349
Published on মে 4, 2016এছাড়াও দুটি দেশ অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, জনশক্তি রফতানি, সামরিক ও আইসিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছে। বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
সফররত কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ কুয়েতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বাংলাদেশী পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরআগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১৫ মিনিট সময়কাল একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। পরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, উষ্ণ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই দেশের সরকারপ্রধানের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুই দেশের সামগ্রিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, বৈঠকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদের প্রশ্নে তাদের জিরো টলারেন্স নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এবং সমগ্র মানবতার জন্যই বিরাট চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের সাথেও সাংঘর্ষিক।
এ বিষয়ে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন। এ ব্যাপারে বৈঠকে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়টি উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে জাতিসংঘ এবং ওআইসি’র নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে।
কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান এবং পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সিরিয়া এবং লিবিয়াতে সংকটের কারণে সৃষ্ট সমস্যাবলী সমাধানে একযোগে কাজ করার বিষয়েও দুই প্রধানমন্ত্রী একমত হন।
এছাড়া, দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় সমস্যা কবলিত দুটি দেশের সংকটে সৃষ্ট জনগণের ’ডিসপ্লেসমেন্ট’র বিষয়েও আলোচনা হয়। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান, তিনি যখন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সে সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
মুসলিম উম্মার ঐক্যের ব্যাপারে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী মুসলমানদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ও কুয়েত কিভাবে কাজ করতে পারে, তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সহযোগিতা, বাণিজ্যিক ব্যবধান হ্রাস, কুয়েতে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার মতো ছয়টি খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে আইটি ও শিল্পে বিনিয়োগের জন্য কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। জবাবে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ গ্রহণ করে বলেন, তাঁর সঙ্গে সেদেশের একটি বড় প্রতিনিধিদল রয়েছে এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে এফবিসিসিআই’র সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জ্বালানি খাতকে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জ্বালানি সম্পদে কুয়েতের ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকায় সেদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি অনুসন্ধানে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করে বলেন, বঙ্গোপসাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে দুদেশ যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
বিদ্যমান বাণিজ্যিক ব্যবধান আরো হ্রাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ বাণিজ্য কমিটি গঠন এবং কুয়েতে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটা মুক্ত প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দেন।
কুয়েতে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপারে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যায়ে আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব রয়েছে। কুয়েতে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশ শ্রমিক রয়েছে।
দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনগুলোতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ’৯০ দশকের গোড়ার দিকে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার হয়।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি অবকাঠামো খাত বিশেষ করে কেএফএইডি’ও স্থান পায়।এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. শহীদুল হক বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনায় একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং কুয়েতে জনশক্তি রফতানি ইস্যু নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করা হয়।
তিনি বলেন, কুয়েতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ সফরের সময় তিনি বাংলাদেশে একটি তেল শোষণাগার প্রতিষ্ঠায় কুয়েতের সহযোগিতা কামনা করেন। আজকের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে কুয়েতের দু’টি কারিগরি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আলোচনার সময় শেখ হাসিনা কুয়েতে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সেদেশের আমীরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। শেখ জাবেরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কুয়েত সফরের আমন্ত্রণ জানান।
আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
কুয়েতের পক্ষে ছিলেন সেদেশের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ্ আল-খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থ ও ভারপ্রাপ্ত তেলমন্ত্রী আনাছ খালেদ আল-সাবাহ, শিক্ষামন্ত্রী ড. বাদের হামাদ-আল-ইসা এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত খালেদ সোলায়মান আল-জারাল্লাহ।
পরে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভোজ সভায় যোগ দেন। শেখ জাবের আল-মোবারক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছান।