362
Published on মে 29, 2016রোববার (২৯ মে) টোকিওতে ওই ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠককালে তিনি বক্তৃতা করছিলেন। বৈঠকটি প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরকালীন আবাসস্থল মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলের লিন্ডেন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে যাওয়া বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। আমরা শতাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কিছু আইটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এরমধ্যে ৩৩টির কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করছি, আগামী চার বছরে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন আরও ১ কোটি মানুষ যুক্ত হবে।
জাপানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরীক্ষিত বন্ধু উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মনিষ্ঠার কারণে জাপানের বিনিয়োগকারীদের সবসময়ই সবার আগে জায়গা দিয়েছে আমাদের জনগণ। সেই বিবেচনা থেকে বলছি, আমাদের দরোজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত। আমি চাই বাংলাদেশের এই ঊর্ধ্বমুখী সুযোগ এবং তারুণ্যদ্দীপ্ত জনশক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করুক আমাদের জাপানি বন্ধুরা।
প্রধানমন্ত্রী এসময় তার সঙ্গে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের বৈঠকে আলাপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি ‘জাপানিজ রিভাইটালাইজেশন স্ট্র্যাটেজি’ ও ‘পার্টনারশিপ ফর কোয়ালিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের সঙ্গে কথা বলেছি। সেই বিবেচনায় বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান, উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা ও শিল্পায়ন পরিকল্পনা জাপানের রিভাইটালাইজেশন পরিকল্পনার সঙ্গে মিলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে দু’টি পাবলিক-প্রাইভেট অর্থনৈতিক সংলাপ এগিয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আরও সহজতর করার জন্য কাজ করছি। এখন এ বিষয়ে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ শুনবো আমি। আমরা আসলে কার্যকর ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।
বিনিয়োগে এগিয়ে এলে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা প্রণোদনা প্যাকেজ পাবেন। নিশ্চিত করা হবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও অন্যান্য সংযোগ-সুবিধা এবং কিছুক্ষেত্রে করও শিথিল করা হবে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কায় না থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার সরকারকে সকল জাপানি নাগরিক ও স্থাপনায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাপানি সমাজ এখন ‘রোবোটিক বিবর্তনে’ চলে যাচ্ছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক এমনই কিছু খাতে সহযোগিতা করতে পারে, যার মধ্যে ‘ইমাজিনেটিভ সফটওয়্যার’, ‘শেয়ারড/ক্লাউড-বেজড প্রসেসিং’র কথা উল্লেখ করা যায়।
তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণখাতেও আগ্রহী হতে পারেন। আমাদের সমুদ্র অর্থনীতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছে বিনিয়োগ সুযোগের বিশাল পরিধি। আপনারা নজর দিতে পারেন আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতেও।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সরকার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, জুট, মৎস্য আহরণ, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং খাত নিয়েও কাজ করছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে ‘সবুজ’ হতে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সঠিক বর্জ ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ বণ্টনের মতো নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেটানোর জন্য জাপান পা বাড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন।
জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আপনারা হয়তো সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছেন। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে।
এখানে আমাদের ব্যবসায়ীরাও আছেন। এবার আপনাদের পরামর্শ-মতামতের পালা বলে বক্তৃতা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এই সমঝোতা স্মারককে বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য প্রথম জাপানি স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের প্রাইভেট সেক্টরে নতুন নতুন বিনিয়োগের পথ খোঁজা যাবে।
বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও নেতা মোহাম্মদ হাবিব উল্ল্যাহ ডনসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং ‘জেটরো’র শীর্ষ নেতা ও জাপানের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা।