710
Published on জানুয়ারি 28, 2017মানুষের ‘ভাল-মন্দ না দেখে’ আন্দোলনকারীরা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য ‘কাঁদছেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৭তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আবারও বলেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।
কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রামপাল গিয়ে দেখে আসুন কতদূর ওখান থেকে সুন্দরবন। আমি তো বলব রামপালের ওখান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন সুন্দরবন পর্যন্ত। তাহলে জানতে পারবেন সুন্দরবন কতদূর।”
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্লেনারি সেশনে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কথা উঠলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আল গোরকে বাংলাদেশে এসে নিজের চোখে ওই এলাকা ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আধাবেলা হরতাল করেছে তেল-গ্যাস খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
বাম দলগুলোর পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটি অংশের আশঙ্কা, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তবে প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বরাবরই বলে আসছেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।
আইইবির অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধীতাকারীদের যে আপত্তি, এখানে না সারা বিশ্বে তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু রামপালে হচ্ছে, সুন্দরবনে হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “সুন্দরবন যেখানে, সেখান থেকে অনেক দূরে, পশুর নদীর তীরে ডোবা মত জায়গা ছিল। সেখানে পায়ে হেঁটে যাওয়া যেত না। জায়গাটা ভরাট করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে।”
ইউনেস্কো ঘোষিত ওর্য়াল্ড হেরিটেজ এলাকা থেকে ওই বিদ্যুতকেন্দ্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই প্রকল্পে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সুতরাং সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
“পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। সেখানে পাঁচ লাখ বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতোমধ্যে দেড় লাখ রোপন করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, এই কেন্দ্রের চিমনি ‘অনেক উঁচু’ হবে। যে ছাই হবে তা কিনতে সিমেন্ট কারখানাগুলো ইতোমধ্যে ‘কন্টাক্ট’ করছে। আর কয়লা আনা হবে ‘কভার্ড কার্গোতে’ করে, যাতে কোনো অসুবিধা না হয়।
এ প্রকল্পের কারণে রামপাল এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসছে বলে জানান তিনি।
কিছুদিন আগে সুন্দরবন এলাকায় এক হাজার মেট্রিক টন কয়লাবাহী একটি জাহাজডুবির ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বা আন্দোলন করছেন, আমি তাদের জিজ্ঞেস করব, এক হাজার মেট্রিক টন কয়লা যে পানিতে ডুবে গেল, এতে ওই এলাকার পরিবেশের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে?”
আন্দোলনকারীরা ওই এলাকায় গেছেন কি না, দেখেছেন কি না, বা যাচাই করেছেন কি না- সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “আন্দোলন তো ঢাকায় বসে করেন। তারা কিন্তু জীবনেও কোনোদিন রামপালে যাননি।”
রামপালের বিষয়ে আশ্বস্ত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
“এ খনির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র করলাম। এটি সাধারণ মানের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটা কিন্তু আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র না এবং ওখানে কয়লা নেওয়া হচ্ছে খোলা অবস্থায়।
“ওই এলাকায় পরিবেশের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে? ওই এলাকায় আমি নিজে গিয়েছি, হেলিকপ্টারে করে গিয়েছি, ছবি তুলেছি। ধানগাছ, পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে- এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
“বরং কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ওই জায়গাটা দেবে গেছে, ছয়-সাত ফিট নিচে নেমে গেছে। ওই এলাকা পানিতে ভরে গেছে। ওই এলাকার মানুষদের নিয়ে গিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বসতি স্থাপন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”
দিনাজপুরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাধারণ মানের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও পরিবেশের ক্ষতি বা জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগ ওঠেনি বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মানুষের ভাল মন্দ দেখার দরকার নাই, সেখানে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছেন।”
তিনি তাদের পরামর্শ দেন, সুন্দরবনে গিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের সাথে দেখা করে তারা জিজ্ঞাসা করুক, কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না।
“রয়েল বেঙ্গল যদি অভুক্ত থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই...,” হেসে বলেন প্রধানমন্ত্রী।