বিএনপি-জামায়াতই সব গুপ্তহত্যার সাথে যুক্তঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

427

Published on জুন 18, 2016
  • Details Image

তিনি বলেন, ‘মাদারিপুরের ঘটনার পর আর এ বিষয়ে দেশের মানুষের কোন সন্দেহ নেই যে বিএনপি-জামায়াতই সকল গুপ্তহত্যার সঙ্গে যুক্ত। কলেজ শিক্ষক হত্যা প্রচেষ্টায় যুক্ত এবং জনগণের হাতে আটক সন্ত্রাসীর পরিচয়-সে একজন শিবির কর্মী।’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এর ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যায় সিদ্ধহস্ত। এটাই তাদের চরিত্র। তারা জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে যুক্তরাজ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সব যুদ্ধাপরাধী লন্ডনে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তারাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।

তিনি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে লন্ডনে অবস্থানরত বেগম জিয়ার পুত্র এবং বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন কুলাঙ্গার ছেলে যে, লন্ডনে বসে আছে। ব্রিটিশ সরকার কেন তাকে সেখানে জায়গা দিয়েছে জানিনা।’

বাংলাদেশে কখনও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জায়গা হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার গণমাধ্যমে পরিপূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সুতরাং এই স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে তাদেরর কিছু দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাফর ওয়াজেদ, মহাসচিব ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সম্পাদকবৃন্দ, জেষ্ঠ্য সাংবাদিকবৃন্দ এবং বিএফইউজে এবং ডিইউজে’র সদস্যবৃন্দ ইফতারে অংশগ্রহণ করেন।

ইফতারের পূর্বে সমগ্র দেশ-জাতি এবং মুসলিম উন্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

পরে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

টিউলিপকে লিখিত চিঠি দিয়ে হুমকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিঠির ভাষা এ রকম-‘তোর নানাকে হত্যা করেছি। তোকে তোর মা-খালাকে সহ হত্যা করবো।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গুপ্তহত্যা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এগুলোর বিরুদ্ধে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং সাংবাদিকদের কাছে এটা আমরা চাই যে, এর বিরুদ্ধে আপনাদেরও সোচ্চার হতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মাটিতে কোনরকম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান নেই। হুমকি-ধমকি যতই দেয়া হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বিচার সম্পন্ন হবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আহসানউল্লাহ মাস্টারকে যে হত্যা করা হলো সে মামলার রায় বেরিয়েছে। সেখানে আপনারা দেখেছেন বিএনপি’র নেতারাই কিন্তু শাস্তি পেয়েছে। মৃত্যুদন্ড পেয়েছে। তাদের সময়ে এএসএম কিবরিয়া সাহেব, আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়। কারণ তাদের চরিত্র এমপি হত্যা করা, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, গুপ্ত হত্যা করা।

তিনি তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি’র উদ্দেশে বলেন, লন্ডনে যাকে আদর দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন সে যাবার পরে সেখানেও (লন্ডনে) কিন্তুু, এমপি হত্যা হয়েছে এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে সপরিবারে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। আমি আশা করি ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাও বিশ্বাস করেন যে, আমাদের সরকার সব সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে, স্বাধীনতা ভাল, সেই স্বাধীনতা ভোগ করার সাথে সাথে সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব থাকে। সেই দায়িত্বশীলতা সকলের কাছ থেকে আমরা আশা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই যে আমাদের দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাক। আর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং তার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে, আপনারাও পাচ্ছেন।

সাংবাদিক কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার গৃহিত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাংবাদিদের কল্যাণে এ পর্যন্ত যা কিছুই করা হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এমনকি ফৌজদারী আইন সংশোধন করেও দিয়েছে। তিনি বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট আমরা করে দিয়েছি। আগামীতে এই কল্যাণ ট্রাষ্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সাহায্য ভাতা প্রদানেরও উদ্যোগ নেয়া হবে।

সাংবাদপত্রের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছু একটা নীতিমালার ভিত্তিতেই চলতে হয়। সে জন্যই এই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ, সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার জন্য নয়।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্রডকাষ্টিং মাধ্যম বিবিসি’র সাম্প্রতিক একটি ভ্রান্ত তথ্য প্রকাশকে তিনি দুঃখজনক বলেও অভিহিত করেন।

সবাইকে স্বাধীনভাবে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি ব্যক্তিগত খাত নির্ভরশীল, আর আমরা ব্যক্তি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা ৫ম ওয়েজ বোর্ড, অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের ব্যবস্থা করেছি এখন নবম ওয়েজ বোর্ডের কথা উঠেছে, এই বিষয়ে আমার মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মন্ত্রী এখানে আছেন, আমি বলব নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

আর সাংবাদিকদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী অতীতের প্রতিশ্রুতির পুনরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা এজন্য জায়গা খুঁজে বের করুন। আমি প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করব।’

এ সময় রাজউকের প্লট বরাদ্দের সময় তিনি সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ কোটা প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবের শ্রীবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের বিষয়ে বলেন, ‘সারবিশ্বে এখন মিডিয়া একটি প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে গেছে। সেখানে আমি চাই বাংলাদেশের এই প্রেসক্লাব এমন একটা সুন্দর প্রতিষ্ঠান হোক এবং দৃষ্টিনন্দন হোক যেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাংবাদিকরা এসে এর সৌন্দর্যে অভিভূত হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন- যা কিছুই আমি তৈরী করার চেষ্টা করি, সেটাকে একটা সুন্দর রূপ দেয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই সারা বাংলাদেশটাকেই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

গণমাধ্যমকে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল- বাংলাদেশের কোন আমলেই কোন সরকার, এতগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন চ্যানেলের অনুমতি দেয়ার সাহস পায়নি। আজকে বহু সাংবাদিক এখানে কর্মরত, বহু শিল্পী কলা-কুশলীদের কর্মসংস্থান হয়েছে এমনকি টকশো করে করেও অনেকে ভালই উপার্জন করছেন।

এ সময় তিনি ‘টকশো’ কোনভাবেই সংসদের বিকল্প হতে পারে না, কারণ সংসদে তাদের সংবিধান মোতাবেক একটা নিয়ম-নীতিতে চলতে হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‘টক শো’র মত লাগামছাড়া কথা বা মন্তব্য সংসদে করা যায় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী টকশো সমালোচনা করলেও তা যেন গঠনমূলক ও নিয়ম-নীতিভিত্তিক হয় সেখানে কোনরকম অসংলগ্ন কথাবার্তা যেন না হয় সেদিকে সকলকে দৃষ্টি রাখার আহবান জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের খন্ড চিত্র তুলে ধরে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জিডিপি ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে উন্নীতকরণ সহ চিকিৎসাসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার অংশ হিসেবে সারাদেশে তাঁর সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার তথ্য তুলে ধরেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স পাস করার মাধ্যমে পঁচাত্তরের খুনীদের দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবোসে চাকরী প্রদান এবং মন্ত্রী এমপি বানিয়ে পুনর্বাসন এবং কারাগারে আটক প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বিচার চলমান যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়ার প্রসংগগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে উল্লেখ করে একাত্তরের পরাজিত শক্তির চক্রান্ত সম্পর্ক দেশবাসীকে সজাগ থাকারও আহবান জানান।

তিনি সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার রাজনৈতিক অঙ্গীকারও এ সময় পুনর্ব্যক্ত করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত