367
Published on নভেম্বর 13, 2015শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচি সফল করতে চিকিৎসকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের তৃণমূলের জনগণের বিশেষ করে অতি দরিদ্র লোকদের স্বাস্থ্যসেবা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা একটি মহৎ পেশায় নিয়োজিত। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর কাছে একজন চিকিৎসকের আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের কাছ থেকে ভালো আচরণ পেলে কোনো রোগী দ্রুত সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আস্থা পায়।
প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে মনোযোগী হতে চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। এ জন্য ডাক্তারদের দায়িত্বশীল হতে হবে যাতে অতি দরিদ্ররা তাদের উত্তম সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. রুহুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আরসালান মহাসচিবের রিপোর্ট পেশ করেন। পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
স্বাচিপ প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম মনিরুজ্জামান ভুইয়া ও অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এবং মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে চিকিৎসকদের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বিশিষ্ট চিকিৎসক দেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন। চিকিৎসকরা সবসময়েই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরো ভাগে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা ফোরামকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বাচিপ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চিকিৎসকদের এই ঐক্য জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়ক হবে।
দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবহার উন্নয়ন এবং চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞান আরো বিস্তৃতি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গবেষণা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নে দেশে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এ ছাড়াও গবেষণার সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরো দুটি পৃথক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দক্ষ মেডিকেল পার্সন ও নার্স তৈরি করতে বিশেষায়িত মেডিকেল হাসপাতাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে এর নিজস্ব আয়ে পরিচালনায় সহায়তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অর্থের অভাবে বা ২০০১ সালের বিএনপি সরকারের মতো অসৎ উদ্দেশ্যে এগুলো বন্ধ করতে না পারে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। এর পাশাপাশি এখন মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি এবং যারা ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণের উন্নয়নে কিছুই করেনি, তারা এখন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাচ্ছে ও দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ সাল থেকে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গুপ্তহত্যার সূচনা করেছে এবং দেশের মানুষ হত্যা করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়ে এখন বিদেশী মানুষকে হত্যা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ও জামায়াত দেশের ভাবমূর্তি ম্লান করতে এমন একসময়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় ভিত্তির ওপর এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নৃশংস হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং সমৃদ্ধির পথে আগামী দিনে তাঁর এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
আর কেউ বাংলাদেশকে পেছনে টেনে রাখতে পারবে না- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে ওঠে জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।