770
Published on অক্টোবর 15, 2016এছাড়াও দু’দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একযোগে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করে।
শুক্রবার বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গভীর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু এই সহযোগিতাকে উভয় দেশ কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দু’নেতার মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে,’- পররাষ্ট্র সচিব মো.শহীদুল হক বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আরো গভীর এবং সম্প্রসারিত করার পাশাপাশি একে একটি নতুন অবয়ব প্রদানে একমত হয়েছেন।
সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে অত্যন্ত ফলপ্রসূ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, এই সফরের ফলে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দু’নেতাই এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আগামী দিনগুলোতে দু’দেশের মধ্যে আরো উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় হবে বলেও পররাষ্ট্র সচিব অভিমত ব্যক্ত করেন।
ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বিষয়ে দু’নেতার আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দু’দেশের সম্পর্ক অনেক পুরনো। তবে, চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ করে আইসিটি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরো নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও কৃষি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরো গভীর এবং সম্প্রসারিত হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দু’নেতা সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্যের আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হন। এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় বলেও তিনি জানান।
বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) এবং পাট শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়েও ইঙ্গিত দেন, বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, বৈঠকের পরে এ বিষয়েও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চীন সরকার বাংলাদেশকে প্রযুক্তি স্থানান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনে সহযোগিতা প্রদান করবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি খাতে চীন বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের ইপ্সিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ত্বরান্বিত হবে।
শহীদুল হক বলেন, বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান চমকপ্রদ উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর (শেখ হাসিনার) নেতৃত্ব এই সমৃদ্ধিকে আরো বহুদূর নিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দু’নেতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও একযোগে কাজ করার বিষয়ে বৈঠকে অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বৈঠকে উভয় নেতৃবৃন্দ মেরিটাইম সেক্টরকে চিহ্নত করে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করেন। যে স্মারকের আওতায় উভয় দেশ ব্লু-ইকোনমি নিয়েও কাজ করবে।
শহীদুল হক বলেন, দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় বৈঠকের পরে চীনের ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
চীনের সঙ্গে এদিন বেসরকারি খাতে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হবার ফলে দু’দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্কের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হবার ফলে কি ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন করতে হলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, তথ্য প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিষয়েই সকল চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কারণ, দুই নেতাই দু’দশের জনগণের উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন, বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
বৈঠকের পরে দু’নেতার উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং দু’দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সড়ক ও সুড়ঙ্গ পথ সম্পর্কিত বিষয়েই চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট ১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। যার মধ্যে রয়েছেন-ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা ওয়াং হিউনিং এবং লি জাং শু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়েচি, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মন্ত্রী শু শাও শি, অর্থমন্ত্রী লু জিউই, বাণিজ্যমন্ত্রী গাও হুচেং এবং পিপলস ব্যাংক অব চায়নার গভর্ণর জু শিয়াওচুয়ান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।