পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে লবি করেছিলেন ড. ইউনুসঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

638

Published on জানুয়ারি 25, 2017
  • Details Image

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব‌্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ, গ্রামীণ ব‌্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসের বিদায়ের বিষয়ে কথা বলেন সরকার প্রধান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস‌্য মাঈদুল ইসলামের এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের কোন এক স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক আর উনি (ইউনূস) মিলে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে… আমেরিকার ফরেন সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটনসহ এদের সকলের লবিংয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের টাকা দেওয়াটা বন্ধ করে দেওয়া হল।”

দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন আটকে দিয়েছিল বিশ্ব ব‌্যাংক। পরে বিশ্ব সংস্থাটিকে বাদ দিয়ে নিজেদের অর্থেই এই সেতু নির্মাণের উদ‌্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালের মধ‌্যে এই সেতু খুলে দেওয়ার আশা করছে সরকার।

পদ্মা প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “উল্টো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হল। যেখানে এক পয়সাও ছাড় হয়নি। বলা হলো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে!”

গ্রামীণ ব্যাংকের পদ থেকে সরানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন ঠেকাতে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলে আগে থেকে বলে আসছেন শেখ হাসিনা।

পদ্মা প্রকল্প নিয়ে জটিলতার আগে ২০১১ সালে বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে আদালতে গিয়েও বিফল হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, “আমরা কিন্তু উনাকে (ইউনূস) সরাইনি। তিনি মামলায় হেরে গেছেন।

“মামলা করার পরামর্শদাতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও তার মেয়ে। উনি মামলায় হারলেন। আইনের কারণে উনার এমডি পদ চলে গেল। এরপর উনি আমাদের ওপর ক্ষেপে গেলেন। সেই ক্ষ্যাপাটা পড়ল আমার পদ্মা সেতুর উপর।”

গ্রামীণ ব্যাংকের পদ হারানোর পর থেকে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে আওয়ামী লীগ নেতারাও দাবি করে আসছেন। এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ই-মেইল দেখাচ্ছেন তারা, যেখানে গ্রামীণ ব‌্যাংক নিয়ে তার তদ্বিরের বিষয় রয়েছে।

তবে ইউনূস বরাবরই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করে আসছেন।

ই-মেইল ফাঁস নিয়ে হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বিপাকে পড়েছিলেন। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তার হারের জন‌্যও এটাকে দায়ী করছে ডেমোক্রেট শিবির।

ইউনূসের জন‌্য হিলারির ফোন পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার লবিস্ট আছে, এ আছে সে আছে। অনেক টাকা পয়সা খরচা.. অনেক বড় বড় জায়গা থেকে টেলিফোন, আর অনুরোধ।

“আমেরিকার হিলারি ক্লিনটন আমাকে ফোন দিলেন, তাকে এমডি পদ থেকে কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে। আমি বললাম, বাদ তো আমরা দিচ্ছি না। উনি মামলা করেছেন, মামলায় হেরে গেছেন। এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই।”

“কোর্ট যে উনার থেকে অতিরিক্ত ১০ বছরের জন্য টাকা ফেরত চায়নি এটা বড় কথা,” বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ ফোনের যখন অনুমতি দেয়া হয়, তখন শর্ত ছিলো লভ্যাংশের ৩০ ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে কোন টাকাই রাখেননি। লভ্যাংশের শতকরা ৩০ ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে না দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতারণা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ফোনের শেয়ার বিক্রি করে অধিকাংশ নিজের সম্পত্তি করে নিয়েছেন। আবার উনি নিজেও কর দেন না। তার ফিক্স ডিপোজিটে প্রচুর টাকা রয়েছে। মামলা করে দিয়েছেন তাই কর দিতে হয় না। তার এই টাকা কোথা থেকে এসেছে সেই হিসাবও তিনি দিতে পারেননি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ফোনের ঋণ নিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দিয়ে মানুষ সর্বশান্ত হয়েছেন। ব্যাংকের আইন অনুযায়ী কেউ ৬০ বছর বয়সের বেশি হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৭০ পেরিয়ে গেলেও এই পদ আঁকড়ে ধরে থাকেন। তাকে ওই পদ ছেড়ে অন্য কোন সম্মানজনক পদে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি আদালতে মামলা করে দেন। আইন তার পক্ষে না থাকায় তিনি মামলায় হেরে যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মামলায় হেরে তিনি আমার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে নানা প্রচার অপপ্রচার চালাতে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনকে দিয়ে পর্যন্ত আমাকে ফোন করান। শেষ পর্যন্ত হিলারী ক্লিনটনসহ অন্যান্যরা ষড়যন্ত্র করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ফেরত নেয়া হয়। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। যেখানে এক পয়সাও ছাড় হয়নাই, সেখানে বলা হলো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে।’

তিনি বলেন, রাজনীতি মানুষের জন্য করি কোন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা সরিয়ে নিয়ে নিজের ভাগ্য গড়ার কোন ইচ্ছাই নেই। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করে বলেন, তিনি যে আমার বিরুদ্ধে লবিং করলেন, যখন তিনি আমার কাছ থেকে গ্রামীণ ফোনের অনুমোদন নিয়েছিলেন, তখন কি আমাকে এক কাপ চাও খাইয়েছেন? উল্টো চা খাইয়ে ব্যবসা দিয়েছিলাম। আমরা সেই মানসিকতার লোক।’

শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক নিজে থেকে অর্থায়নের আগ্রহ দেখায়। কিন্তু সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা দিয়েসহ আমার নিজের বিরুদ্ধে, আমার ছেলে-মেয়ে, বোন, বোনের ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধেসহ তদন্তের নামে নাজেহাল করা হয়েছে। কিন্তু তারা দুর্নীতির কোন সূত্র বের করতে পারেনি।

তিনি বলেন, এরপর থেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেই। এখন এই কাজ এগিয়ে চলছে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত