1989
Published on ফেব্রুয়ারি 7, 2016বর্তমানে যেসব আন্ত:নগর ট্রেন চলাচল করছে সেগুলোর চেয়ে এ ট্রেনটি হবে আধুনিক মানের। ট্রেনটির সব বগিই থাকবে নতুন। এ ট্রেনের সিট, দরজা, জানালা ও টয়লেট কিছুটা চওড়া হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে জানালার গ্লাসগুলো অত্যাধুনিক মানের হবে।
রেলওয়ের প্রাথমিক পরিকল্পনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের নতুন ট্রেনটিকে বিলাস বহুল ও সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ট্রেনটির নাম চূড়ান্ত হয়নি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের অধিকাংশ রুট ডাবল লাইন হয়ে গেছে, এ অবস্থায় নতুন ট্রেন চালু করতে সমস্যা নেই।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলছে মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধুলী, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তুর্ণা নিশিথা। প্রতিদিন আটবার আসা-যাওয়া করছে এসব আন্ত:নগর ট্রেন। এরসঙ্গে চলতি বছর নতুন যুক্ত হচ্ছে আরেকটি আন্ত:নগর ট্রেন।
রেল ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রেন ছাড়াও আগামী বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ১৫টি কোচের একটি নতুন ট্রেন, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে ১৫ কোচের একটি আন্ত:নগর ট্রেন এবং চট্টগ্রাম-দিনাজপুর রুটে একটি নতুন ট্রেন (দুই রেক বিশিষ্ট) চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। তবে এসব সিদ্ধান্ত এখন কেবল প্রাথমিক পরিকল্পনাতেই আছে। নতুন ২৭০টি বগি বাংলাদেশ রেলওয়ে পেলে নতুন এসব ট্রেনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে মোট ২৭০টি যাত্রীবাহী নতুন কোচ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এসব বগি আসা শুরু হবে। এ বছরের মধ্যেই দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ১২০টি ভারত থেকে এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে ১৫০টি কোচ বাংলাদেশে আসবে। নতুন এসব কোচকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙে দেখা যাবে। এসব কোচ থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের জন্য পৃথক একটি ট্রেন করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে ২৭০টি কোচ আসবে দেশে। এসব কোচ আমরা বিভিন্ন আন্ত:নগর ট্রেনে যুক্ত করবো। এরপর নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটি আন্ত:নগর ট্রেন নামানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা আছে। সব বগি পেলে বিভিন্ন রুটে আরও নতুন ট্রেনও নামানো যাবে।
রেলওয়ের ডিজি বলেন, বিভিন্ন ট্রেনেই বগির সমস্যা। অনেক ট্রেনে পুরাতন বগি। এগুলোর জায়গায় আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে পুরাতন বগির পরিবর্তে আমরা নতুন বগি যোগ করবো। ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে যেসব বগি আসবে এগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ট্রেনে দেয়ার পর নতুন ট্রেনে বগি যুক্ত হবে।
রেলওয়ের বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালের পর থেকেই কম বগি বা কোচ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রেলওয়ে। এ অবস্থায় ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ ২০টি নতুন বগি আনা হয়। গত ২০ বছরে নতুন করে কোনো বগি আনতে পারেনি রেলওয়ে।
রেলওয়ে থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ১৯৭২ সালের ১ হাজার ২৪৭টি যাত্রীবাহী কোচ ছিল রেলওয়েতে, বর্তমানে রয়েছে ১ হাজার ৪৯০টি- যার মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের ৭০৫টি। এ হিসেবে ৪৪ বছরে কোচ বেড়েছে মাত্র ২৪৩টি। একই সময়ে যাত্রী পরিবহন প্রায় সাতগুণ উন্নীত হলেও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ানো হয়নি কোচ কিংবা ইঞ্জিন।
পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে যেসব আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে, সেসব ট্রেনের পুরাতন, মেয়াদ উত্তীর্ণ বগি বদলিয়ে নতুন বগি লাগানো হবে। এতে ট্রেনের গতি আরও বাড়বে। বাড়বে যাত্রী সেবাও।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১৫০টি কোচ কেনার চুক্তি হয় ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর। ৭২ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারে কেনা হয়েছে এসব কোচ- যার মধ্যে ১০০টি মিটার গেজ এবং ৫০টি ব্রড গেজ কোচ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কেনা কোচগুলো চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে যাবে। এ কোচগুলো এডিবির অর্থায়নে কেনা হয়েছে। ভারতীয় অর্থায়নের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) কেনা ১২০টি ব্রড গেজ কোচ কেনার চুক্তি হয় গত বছরের ২১ জানুয়ারি। ৭৯ মিলিয়ন ইউএস ডলারে কেনা এসব বগি দর্শনা সীমান্ত হয়ে সৈয়দপুর কারখানায় পৌঁছুবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন কোচ ও ইঞ্জিনের অভাবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন আসা এসব বগি দিয়ে নতুন ট্রেন চালানোসহ পুরাতন বগি পরিবর্তন করা হলে অতিরিক্ত যাত্রী যেমন বহন সম্ভব হবে, তেমনি যাত্রী সেবার সঙ্গে বাড়বে রেলের আয়ও।