গণতন্ত্র, উন্নয়ন, শেখ হাসিনা এবং নির্বাচন প্রসঙ্গঃ মোস্তফা কামাল

7348

Published on জানুয়ারি 23, 2018
  • Details Image

সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিগত শুক্রবার ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ হচ্ছে নতুন বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয়। এমনটা হওয়ার কারণ রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচনী বছরের শুরুতে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সরকার ও সরকারি দল-জোটের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। দ্বিতীয়ত, বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে তিনি বলে দিয়েছেন নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের নামে কোনো মহল অরাজক পরিস্থিতি করতে চাইলে জনগণ মেনে নেবে না। তৃতীয়ত, ক্ষমতায় থেকে ৯ বছরে তিনি দেশ ও মানুষের জন্য যা করেছেন আর আশু ও দীর্ঘমেয়াদে কী তিনি করতে চান, কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান, সংক্ষেপে এর সুস্পষ্ট ছবি তিনি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। সর্বোপরি এই বক্তৃতার ভেতর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বছরের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, জাতির উদ্দেশে যখন ভাষণ দেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুবই আত্মবিশ^াসী ও দৃঢপ্রত্যয়ী মনে হচ্ছিল। একটু খেয়াল করলেই এটা অনুধাবন করা যাবে যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারপ্রধান সংবিধান ও নির্বাচন বহাল রেখে ১০ বছর দেশ যেমন পরিচালনা করতে পারেননি, তেমনি কোনো সরকারপ্রধানকেই নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা আত্মবিশ^াসী ও দৃঢ়প্রত্যয়ী মনে হয়নি। এমনটা হওয়ার কারণ কেবল এই নয় যে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। এর কারণ নিহিত রয়েছে নি¤œলিখিত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে।

বিগত নির্বাচনের আগে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি ও নির্বাচন বয়কটের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নস্যাৎ করে দেশকে পুনরায় অবৈধ অসংবিধানিক শাসনের মধ্যে ফেলে দেয়ার গভীর চক্রান্ত ছিল। ওই ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শক্ত হাতে নস্যাৎ করেন। এটা কার না জানা যে, বাংলাদেশের গৌরবমণ্ডিত ইতিহাসের মধ্যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ঘৃণ্য ইতিহাসও স্থান করে নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমরা বিজয় অর্জন করতে জানি কিন্তু বিজয় ধরে রাখতে পারি না। জীবন দিয়ে তিনি এই কথার সত্যতা প্রমাণ করে গেছেন। আরো একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, ১৯৯৬-০১ দেশ শাসনের পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম ও একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি সংবিধান মেনে ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর আগে তিনি নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সবই করেছিলেন দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা সুনিশ্চিত ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য। কিন্তু কী করেছিল সেই শা-ল-সা সরকার! ‘প্রথম রাতে বিড়াল মারা’সহ অনৈতিক সব কর্মকাণ্ড এবং ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ভোট ডাকাতির নির্বাচন করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে জিতিয়ে দিয়েছিল।

বলাই বাহুল্য, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর-আলশামসের দল জামায়াত নেতাদের গাড়িতে বাড়িতে দেশের পতাকা উড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতে শা-ল-সা সরকার ও সেই সরকার সমর্থিত মহল একটুও কুণ্ঠিত হয়নি। বলাই বাহুল্য, অনির্বাচিত ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও অঙ্গীকারবদ্ধ নয়, এমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রাণভোমরা জাতিসত্তা রক্ষা করতে পারে না, তা প্রমাণিত হয়েছে। এর পরের নির্বাচনে প্রথমে বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে আর পরে ইয়াজউদ্দিনের থ্রি ইন ওয়ান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর মাধ্যমে যে নির্বাচন করতে গিয়েছিল, তা ছিল নিতান্তই প্রহসন বিশেষ। ওইসব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়েই সোনার পাথরবাটিসম নির্দিলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের সময়ে যে ধরনের সরকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেই বহুল পরীক্ষিত পথেই ফিরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের জোট সরকার।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন ব্যবস্থাকে সর্বদেশস্বীকৃত ও পরীক্ষিত ওই পথে স্থায়ী ও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিতে পেরেছেন বলেই তাকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় এতটা আত্মবিশ^াসী ও দৃঢ়প্রত্যয়ী মনে হয়েছিল। প্রসঙ্গত এটা বলতেই হয়, বর্তমান সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য যে ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ রয়েছে, এর সর্বদেশস্বীকৃত মৌলিক বিষয় ঠিক রেখে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তা অবশ্যই পরিবর্তনযোগ্য। দেশে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার চালু হয়েছিল। বিএনপি ছিল ওই পদ্ধতির সবৈব পক্ষে। কিন্তু আমাদের জাতীয় পছন্দ ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র। অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বিএনপিও সংসদীয় পদ্ধতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। প্রকৃত বিচারে নির্বাচন বয়কট নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে অভিজ্ঞতাকেই দূরে ঠেলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির পদ্ধতির পক্ষে না থেকেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছিল, ওই পদ্ধতি বাংলাদেশে অচল। বিএনপিসহ অন্যান্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যদি বিগত নির্বাচনে অংশ নিত, তবে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ হতো।

পাঁচ বছর আগেই বলা যেত নির্বাচনের সময় যে ধরনের ব্যবস্থার কথা সংবিধানে লেখা রয়েছে, তার কোন কোনগুলো পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বিএনপি সংসদে ওইসব অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে পারত এবং জনগণও তা বিবেচনায় নিত। অভিজ্ঞতাপ্রসূত ওই প্রয়োজন চিহ্নিত হলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা তথা নির্বাচন পদ্ধতি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে আরেক ধাপ অগ্রসর হওয়া যেত। পাঁচ বছর কালক্ষেপণ হতো না। তা না করে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এবং পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বিগত নির্বাচন বয়কট করে যা করেছে, তা আসলে নিজের পায়ে কেবল কুড়াল মারেনি, গণতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর বিগত নির্বাচন যেসব ছোট ছোট দল বয়কট করেছিল, তারা পরের মুখে ঝাল খেতে গিয়ে জামায়াতের ফাঁদেই পা দিয়েছিল। এবারে তাদের মুখে অন্তত বয়কটের কথা শোনা যাচ্ছে না। এটা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য ভালো লক্ষণ। যদি কোনো সুবিধাবাদী অবস্থান নিয়ে ওইসব দলের কোনো সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন, তবে তারাও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সংবিধান সংশোধনের মতামত প্রদান করতে পারবে। সংবিধান অব্যাহত রেখে যে সুযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবারিত রেখেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিয়ে সেই সুযোগ আসলে বিএনপিসহ গতবারের বয়কট করা দলগুলোর তা গ্রহণ করা গণতান্ত্রিক কর্তব্য।

এখানে বলতেই হয় যে, বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে যতটা আত্মবিশ^াসী দৃঢ়প্রত্যয়ী ও সাহসী মনে হয়েছে; তার চাইতে অনেক বেশি বিধ্বস্ত লক্ষ্যহীন ও হতাশ মনে হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়াকে। যদি তেমনটা না হতো তবে ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেত্রী খালেদা জিয়া এমনটা বলতেন না যে, পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এই সেতু ভেঙে পড়বে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। এখানে উল্লেখ্য, বছর শেষে তিনি কেঁদেছিলেন এবং এমনো বলেছেন, ওরা শাস্তি দিয়ে আমাকে কোথায় রাখবে? বিএনপির জনসমর্থন রয়েছে এবং সারা দেশে সংগঠন-নেতা সব আছে। সেই দলের নেত্রী কেন কাঁদেন আর কেনই বা শাস্তি ঠেকানোর জন্য আন্দোলন না করে জেলের মধ্যে নিজেকে দেখতে পান, তা বিবেচনায় নিলেই বুঝা যাবে কেন পদ্মা সেতু নিয়ে ‘পাগল বা শিশুর মতো’ এমন বক্তব্য তিনি বছরের শুরুতে দিলেন। আসলে পদ্মা সেতু নয়, মাথায় তার আকাশ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।

যদি ভেঙে না পড়া শুরু হতো, তবে বিগত নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি নিয়ে আন্দোলনের নামে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর মহাপরিকল্পনা করেছিলেন, সেই দাবি থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে নেমে আসতেন না। দেশবাসীর নিশ্চয়ই মনে আছে যে, বিগত নির্বাচনের আগে তিনি একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দিয়েছিলেন। ওই রূপরেখা প্রহসন নাটকে পর্যবসিত হওয়ার পর তা থেকে তিনি সরে এসে বলেছিলেন, সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দিতে হবে। দাবি তার, আর রূপরেখা দিবে সরকার! হাসির সব নাটক! কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে বিগত সময়ে দুই দুইবার গোপন স্থান থেকে ঘোষিত অবরোধ ও হরতাল আন্দোলনের সমাপ্তি তিনি টেনেছিলেন কিনা, তবে ওই প্রশ্নের জবাব খালেদা জিয়া কি দিতে পারবেন? এবারে বহু দিন পর লন্ডন থেকে ফিরে এসে জোর গলায় বলা হলো, দ্রুতই দেয়া হবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা। এবারেও গর্জন বর্ষণে রূপ নিল না। অষ্টরম্ভা প্রবাদটা এবারেও সত্য হলো।

একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার পর বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়া নীরব রয়েছেন। এই নীরবতা কিসের লক্ষণ কে জানে! নীরবতা ব্রত নিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অঙ্গনে নেতাগিরি হয় না। তবে ১৩ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে নতুন কিছু ভেবে থাকেন, তার উচিত হবে এ নিয়ে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হতে পারে, তা নিয়ে আমাদের দলের একটা চিন্তাভাবনা আছে।’ একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এখানে সহায়ক সরকার শব্দটা উচ্চারণ করেননি মির্জা ফখরুল। জানি না সহায়ক সরকার থেকেও সরে এসেছে কি না বিএনপি! আর যদিও চিন্তাভাবনা ও সুনির্দিষ্ট রূপরেখার মধ্যে ফারাক বিপুল, তবুও বলতে হয় এ ব্যাপারে দলের চিন্তাভাবনা যদি কিছু থাকে তবে বলেন না কেন তিনি? শূন্যে তলোয়ার ঘুরিয়ে বাজার মাত তথা জনগণকে বিভ্রান্ত করার দিন যে গত হয়ে গেছে, এটাই এখন বুঝতে হবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের থিংক ট্যাংকে।

এই কলামের শেষে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় বছরের শুরুতে খালেদা জিয়া মূলে যা বলেছেন, তা বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘ভারত আমাদের স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সব সময়।’ নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা না দিয়ে তিনি কেন ভোল পাল্টিয়ে এসব বলছেন তা বিবেচনায় নিলেই বিএনপি রাজনীতির অন্তঃসারশূন্যতার স্বরূপ অনুধাবন করা সম্ভব হবে। রাজখোর ও পরেশ বড়ুয়া গংদের দেশের মাটি অপব্যবহার করতে দেয়ার কথা কি ভুলে গেছেন খালেদা জিয়া! প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’, , ‘অতীতের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব’, ‘বিশ^সভায় মাথা উঁচু করে চলব’ ইত্যাদি; সেখানে খালেদা জিয়ার এমন ভারতমুখীনতা কেন? কেন ভুলত্রুটির কথা তিনি বলেন না? কেন হাওয়া ভবন সম্পর্কে তিনি নীরব থাকেন? আন্দোলনের নামে মানুষ ও সম্পদ নষ্ট করার জন্য দেশবাসীর কাছে মাপ চান না? কেন আশকারা ও প্রশ্রয় দিয়ে সঙ্গে রাখেন যুদ্ধাপরাধী অনিবন্ধিত দল জামায়াতকে?

বছরের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ‘২০১৮ সাল হবে বেগম জিয়ার বছর’ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। গণজাগরণে মুক্তি আসবে।’ আসলে চুপ করে বসে আছে কে? বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা না কি নেত্রী খালেদা জিয়া? আসলে সহায়ক সরকারের রূপরেখা যত দিন ‘চিন্তাভাবনা’ হয়ে থাকবে আর ভোল পাল্টানো ভারতমুখীনতা যত দিন মুখোশ হয়ে থাকবে, তত দিন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চুপ হয়েই থাকবে। প্রধান নেতা খালেদা জিয়া আর দুই নম্বর নেতা তারেক জিয়া মূল দাবির প্রশ্নে নীরব হয়ে থাকবেন আর নেতাকর্মীরা রাস্তায় সরব হবেন, এমনটা আশা করা অরণ্যে রোদনেরই শামিল হতে বাধ্য। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এমন থাকলে নিঃসন্দেহে ২০১৮ সাল হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরো আত্মবিশ^াসী দৃঢ়প্রত্যয়ী সাহসী ও শক্তিশালী হওয়ার বছর, আর খালেদা জিয়ার জন্য ২০১৮ সাল হবে আরো বিধ্বস্ত লক্ষ্যহীন ছত্রখান ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বছর। প্রকৃত বিচারে পদ্মা সেতু যত দৃশ্যমান হবে, ততই কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিএনপি-জামায়াত নেত্রী খালেদা জিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়তে থাকবে।

শেখর দত্ত : রাজনীতিক, কলাম লেখক

সৌজন্যেঃ কালের কণ্ঠ 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত