338
Published on এপ্রিল 2, 2016তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ গত সাত বছর ধরে একটি বহুমুখী ও বহুপাক্ষিক মডেল বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যেই লক্ষ্য অর্জনে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) আলোকে অটিজম মোকাবেলায় বিশ্ব কৌশল গ্রহণে বাংলাদেশের এই অনন্য মডেল অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি ১ এপ্রিল বিকেলে জাতিসংঘে ‘অটিজম মোকাবেলা : এসডিজি’র আলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কৌশল’ শীর্ষক এক হাই-লেভেল ইভেন্টে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে একথা বলেন।
অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে জাতিসংঘের দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র এবং অটিজম স্পিকস যৌথভাবে এ ইভেন্টের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এবং কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলিয়া আল-থানির সঞ্চালনায় এ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিসেস বান সুন-টেক, অটিজম স্পিকসের সুজানা রাইটস এবং ভারত, কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি ও ইকোসকের প্রতিনিধি বক্তৃতা করেন।
মূল প্রবন্ধের ওপর প্যানেল আলোচনায় ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধি বারনার ওবেরমেয়ের, জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. ডেভিড নাবাবরো, ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি ড. পলিন এবং উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মরিন ডারকিন অংশ নেন।
প্রত্যেক বক্তাই দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে বিশেষকরে বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার রক্ষায় অনন্য সাফল্য অর্জন করায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অটিজমসহ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী দেশ। বাংলাদেশ এর প্রটোকলও স্বাক্ষর করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা এবং বিশিষ্ট স্কুল মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে জাতীয় ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। ২০০১ সালে তাদের অধিকার রক্ষায় প্রথম আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টার্সফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন যুগোপযোগী করা হয়েছে। সেই বছরই অটিস্টিকসহ অন্যান্য মানসিক প্রতিবন্ধীর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যা নিশ্চিতে বাংলাদেশ জাতীয় নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার সংরক্ষণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, সরকারের প্রায় সবগুলো উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার নিয়মিত কর্মকাণ্ডে অটিজম আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের লেখাপড়ার জন্য অটিজম একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০১৬-২০২১ মেয়াদী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অটিজমকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সৃষ্টিশীল কর্মের বিকাশ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে অটিস্টিক শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম ব্যবহার করেন। তাদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পরে বিভিন্ন দেশের কয়েকজন অভিভাবক তাদের অটিস্টিক আক্রান্ত সন্তানদের প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের মডেল অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সকালে জাতিসংঘের উদ্বোধনী অধিবেশনেও সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অংশগ্রহণ করেন। এ অধিবেশনে বৈষম্য হ্রাস (এমডিজি১০) বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, অটিস্টিকদের অধিকার রক্ষা এবয় শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশে এখন ১৪টি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, এসব মন্ত্রণালয়ের সামাজিক সেবাকেন্দ্র, কম্যুনিটি হেলথ ক্লিনিক, স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো অটিস্টিক ও তাদের পরিবারদেরকে সেবা প্রদান করছে। তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠান তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজিয়েছে।এর ফলে এ কর্মযজ্ঞ এখন আর কেবল অস্টিটিক পরিবার ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নীতি-নির্ধারণ, সংসদ সদস্য, সরকারী কর্মকর্তা সকলেই এর অংশীদার হয়েছেন। নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন। অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘের এ অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতা উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকা- শুরু করেন।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ১ এপ্রিল জাতিসংঘে ব্যস্ততম সময় কাটান। এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে অংশ গ্রহণ ছাড়াও তিনি দুপুরে অটিজম নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।
তিনি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিসের প্রতিনিধি রেবেকা বাভিনজার ও কেলি লারসেনের সাথে আলেচনাকালে বাংলাদেশের অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর সার্বিক সেবাদান নিশ্চিতে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সহযোগিতা করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু মোকাবেলা ও তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করছে। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুদের একটি বড় অংশই অটিস্টিক। প্রতিনিধিরা এ লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন।