411
Published on মে 16, 2016গত রবিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সিনেটভবনে অনুষ্ঠিত সংহতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে আমরা আগুনে হাত দিয়েছি, তাই হাত তো আমাদের পুড়বেই। এই পরাজিত শক্তি ছোবল দিয়ে রক্ত ঝরাবেই। তবে মাঠ পর্যায়ে আমাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাঁচতে হলে নিরপেক্ষ হয়ে বসে না থেকে ১৪ দলকে সঙ্গে নিয়ে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। এই সরকারের আমলেই শিক্ষক হত্যার তদন্ত শেষ করে বিচার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনারা কেন ভয় করবেন, আপনি সরকারের চাকরি করেন, জনগণ আপনাদের টাকা দেয়। সাহস করে এগুলো প্রতিবাদ করুন। প্রশাসনে যারা আছেন তারা দায়িত্ব পালন করেন। আমি জানি, আপনাদের সময় লাগবে। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ভুল লোককে ধরা যাবে না। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আসামিদের গ্রেফতার করবেন। খুনিদের বের করতেই হবে, কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। হত্যাকারীরা দ্রুত গ্রেফতার হবে এবং আর তা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই সম্ভব। এসময় তিনি নিহত শিক্ষকের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর রক্ত না শুকাতেই বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছে। তাই এই হত্যাকাণ্ডগুলোকে আঞ্চলিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। পাকিস্তানের কঠোর সমালোচনা করে বাদশা বলেন, নিজামীকে ফাঁসি দেয়ার জন্য যদি তারা জাতিসংঘে যেতে পারে, তবে তারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যে ৩০ লক্ষ মানুষকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার জন্য আমরাও জাতিসংঘে যেতে পারি।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে মতাদর্শের লড়াই চলছে; বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের লড়াই।
জাসদের নাজমুল হক প্রধান এমপি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ফুলের বাগান গড়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সে বাগানে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি চক্রান্ত চলছে।
সভায় নিহত শিক্ষকের কন্যা রিজওয়ানা হাসিন শতভী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকে বিচারের আশ্বাস পাচ্ছি। কিন্তু খুনিদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া কতদূর তার কিছুই আমাদের জানানো হচ্ছে না। খুনের পরিকল্পনাকারী থেকে শুরু করে যে আমার বাবার ঘাড়ে কোপটা মেরেছিল তাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো. শহীদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু’র সঞ্চালনায় সভায় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত্ হোসেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা অসিত বরণ রায়, তরিকত ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মোহাম্মদ আলী ফারুকী, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, জাসদের রাজশাহী মহানগর সভাপতি মজিবুল হক বকু, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এনামুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল আলম সোহান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভার শুরুতে অধ্যাপক রেজাউল করিম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এদিকে সংহতি ও মতবিনিময় সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ১৪ দলের নেতাকর্মী এবং রাবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ নিহতের পরিবারের সাথে সাক্ষাত্ করে। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।