অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ উন্নয়নের এক বিস্ময় হিসেবে আবির্ভুত হবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

339

Published on নভেম্বর 15, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। তাঁর সরকার দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে জনগণের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এজন্য বর্তমান সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এ অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে পেলে আমরা আনন্দিত হব।’

তিনি রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫’র উদ্বোধনকালে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিদের সাথে পেলে আমরা আনন্দিত হব। সুন্দর এ পৃথিবীকে দারিদ্র্য ও বঞ্চনার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে আমাদের সকলের ঐক্য ও যৌথ প্রচেষ্টা একান্ত আবশ্যক।

শেখ হাসিনা বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার মতো সব উপায় ও উপকরণ এদেশের রয়েছে- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে তাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

উন্নয়ন সহযোগীদের প্লাটফরম হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম ২০০৫ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের কৌশল, সংস্কার ও অগ্রাধিকার নিয়ে মতবিনিময়ের পাশাপাশি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পন্থা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে এই ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট জিং লিকুন, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনকেই ঝাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল কিংগো টয়োডা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

এতে ইউএসএইড বাংলাদেশের প্রধান স্থানীয় কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) কো-চেয়ার জানিনা জারুজেলস্কি এবং ইআরডি’র সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম বা বিডিএফ ২০১৫ আগামীদিনের দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে বাংলাদেশ টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।

রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর রূপকল্প-২০২১ এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার সম্প্রতি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মত এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করতে চায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ফোরাম এসডিজি বিষয় আলোকপাত করবে এবং সরকারকে বাস্তবমুখী ও কার্যকর সুপারিশ প্রদান করবে।

তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রথাগত আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা যাতে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সার্বিক বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো মনোযোগী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, বাজেট ঘাটতি হ্রাস, আমদানি ও রফতানির উচ্চ প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সন্তোষজনক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমাদের সরকারের নীতি ও কর্মসূচি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আরো সম্পদের প্রয়োজন। এজন্য আরো সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন, এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে নৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা এখন অত্যন্ত জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক ও স্থলসীমানা বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিস্পত্তি করতে তাঁর সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ পারস্পরিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুষম ও পারস্পরিক উন্নয়নে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সার্ক, বিমসটেক ও বিসিআইএম-ইসি’র মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুবিধার্থে এ অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ ও কারিগরি খাতে পারস্পরিক আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে।

দু’দিনের এই উন্নয়ন ফোরামের মূলতঃ ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ এই পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজের সংগঠন, বুদ্ধিজীবী মহল ও বেসরকারি খাতে সহায়তা চাইবে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত