606
Published on ডিসেম্বর 3, 2016প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৫তম আন্তর্জাতিক ও ১৮তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাইকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে জীবনচক্রভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে।’
অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের দক্ষতা ও সক্ষমতার নিরীখে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনমান উন্নয়নে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিবন্ধি এবং অটিস্টিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক, চিকিৎসা এবং শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রতিটি স্কুলে প্রতিবন্ধি শিশুদের শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে মিশে তারা শিক্ষা লাভ করে সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাস্তা-ঘাট, ফুটপাত এবং নতুন অবকাঠামো যেথানেই হচ্ছে সেখানে প্রতিবন্ধীদের সহজে চলাচলের জন্য পৃথক লেন এমনকি টয়লেট তৈরি করারও নির্দেশও আমাদের দেয়া আছে এবং সেভাবেই আমরা তা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে বিত্তবানসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য পথ প্রশস্থ করতে কর্পোরেট সেক্টর এবং সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদায়ি স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মেজাম্মেল হোসেন বক্তৃতা করেন।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি রজব আলী খান নজিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনটি ক্যাটাগরিতে ৯ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মাঝে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলে মিরপুর-১৪ নং সেকশনে ৮ দিনব্যাপী প্রতিবন্ধীদের অংশ গ্রহণে আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধি উত্তরণ মেলা’ উদ্বোধন করেন।
পঁচাত্তরে পরিবারের সবাইকে ও সবকিছু হারানোর পরও দেশে ফিরে নিজেদের সম্পদ জনগণের বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেনে, ‘প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর-অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি’।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর-অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের কথা সংবিধানেই রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে জাতিরজনক শুধু সংবিধানেই এর সংযোজন ঘটাননি, প্রতিবন্ধীদের ভাগ্যের উন্নয়নের সকল পদক্ষেপ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বিত্তবানই আছেন যারা টাকা খরচের আর জায়গা পান না। আবার অনেকের ছেলে-মেয়ে রয়েছে যারা জীবনে চাওয়ার কিছুই না পেয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথে চলে যায়। কাজেই সেই বিত্তবানদেরও আমি বলব তারা যদি এই ধরনের প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন তাহলে সমাজ এতে উপকৃত হবে। নিজেরাও উপকার পাবেন এবং আল্লাহর দোয়াও পাবেন সবাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহিত নানামুখি পদক্ষেপের ফলে আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। এমডিজি বাস্তবায়ন করেছি এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। কাজেই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আর সেই সাথে এই প্রতিবন্ধিতার বিষয়টাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রতিবন্ধীরা আমাদের আপনজন, আমাদেরই সন্তান। কাজেই তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়া , সমাজে তাদের একটা সন্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে আরো সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেয়া-এটাই আমাদের কর্তব্য।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল