498
Published on ডিসেম্বর 20, 2015তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঘটে যাওয়া বিদ্রোহ এই বাহিনীর ২০০ বছরের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। একটি আধুনিক ও সময় উপযোগী সীমান্ত রক্ষী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রোববার এখানে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০১৫ উপলক্ষে বিজিবি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি’র অপারেশনাল কার্যক্রমকে বেগবান ও গতিশীল করার লক্ষ্যে আমি ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি এই বাহিনীর পতাকা উত্তোলন করেছিলাম।
তিনি বলেন, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিজিবি এখন কলঙ্কমুক্ত এবং একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাহিনীর সকল সদস্যের কঠোর পরিশ্রমে বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যে কোন জরুরি পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ড এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে এই বাহিনী পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সফল ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দফতরে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান।
এ উপলক্ষে বিজিবি সদর দফতরে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ সদস্যবর্গ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিকবর্গ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সাহসিকতা, উৎকর্ষমূলক অবদানের জন্য ১০ জন বিজিবি সদস্যকে বিজিবি পদক (বিজিবিএম), ২০ জন বিজিবি সদস্যকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জন বিজিবি সদস্যকে বিজিবি মেডাল-সার্ভিস (বিজিবিএমএস) এবং ২০ জন বিজিবি সদস্যকে পিবিজিএমএস-সার্ভিস (পিবিজিএমএস) প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও ও খাগড়াছড়িতে বিজিবি’র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নবনির্মিত হাসপাতালগুলো উদ্বোধন করেন।
তিনি সীমান্ত ব্যাংকের লোগো অবমুক্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ সময় বিজিবি মহাপরিচালকের হাতে সীমান্ত ব্যাংকের অনুমতিপত্র হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় ‘ট্রিক ড্রিল’ ও ‘ডগস ড্রিল’ প্রত্যক্ষ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিজিবি দরবার হলে ভাষণ দেন।
ভারতের সঙ্গে এলবিএ’র সফল বাস্তবায়ন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি তার সরকারের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সাফল্য এবং এতে সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ’৭২ সালে দেশে ফেরার পর বিদেশী এক সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সীমান্ত এলাকাকে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, জাতির জনকের সেই প্রত্যাশার কথা স্মরণ রেখে আপনারা সবসময় দেশপ্রেম ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে এই বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিকে বাহিনীকে তথ্য ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আইসিটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার পিলখানায় ১০ তলা বিশিষ্ট মার্কেট (বিজিবি সীমান্ত সম্ভার) এবং ৬ তলা বিশিষ্ট বিজিবি কল্যাণ ট্রাষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ১৫টি ‘সাইক্লোন শেল্টার’ টাইপ বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিওপিগুলোর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সোলার প্যানেল স্থাপন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’বিজিবিতে কর্মরত অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক ও অসামরিক কর্মচারীদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য বিজিটিসিএন্ডএস, রিজিয়ন, সেক্টর ও বিএসবি এর ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজিবি’র গৌরবজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, এই বাহিনী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর এর বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেস যোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী এবং আরো ৩ সদস্যকে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।’
তিনি বলেন, এ বাহিনীর ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফসহ ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন। এ বাহিনীর ৮শ’ ১৭ জন সদস্য শাহাদাত বরণ করেন।
তিনি তাঁদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে দায়িত্বে পালনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজিবি সদস্যরা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশী সফলতা দেখিয়েছেন। ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার এবং সীমান্ত অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিএসএফ এর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে।
এছাড়া কোন কারণে বিএসএফ এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক আটক হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিএসএফ এর সাথে যোগাযোগ করে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি’র অপারেশনাল কার্যক্রমকে বেগবান ও গতিশীল করতে বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৪ টি রিজিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এই বাহিনীকে আরো গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। ৪টি নতুন সেক্টর ও ৪টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন অনুমোদিত ১৫টি ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৩টি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট ২টি ব্যাটালিয়ন আগামী অর্থ বছরে স্থাপন করা হবে।
বিজিবিতে ২০০৯ সালের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পর থেকে এযাবত ২২ হাজারের অধিক লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি’তে এ বছরই প্রথমবারের মতো ১শ’ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিজিবি’র অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি’র নিজস্ব এয়ার উইং সৃজনের কাজ পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে এবং বিজিবি সদস্যদের সার্ভিস রেকর্ড কম্পিউটারাইজেশন, অভ্যন্তরীণ দাপ্তরিক কাজে নিজস্ব ই-মেইল ব্যবস্থা, ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা চালু এবং আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পাবর্ত্য এলাকায় রেডিও লিংক স্থাপনসহ ২৫২টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এন্টেনা স্থাপন করা হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহের স্মৃতিচারন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকা-ের মতো ন্যাক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাকে মোকাবেলা করতে হয়।’
তিনি বলেন, ’আপনাদের সম্মিলিত সহযোগিতায় সেদিনের সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। সেদিনের ঘটনায় যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি,তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।