353
Published on নভেম্বর 8, 2016তিনি বলেন, ‘জনগণ শান্তি ও নিরপত্তা চায় এবং আমরা সেই শান্তি ও নিরপত্তাবিধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ... আমরা এজন্য প্রয়োজনে যেকোন ধরনের পদক্ষেপ নেব।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির যৌথসভার উদ্বোধনী বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবার পর এটাই ছিল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলী এবং কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম সভা।
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া পৌঁছেন।
দেশবিরোধী চক্র বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি, তাদের দোসর এবং এদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারিরা এক জোট হয়ে দেশকে অস্থীতিশলি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেশের মানুষ জন শান্তিতে আছে, একটু সুখের মুখ দেখতে আরম্ভ করেছে, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ আসতে আরম্ভ করেছে ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চাইছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশের জনগণকে একযোগে এই সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করারও আহবান জানান।
তিনি বলেন, এ সম্পর্কে জনমনে যথেষ্ট সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে এবং কেউই এখন সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নামের অশুভ শক্তির উত্থান দেখতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ শান্তি চায় এবং আমরা অবশ্যই সেটা তাদেরকে দেব। এ প্রসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবার আহবান জানান।
প্রশাসন এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী জঙ্গিবাদের শেকড় খুঁজে বের করায় যথেষ্ট সক্রিয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যদি সরকার ও জনগণ একযোগে প্রচেষ্টা চালায় তাহলে আমরা অবশ্যই এই মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চিরতরে উচ্ছদ করতে সক্ষম হব ইনশাল্লাহ।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাসকরি আমরা যেসব অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলো হাতে নিয়েছি তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বিগত দুটি নির্বাচনের মত জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতাও তিনি প্রত্যাশা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশাকরি ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতই জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে পুনর্নির্বাচিত করবে। যাতে করে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো আমরা চালিয়ে যেতে পারি।
২০০১ সালে নির্বাচনের পর থেকে পরবর্তী ৫ বছর বিএনপি-জামায়াত জোটের সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং নিরপরাধ মানুষ, নিরীহ নারী-শিশুসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তাদের ৫ বছরের শাসনামলে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
সেই ধারাবাহিকতাতেই গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ২০১৫ সালের প্রথম ৩ মাস নির্বাচন বানচাল এবং সরকার পতনের জন্য বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা মানুষ পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশব্যাপী তান্ডব চালায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল।’
’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সেনা শাসক জিয়াউর রহমানই এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তন করেন উল্লেখ করে প্রধানমনন্ত্রী বলেন, ‘তারা স্বাধীনতার চেতনাকে ধূলিস্যাৎ করে সে সময় যুদ্ধাপরাধী, মানুষ হত্যাকারী, ধর্ষকচক্রকে পুনর্বাসিত করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর তা সম্ভব হয়েছে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা হওয়ায়। গতবারের পর এবারও টানা সরকারের দায়িত্বে থাকাতেই তা কেবল সম্ভব হয়েছে।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোর পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তাঁর সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। আর ২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
বৈঠকের শুরুতে, বঙ্গবন্ধু, বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নিহতদের আত্মার শান্তি এবং দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন, সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছেন। গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে পুনর্নির্বাচিত হয়ে টানা অষ্টমবারের মত দলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই ছিল তাঁর প্রথম জাতির পিতার আবাসভূমি টুঙ্গিপাড়া সফর।
টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে অবতরণের পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে গিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন এবং বিশেষ মোনাজাতেও অংশগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত বিশেষ মিলাদ মাহফিলে শরীক হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সদস্যবৃন্দ।