7106
Published on জানুয়ারি 24, 2018নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে চলছে নানান ধরনের প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতার মধ্যে আছে হিংসা, বিদ্বেষ, দলীয় মনোনয়ন পাবার জন্য একাধিক প্রার্থীদের তৎপরতা তৈরি করছে কোন্দল। শুধু তাই নয়, হানাহানির দিকেও নিয়ে যেতে চাইছে পরিবেশ, পরিস্থিতিকে। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এক্ষেত্রে প্রকট হয়ে উঠছে। কে মনোনয়ন পাবে, কে পাবে না, তা আগাম নির্ধারণ করার মতো কৌশল ও প্রক্রিয়া দলগুলোর নেই। আর তা না থাকার কারণে নির্বাচনের আগে মনোনয়ন না পাওয়ারা দলবদলেও পিছপা হয় না। দলের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ না থাকার দিকটি হয়ে ওঠে প্রকট। এমন অনেক নির্বাচনী এলাকা রয়েছে, যেখানে দলগুলোর একাধিক প্রার্থী রয়েছে। জনগণের কাছে এদের কারও কারও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, অনেকের নেই। যাদের নেই, তাদের আছে অর্থ, বিত্ত, প্রতিপত্তি। আর তারই জোরে দলের মনোনয়ন পাবার জন্য হয়ে ওঠে মরিয়া। অর্থের বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন পাবার ঘটনা অতীতে বহু ঘটেছে। সেসব নিয়ে মারামারি, হানাহানি, এমনকি খুনখারাবিও হয়েছে। প্রার্থীদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে একেকটি গোষ্ঠী। হয়ে ওঠে যারা প্রতিপক্ষ নিজ দলেরই অনুসারীদের। এ চিত্র এদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় অনেকদিনের। এই অর্গল ভাঙার কাজটি হয় না। প্রার্থী বাছাই নিয়ে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দ্বন্দ্ব যেমন বাড়ে, তেমনি দলের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় ক্ষতের। দলীয় নীতি, আদর্শের তখন হয় জলাঞ্জলি। জনগণের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি থেকে যায় উপেক্ষিত। দর্পণে যদি দেখতে পেত নিজের মুখ, তাহলে অনেকেই প্রার্থী হতে মরিয়া হয়ে উঠতো না। রাজনৈতিক দলগুলো পূর্বাহ্নে প্রার্থিতা নির্ধারণ করে না। শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থী বাছাই করার কারণে নানা গোলযোগ তৈরি হয়। যা নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব অব্যবস্থা দূর করে একটি সঠিক ব্যবস্থা তৈরির কাজটি নিয়ে কোন দলই আসে না এগিয়ে।
চলতি বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়ে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আগামী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। তাই আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে যে কোনদিন নির্বাচনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য বলেছে, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে না। ১৪ দলীয় জোট এই পদ্ধতিতে ভোট চাইলেও বিএনপি তাতে আপত্তি জানিয়েছে। পাশাপাশি ছিটমহল, নদী ভাঙন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ৬০/৭০টি আসনে সীমানা পুনরায় নির্ধারণ করতে হতে পারে। সেই ১৯৭০ সালে সাড়ে সাত কোটি জনগণের দেশে আসন সংখ্যা ছিল তিনশ’। এটা অবশ্য কেন্দ্রীয়। প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল আরও বেশি। স্বাধীনতার পর আসন সংখ্যা তিনশ’তেই রয়েছে। যদিও দেশে জনসংখ্যা এখন ষোল কোটির বেশি। সে সুবাদে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে। আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিতে রাজনৈতিক দল যেমন, তেমনি জনগণ এখনও দাবি উত্থাপন করেনি। আসন সংখ্যা বাড়লে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেত কি না তা স্পষ্ট নয়। তবে রেষারেষি হয়তো কমে আসতো। ভবিষ্যতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি হয়তো সামনে আসতে পারে। বাংলাদেশে নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন একটি বড় সমস্যা ছিল ভুয়া ভোটার। বিএনপি ২০০৬ সালে প্রায় এক কোটি ভুয়া ভোটার বানিয়েছিল, যাদের দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী অনায়াসে পাড়ি দেবার সব কৌশলই সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু তা ভেস্তে যায়, ইয়াজউদ্দিন নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়। তদন্ত করে এই বিপুল পরিমাণ ভুয়া ভোটারের সন্ধান পায়। পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরু হয়। সে সময় ভোটারদের জন্য পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড প্রবর্তন করা হয়। ফলে ভুয়া ভোটার নামক শব্দটিই মুছে যায় নির্বাচনের সংস্কৃতি থেকে। রাজনীতিতে এ বিষয়টি নিয়ে আর সরগরম হয়ে ওঠে না কোন পক্ষ। ভুয়া ভোটার না থাকায় জাল ভোটের প্রবণতাও বিলুপ্তির পথে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোথাও কোথাও দেখা গেছে, ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার প্রবণতা। তবে অবশ্য এ অবস্থা ক্রমে কমে আসছে। জাতীয় নির্বাচনে এর সম্ভাবনা তেমন নেই। নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা, আতঙ্ক রয়ে যায় প্রচারণার ক্ষেত্রে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধেও পরিণত হয়। আঞ্চলিকতা অনেক সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলাদেশে নির্বাচনী ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হবার সম্ভাবনা আর নেই। বরং উৎসবপূর্ণ অবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও দাঙ্গাহাঙ্গামুক্ত নির্বাচনের উদাহরণ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অবশ্য একটি মাত্র অঞ্চলে নির্বাচন হবার কারণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন ছিল, তেমনি ভোটাররাও ছিলেন সতর্ক ও সচেতন। তারা অনৈতিক বিষয়গুলো পরিহার করায় ছিলেন সচেষ্ট। কিন্তু একই দিনে তিনশ’ আসনে নির্বাচনকালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়তো সম্ভব হবে না। ব্রিটেন ও ভারতসহ অন্যান্য দেশে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাকে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে বিবেচিত হয়। এ সরকার কেবল রুটিনওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত তারা নেয় না। প্রশাসন থাকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মূলত নির্বাচন কমিশনই হয়ে ওঠে নির্বাচন পরিচালনার সর্বশক্তিমান প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনিক রদবদল করার ক্ষমতাও তাদের হাতে থাকে।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে গোঁ ধরে আছে বিএনপি। তাদের ইচ্ছে ও পছন্দমাফিক সরকার থাকতে হবে, যারা নির্বাচন পরিচালনা শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তারা এই সরকারকে কখনও তত্ত্বাবধায়ক, কখনও সহায়ক সরকার হিসেবে বলে আসছে। কিন্তু সেই সরকারের কোন রূপরেখা তারা অদ্যাবধি দিতে পারেনি। সংবিধানবিরোধী এ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা না হলে, তারা নির্বাচন বর্জনের হুমকিও দিয়ে আসছে। যেমন ২০১৪ সালে তারা অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকার পর নির্বাচন বর্জন শুধু নয়, তা প্রতিহত করার জন্য সহিংস পথ বেছে নিয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি সু®স্পষ্ট কোন কথা বলছে না। তারা কী চায়, সেটাও পরিষ্কারভাবে বলতে পারছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে রূপরেখা চাইলে তারা তা দিতে পারছে না। বরং দিচ্ছি, দেব বলে টালবাহানা করছে। তত্ত্বাবধায়ক, নিরপেক্ষ সহায়ক, অন্তর্বর্তী বা নির্বাচনকালীন সরকারের কোনটা তারা চায়, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। তাই ওবায়দুল কাদের বলেছেন নির্দিষ্ট করে না বলে বারে বারে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে পারছে না তারা। অবশ্য প্রশ্ন ওঠে, সংবিধান বহির্ভূত সরকার ব্যবস্থা জাতি কেন মেনে নেবে। অতীতে সামরিক জান্তা সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার প্রেক্ষাপটে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি সামনে এসেছিল। এই দাবিতে তিন জোট যুগোপৎ আন্দোলন করেছে। এরপর চারটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। ২০০১ সালে লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপিকে জেতানোর জন্য নানা ধরনের ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ নিয়ে এ ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছিল। এমন কি সে সময়ের নির্বাচন কমিশনও পক্ষপাতদুষ্টে আক্রান্ত ছিল। ভোট ‘রিগিং’ করার খেলা জনগণ সে সময় দেখেছে। এরপর ইয়াজউদ্দিনের নানা রকম ছলচাতুরীর আশ্রয় নেবার পর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা তিন মাসের স্থলে সংবিধান বহির্ভূতভাবে টানা দুই বছর ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নানারকম অরাজক অবস্থা তৈরি করেছিল। সেসব কাহিনী জানা জনগণের। এসব কারণে জনগণ এ ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলা যায়। আদালতও এ ব্যবস্থা সম্পর্কে নেতিবচাক রায় প্রদান করেছে। জনমত তত্ত্বাবধায়ক বিরোধী হবার কারণে সংবিধান থেকে তা বাতিল করতে হয়েছে। তারপরও বিএনপি এ ব্যবস্থা চালু করতে চায়। যাতে লতিফুর ও ইয়াজউদ্দিন মার্কা সরকার চালু করে ক্ষমতায় যাবার বৈতরণী পাড়ি দিতে পারে। এখানে ভোট বা জনগণ তাদের কাছে প্রধান বিষয় নয়। যেহেতু জনগণ চায় না, তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিহার করে সহায়ক শব্দটিকে সামনে এনেছে। বিএনপি নিজেরাই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছে। তারা সহায়ক সরকার চায় নাকি অন্তর্বর্তীকালীন চায়, তা-ও পরিষ্কার করতে পারছে না। পারার কথাও নয়। কারণ তারা সেই পথ নিজেরাই পদদলিত করেছে ২০১৪ সালে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীকে ফোন করেছিলেন, আলোচনার জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। এমনকি এমন প্রস্তাবও রেখেছিলেন যে, নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির প্রতিনিধিও থাকবে। এমনকি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বরাদ্দের কথাও বলেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রী তার স্বভাবসুলভ একগুঁয়েমির কারণে আলোচনা করতে রাজি যেমন হননি, তেমনি সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থাকেও নাকচ করে দিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করতে সন্ত্রাসের আশ্রয় নেন। আর সেই সন্ত্রাস চালাতে গিয়ে উস্কে দেন জঙ্গীবাদকেও। তারপর পেট্রোলবোমায় জীবন্ত মানুষ হত্যাসহ সহিংসতা, নাশকতার ব্যাপক বিস্তার ঘটান। এর পরিণামে স্বাভাবিক রাজনীতির ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছেন। হতাশার বালুচরে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় এখন আর ওঠে দাঁড়াতে পারছেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেখা ভাষণে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। এ নিয়ে কারো মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না থাকলেও বিএনপি যেহেতু ‘বিচার মানি, তালগাছটা আমার’ নীতিতে অটল, সেখানে এ সরকার সম্পর্কও নেতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সংসদ নির্বাচন করেছেন। সে নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। কিন্তু তিনি পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণ করে সরকারও গঠন করেছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের মুখে ও জনগণের চাপে তিনি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু পদত্যাগ করার পরও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে নেপথ্য থেকে পরিচালিত করতে গিয়ে স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধাযক সরকার প্রধান করেন। কিন্তু জনগণের ক্ষোভের মুখে সেই অবস্থান থেকেও সরে আসতে বাধ্য হন। তারপর শুরু হয় তিন উদ্দিনের সরকার ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থায় খালেদা-তারেকের দুর্নীতির খতিয়ান বেরিয়ে আসে। দুর্নীতির অভিযোগে মামলাও হয় একাধিক। যে মামলাগুলোর বিচার এখনও চলছে। বিএনপি নেত্রী অতি লোভের প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে মূলত নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন। সেই খ-িত পদযুগল নিয়ে তিনি নির্বাচনী মাঠে সরব হতে পারছেন না। তাই তিনি এমন সরকার চাইছেন, যে সরকার তার মামলাগুলো বাতিল শুধু নয়, তাকে ক্ষমতায় বসাবে জামায়াতকে সহযোগী করে। কিন্তু এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কালে এই মনোবাসনা পূর্ণ হওয়া দূর অস্ত। আসলে ভারতও ব্রিটেনে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি বহাল থাকে, সেই পদ্ধতিকে মেনেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিকল্প নেই। মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় নির্বাচনে হেরেছিলেন। ক্ষমতায় থেকে ভোট কারচুপি করার পথে যাননি। আর সেই পথ তাদের জানাও নেই। বিএনপি সংলাপে বসতে চায় সরকার পদ্ধতি নিয়ে। কিন্তু সংলাপ অতীতেও হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেত্রী সেই সংলাপের ফলাফলও মেনে নেননি। এখন এসব সংলাপ অর্থহীন। নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোন বক্তব্য তারা নির্বাচন কমিশনের কাছেই পেশ করতে পারে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ দীর্ঘ সংক্রাপেও বসতে পারে। কিন্তু সরকারী দলের সঙ্গে সংলাপে বসার নামে এক ধরনের চাতুরতার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। এটা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায়। সুতরাং এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৬ সালে যেভাবে তাদের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল। পথহারা পথিকের মতো, হতাশাচ্ছন্ন বিএনপি পরাজয় মেনে নেবার মতো সৎ সাহস অর্জন করতে না পারায় প্রলাপের আশ্রয় নিচ্ছে। যার কোন বাস্তব দিক নেই। সরকার পদ্ধতি নিয়ে বাহাস বন্ধ করে দলটির উচিত নির্বাচনী যুদ্ধে নেমে পড়ার প্রক্রিয়ার সাধনা করা।
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ