424
Published on অক্টোবর 14, 2016এর মধ্যে ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান।
শুক্রবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন এবং দুই দেশের প্রতিনিধিদল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”
শি জিনপিং বলেন, “আমরা চীন বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের জায়গা থেকে কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি।”
চুক্তি ও সমঝোতা
এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা চুক্তি, যার আওতায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পে ২১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সাহায্যের কথা বলা হয়েছে।
- এছাড়া আট কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদানের জন্য অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি, দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের জন্য ২৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি এবং ছয়টি জাহাজ সম্পর্কিত মোট চারটি ঋণচুক্তি।
- কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ও দাশেরকান্দিতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণে দুটি কাঠামো চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
- এছাড়া চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সহযোগিতা, মেরিটাইম কো-অপারেশন, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই, আইসিটিতে নতুন ফ্রেমওয়ার্ক, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও তথ্য আদান-প্রদান, জলবায়ু পরিবতর্নের ঝুঁকি মোকাবিলা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক হয়েছে।
- ঋণ চুক্তির সুনির্দিষ্ট আর্থিক পরিমাণ জানতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।
- ছয়টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হল- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মাল্টিলেইন টানেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার, ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
চীনের প্রেসিডেন্ট বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা।
পরে চামেলি কক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর হয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। দুই নেতা ছয়টি প্রকল্পের ফলকও উন্মোচন করেন।
‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে শি জিনপিংয়ের এই ঢাকা সফর। ১৯৮৬ সালে লি শিয়ানইয়ানের পর বাংলাদেশে আসা প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান তিনি।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সম্পর্কের ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর এক বিবৃতিতে শি জিনপিং বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চেলের ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ বলে মনে করে।
“পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই,” বলেন শি।
তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছে ১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি, যে দলে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন।
এছাড়া চীনা ব্যবসায়ীদের ৮৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও ঢাকায় এসেছে। হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের বৈঠকে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের ১৯টি চুক্তি হয়েছে।
এই চুক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জানিয়েছেন।