320
Published on মে 17, 2016মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এ অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নিজেদের হাতেও তো মানুষ পোড়ানোর গন্ধ, আন্দোলনের নামে শত শত মানুষের রক্ত জড়িয়েছে, লাশ ফেলেছে তারা।, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই সংখ্যালঘু হত্যা, তাদের মেয়েদের ধর্ষণ থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানো এগুলোই তো বিএনপি-জামাতের রাজনীতি।
তিনি বলেন, মানুষের রক্তে যাদের হাত সব সময়ই রঞ্জিত হয়, তারা তো আরেক রক্ত রঞ্জিত হাতের সঙ্গে হাত মেলাবেই। তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত ফিলিস্তিনের শান্তিকামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন ও সহমর্মিতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে এরা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে রাজনীতি করলেও এরা যে নিজেদের জন্যই শুধু রাজনীতি করে এটিই প্রমাণ দিয়েছে মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে।
সরকার উৎখাতে বিএনপির বহুমূখী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের চলমান উন্নয়নে সরকারের ভূমিকায় মানুষ সন্তুষ্ট, সুতরাং উন্নয়নমূখী জনগণের সামনে কোনো ষড়যন্ত্রই ঠিকবেনা। দেশের জনগণই সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে, সব ষড়যন্ত্রেরই বিচার হবে। আইন তার আপন গতিতে চলবে এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আইনের হাত থেকে দোষী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ষড়যন্ত্র করে, মানুষ হত্যা করে যে ক্ষমতায় যাওয়া যায়না এটি বুঝতে হবে খালেদা জিয়াকে। সরকার উৎখাতের হুঙ্কারতো অনেক দিয়েছেন তিনি, কি লাভ হলো। লাভের লাভ এখন লেজ গুটিয়ে ঘরে উঠে বসেছেন, আদালতে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি শুধু নিজে পাওয়ার জন্যে নয়, রাজনীতি জনগণকে দেওয়ার জন্যে, আমরা এটিতে বিশ্বাস করি বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রাজনীতিতে জনগণ আমাদের সহযোদ্ধা। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
মানুষ পোড়ানো আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামাত এখন গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে এমন অভিযোগও করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে তারা শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, বিদেশি নাগরিক, ব্লগার, শিক্ষাবিদ একের পর এক গুপ্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।
সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই জুলহাজ হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকান অ্যাম্বেসির সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজকে হত্যা করে ওরা বিশ্বব্যাপী একটি আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আসলে, একাত্তরের ঘাতকদের সেই গণহত্যার ধারাবাহিকতায়ই বিএনপি-জামাতের রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে।
৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্বাসনে পাঠিয়েছিলো এই শক্তিই এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান প্রেমিদের কব্জায় ছিলো মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। ৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে সেই কব্জা থেকে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনার যে সংগ্রাম শুরু করেছিলাম তাও আজও করতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু সেটি শেষ করে যেতে পারেননি। আমরা সেই কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি বলেই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনকারী দল বিএনপি আজ মরণ কামড় দিতে চায়। কিন্তু তারা হয়তো জানেনা বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকি প্রেমিদের মুখোশ এখন উন্মোচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, রায় কার্যকরও হচ্ছে এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের গাড়িতে যারা রক্তে অর্জিত আমাদের পতাকা তুলে দিয়েছিলো তাদেরও বিচার হবে বাংলার মাটিতে। কারণ অন্যায় যে করে আর অন্যায়কে যারা প্রশ্রয় দেয় তারা সমান অপরাধী।
দেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছি আমরা আসন্ন বাজেট অধিবেশনে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট। উন্নয়নের পথে হাঠছে সারা দেশ এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে প্রায় ১২৩ ভাগ। আমাদের জিডিপি এখন ৭.০৫ শতাংশ, ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক রিজার্ভ ফান্ড, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, দারিদ্র্যের সংখ্যা আমরা নামিয়ে এনেছি ২২ শতাংশে । বয়ষ্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা ভাতা চালু করেছে সরকার।
প্রবাসীদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর তলা বিহীন ঝুড়ি নয়, উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বিজয়ী জাতি। একটি বিজয়ী জাতি দেশের কোনো রাজনৈতিক দল পরাজিতদের পদলেহন করবে জনগন এটা মেনে নেবে না। বিএনপি-জামাতকে একাত্তরের পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে জাতির যত ঘৃনা। পাকি প্রেম নিয়ে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাজনীতি করা যাবেনা।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, একই দিনে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে আমরা যখন এতিম, তখন প্রবাসীরাই প্রথম আমাদের পাশে দাড়িয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে অল ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল দাসগুপ্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সামসুদ্দিন খান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক নঈমুদ্দিন রিয়াজ মারুফ চৌধুরী ও আনোয়ারোজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।