিন প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই ও পুলিশকে মারধর করেছে। রিজভী দাবি করেছে, দলীয় কর্মীরা আসামি ছিনিয়ে এনেছে এবং ক্ষমতা একইভাবে ছিনিয়ে আনবে। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাস বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর। তবে মহাসচিব ফখরুল তার দলের কর্মীদের চেনেন না। বলেছেন তিনি বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী দলের যে সদস্য, তাকে ঢাকতে চাইছেন তিনি। আদালত কি রায় দেবে তা বিএনপি আগেই বলে দিয়েছে। তারা আদালতকে পরোক্ষভাবে হুমকি দিচ্ছিল অতীতের মতোই। নেতারা বলেছেন, রায় যদি বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যায় তা হলে সারাদেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে। তারা আবার জ্বালাও পোড়াও সহিংসতা ও নাশকতার পুনরায় আমদানি করবেন। যারা আদালত, জনগণকে হুমকি দিতে পারেন, তারা সবই পারেন। তাদের হাতে গণতন্ত্র, বিচারব্যবস্থা, শাসন কাজ কোনটাই নিরাপদ নয়। মামলায় শাস্তির আশঙ্কা থেকে গোপনে দলটির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুরনো গঠনতন্ত্রের দুর্নীতি সংক্রান্ত ধারা ৭-এর সব উপধারা বিলুপ্ত করে নতুন করে গণতন্ত্র তৈরি করেছে দলটি। বিএনপি তার স্বরূপ উন্মোচন করেছে দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাতিল করার মধ্য দিয়ে। আর এর মধ্য দিয়ে স্বীকার করে নেয়া হলো দুর্নীতিবাজদের জন্য দলটির দরোজা সব সময় খোলা। দাগী আসামিরাও দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে- বেগম জিয়ার বর্ধিত সভার ভাষণে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। যারা সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছিল, তাদের ভাল ভাল জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। এই আন্দোলন সংগ্রাম মানে নাশকতা ও নৃশংসতাকে বুঝায়।

ঢাকার একটি বর্ষীয়ান দৈনিক শিরোনাম করেছে, “৮ ফেব্রুয়ারি : বিএনপির ‘ডু অর ডাই’ কৌশল।” বিস্মিত বা অবাক হবার কথা নয় জনগণের, তাদের পরিকল্পনায়। কারণ তাদের প্রেরণায়, তাদের পক্ষে এই কাজটাই চলে আসছে এ দেশে তাদের ক্ষমতাকাল থেকে হোলি আর্টিজান হামলা পর্যন্ত। বাংলা ভাই, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ এই সবই খালেদার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠে দেশে। জঙ্গীরাও ‘হয় মারো, নয় মরো’ আদর্শে অনুপ্রাণিত। আত্মঘাতী জঙ্গীদের ধারাবাহিকতা ভিন্ন কৌশলে অব্যাহত রাখার এটিও একটি প্রচেষ্টা কি-না। জঙ্গীরাও তো ‘ডু আর ডাই’ কৌশল অবলম্বন করে আসছে। বিএনপি এবার তাদের আবারও ব্যবহার করতে চায়। বিএনপি নেতারা খালেদার কিছু হলে নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন করবে। বেগম জিয়া ঢাকা শহরসহ সারাদেশকে অচল করার জন্য জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদকে আবার উসকে দিচ্ছেন। যেভাবে ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতকে ঢাকায় এনে তাদের পাশে দলীয় নেতা-কর্মীদের দাঁড়িয়ে নাশকতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, এবার সেই পথই খুঁজছেন। জনগণবিমুখ হয়ে তিনি অরাজক অবস্থার দিকে ধাবিত হতেই পারেন। কিন্তু দেশবাসী তার এসব ঘৃণ্য আচরণের বিপরীতেই দাঁড়াবে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকন্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত