373
Published on জুন 7, 2016তিনি বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কাউকে ছাড়া হবে না... তাদেরকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করানো হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় মদীনা হিলটন হোটেলে মদীনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
ঢাকার পুলিশ হেড কোয়াটারে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে রোববার সকালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মোটরবাইকে আগত অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সন্ত্রাসী উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত এবং গুলি করে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোন দোষ ছিল না। অথচ বাচ্চাকে স্কুলে পৌছে দেয়ার পথে তাকেই তার বাচ্চার চোখের সামনেই খুন করা হল.. এটা খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কোন ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না.. আমরা চাই এ ধরনের আর কোন ঘটনা যেন বাংলাদেশে কখনও না ঘটে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা একসময় বাস, ট্রেন লঞ্চে বোমা ছুড়ে মেরেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এখন গুপ্ত হত্যায় নেমেছে।
এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে। এতে বিপুল অংকের বাজেট প্রণয়ন অতীতের কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভবপর হয়নি।
এ সময় দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ একে ‘বিস্ময়কর’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আমি বলি এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য ভালবাসা ও কর্তব্যবোধ এবং আমরা সবসময়ই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করি। যে কারণে প্রয়োজনে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি.. আওয়ামী লীগ ব্যতীত আর কেউ এই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা সবসময় মাথায় রেখে কাজ করে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরলস পরিশ্রমের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ অন্তত আরো ২০ বছর আগে উন্নত হয়ে যেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করার পর থেকেই দিন দিন দেশের উন্নতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হলে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও মাথা উঁচু করে চলতে পারবে এবং এই সুনাম অর্জন করতে পারাটাও আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ।
বাংলাদেশকে আর কেউ এখন অবহেলার চোখে দেখে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
সৌদি বাদশাহের সঙ্গে বৈঠক’সহ সৌদি আরব সফরের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই তাঁর লক্ষ্য থাকবে। এ সময় জেদ্দা চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (জেসিসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর বৈঠককেও প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সব সময়ই সন্ত্রাস ও দুনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা প্রতিরোধে তাঁর দেশ ইসলামী জোটে শরিক হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথাও এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্য সীমা থেকে বের হয়ে এসেছি এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমরা আরো অনেক এগিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে, জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪শ’ ৬৬ ডলার হয়েছে, দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সরকার বিভিন্ন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন মেনেই সেখানে বসবাসেরও আহবান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।