শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করা হবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

971

Published on ফেব্রুয়ারি 16, 2016
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চায় ভবিষ্যত প্রজন্মকে ব্যস্ত রাখা গেলে তারা আর বিপথে যাবেনা।’

তিনি দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা যাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার সযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৫ এর ফাইনাল ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির সংক্ষিপ্ত ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই দুটি টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনালে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩-১ গোলে রাজশাহীর খর্দ্দকৌড় প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মত এই শিরোপা জয় করে। প্রধানমন্ত্রী প্রমিলা ফুটবলের আকর্ষণীয় এই ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেন।

এর আগে দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। এতে কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার রাজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে লক্ষাধিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ লাখের অধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সমগ্র দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ের এই দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দল, দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রফি এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার বিতরণ করেন।

চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি ছাড়াও এক লাখ টাকার প্রাইজমানি এবং প্রতি খেলোয়াড়কে ১০ হাজার টাকার চেক ও মেডেল, রানার্স আপ দলকে ৭৫ হাজার টাকার প্রাইজমানি ও ট্রফি এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে ৫০ হাজার টাকার প্রাইজমানি প্রদান করা হয়।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শামসুন্নাহারকে সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে একই বিদ্যালয়ের রোজিনা আক্তারকে গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বলসহ ২৫ হাজার টাকার পৃথক পৃথক প্রাইজমানির চেক প্রদান করা হয়।

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার রাজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবিদ হাসান সেরা খেলোয়াড় এবং বীরগঞ্জের মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাব্বি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সর্ব্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাহাউদ্দিনসহ প্রধানমন্ত্রীর উপদেস্টা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সচিব, বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরের প্রধানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সুন্দর ক্রীড়া শৈলী প্রদর্শনের জন্য ফাইনালের দুটি দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এরা চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েছে। মনে হয়, বড়দেরও হার মানিয়ে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই যে খেলাধূলা শুরু হলো এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। তারা খেলাধূলায় বর্তমানে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ভাল করছে। আগামীতে তারা দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হবে।’

ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলগুলোতে খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তারা খেলাধুলায় আগ্রহী হলে বিপথে যাবে না। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে তারা সুস্থ মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে আগামীর নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ৬৩ হাজার ৫০৯টি দল এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল-২০১৫ তে ৬৩ হাজার ৪৩১ দল অংশ গ্রহণ করেছে। বিশ্বের আর কোথাও এত বৃহৎ আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় কি না তা আমার জানা নেই।

ক্রীড়া অন্তপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্টেডিয়ামে বসে চীনাবাদাম খেতে খেতে খেলা দেখার মজাটাই আলাদা।’

জমজমাট প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ম্যাচ তিনি চীনা বাদাম খেতে খেতেই উপভোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, স্টেডিয়ামে আসার পূর্বেও তিনি টিভি সেটে খেলা দেখছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলার মধ্যে থাকলে আগামীতে একটি সুন্দর প্রজন্ম গড়ে উঠবে, যেখানে আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কোন স্থান থাকবে না। খেলাধুলার মাধ্যমে মেধার সর্ব্বোচ্চ বিকাশ সাধন করে সোনার বাংলা গড়ার জন্য এই সোনার ছেলে-মেয়েরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার জন্য যে লড়াই শুরু হয় তাই ৫২’র ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকতদের রক্তে স্নাত হয়ে একাত্তরে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্বে বিজয়ী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা সবসময় মনে রাখবে আমরা বিজয়ী জাতি। চাইলে আমরা সবকিছুই করতে পারি।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত