361
Published on জুন 12, 2016তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা এই হত্যাকান্ড বন্ধ করতে সমর্থ হব। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভূখন্ডের দিক দিয়ে ছোট। এখানে সবাই সবাইকে চিনতে পারে বা জানতে পারে। কাজেই এখানে অপরাধী খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ না। এই জঘন্য কাজে জড়িতরা এর শাস্তি পাবেই।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যকরী কমিটির সভার সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এই কাপুরুষোচিত জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ও আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘কেউ যখন আঘাত করবে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দয়া করে দেখবেন না। বরং সবাই একজোট হয়ে সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাথে থাকব। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাথে থাকবে।’
গুপ্ত হত্যায় জড়িতদের প্রেফতারে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এদের খুঁজে খুঁজে আমরা বের করব। বাংলাদেশে যাবে কোথায় ?
এ সব খুনীদের মদদদাতা, অর্থের জোগানদানকারী, ষড়যন্ত্রকারী সবাইকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এসব হত্যাকান্ডের পেছনে কারা রয়েছে, তাদেরকেও খুঁজে বের করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের সূত্রটা কী ? কোথা থেকে টাকা আসছে ? কাদের মদদে এটা করতে চাচ্ছে ? সে সূত্রগুলোও আমরা বের করব।’
আওয়ামী লীগ গুপ্তহত্যায় জড়িত বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমি না আপনি, আপনিই খুনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যে কারণে সেই ১৯৮১ সালে বাংলার মাটিতে পা রাখার পর থেকেই একের পর এক আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা সত্য যে জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা- সবাই খুনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বঙ্গবন্ধু’র খুনীদের পুনর্বাসনকারী। খুনীদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে তাদের দায়মুক্তি দিয়ে দেন।
তিনি বলেন, আমরা অতীতের দিকে তাকালেই দেখব যে, এই তিনজনই আল বদর, রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের তাদের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৭ খুনের মামলার আসামীকেও জিয়াউর রহমান মুক্ত করে দেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সুতরাং কে খুনী, প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, খুন করা আমাদের ধাতে নেই কর্মও নয়। কিন্তু, আপনার মুখটা একবার আয়নায় দেখুন।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু সাজুগুজু করার জন্য আয়নায় শুধু চেহারা দেখেন না। কী কী করেছেন, তা স্মরণ করার জন্য চেহারাটা একটু আয়নায় দেখেন। আয়নায় খুনের চেহারাটাই ভেসে উঠবে। মনের আয়নাটা দেখেন। কীভাবে খুনিদের মদদ দিয়েছেন।’ গুপ্তহত্যার পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর ষড়যন্ত্রও কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্তদের প্রেফতারে পুলিশের চলমান অভিযানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার খুনীচক্রকে খুঁজে বের করতে সম্ভব সকল পদক্ষেপই গ্রহণ করছে। তিনি এদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান বিষয়ে কোন প্রকার অনুকম্পা প্রদর্শন না করতেও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
কিছু তথ্য এর মধ্যেই সরকারের কাছে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার কাছে কিছু কিছু সূত্র আছে। তথ্য রয়েছে। এক সময় খুনীদের আসল পরিচয় বের হবেই।
গণভবনে বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের ১১ মাস পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
সাবজেলে থাকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এবং জামায়াতের দুঃশাসনের জন্যই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলো অথচ ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই তারা বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দমন পীড়নে নেমে পড়ল।
শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাঁকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করে হত্যা এবং চাঁদাবাজির অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। এরআগে তারা তাঁকে দেশ ত্যাগেও বাধ্য করে এবং নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্রেও বাধা প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখনকার সাবজেলে কারাঅন্তরীণ থাকার সময়টাতে তিনি দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনা করার সুযোগ পান, যেটি পরবর্তীতে রূপকল্প-২০২১ হিসেবে রূপ লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত দেখা যায়- একটি সরকার সরকার গঠনের পর তাদের আগের সরকারের ভুল-ভ্রান্তি-দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে। কিন্তু, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিষয়টির ভিন্নতা দেখা গেল। যদিও আগের বিএপি-জামায়াত সরকার আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল তারপরেও তারা তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হেনস্থা করা শুরু করলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় আমাকে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কেবল সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণেরও অনুরোধ করেছিল। কিন্তু, আওয়ামী লীগের প্রতি দেশে এবং দেশের বাইরে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক জনসমর্থন থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর সরকার দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধমে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালে দেশকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে একযোগে কাজ করে যাবার আহবান জানান।
এ সময় তিনি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও ধ্বংসের রাজনীতির আবারো সমালোচনা করে বলেন, দেশের সব অর্জনকেই তারা পন্ড করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তারা তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে জন সমর্থন না পাওয়ায় এখনও গুপ্ত হতার পথ বেছে নিয়েছে। হত্যা ও সন্ত্রাসের পথে সরকারকে উচ্ছেদ করাই তাদের চক্রান্তের উদ্দেশ্য।
বেগম জিয়ার কাছ মানুষ হত্যা উৎসবের মত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কারণে ২০১৩,১৪ এবং ১৫ সালে কোন হত্যার বিষয়েই কোনদিন এতটুকু দুঃখ প্রকাশ করেননি।
তিনি বলেন, তিনি এখন গুপ্তহত্যায় নেমেছেন। গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধূলিস্মাৎ করাই তাদের নতুন চক্রান্ত।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিগত বছরগুলোতে দেশের আর্থ-সামজিব উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সকলে একযোগে অভীষ্ট উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে গেলে কেউ উন্নয়নের এই ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।