যেকোন দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে ফায়ার সার্ভিসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবান

366

Published on নভেম্বর 11, 2015
  • Details Image

তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের মাঝেও আমাদের সরকার ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট। আমার বিশ্বাস- সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে আপনারা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাবেন।

বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০১৫ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার ফাইটারদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে তাঁর সরকার প্রশিক্ষণের আয়োজন সম্পন্ন করেছে।

তিনি বলেন, আমি আশা করি, যেকোন দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় আপনারা বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়াবেন। এটি আপনাদের পরম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।

মন্ত্রীবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিক এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের মনোমুগ্ধকর মহড়া প্রত্যক্ষ করেন। তিনি এ সময় অগ্নিনির্বাপণ, ভূমিকম্প, ডুবে যাওয়া ও দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতার কসরত প্রত্যক্ষ করেন।

শেখ হাসিনা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যদের মাঝে ‘রাষ্ট্রীয় পদক’ হস্তান্তর করেন।

প্রধানমন্ত্রী শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে দেশ গঠনে কাজ করতে ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, পেশা ও পদবী যা হোক না কেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে যে এটা কেবল চাকরি ও দায়িত্ব নয়। এ দেশ সবার। এজন্য দেশ গঠন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আপনাদের আত্মনিযোগ করতে হবে।

শেখ হাসিনা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সাথে কাজ করে জনগণের আস্থার স্থানে অধিষ্ঠিত হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এ বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানের সরঞ্জামে সজ্জিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভন্ডুল করতে এই নির্বাচনের আগে ও পরে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের উল্লেখ করে বলেন, ওই দুই দলের সন্ত্রাসীরা সে সময় প্রায় ৩৫০ জন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং ১৫শ’য়ের অধিক যানবাহন ধ্বংস ও জ্বালিয়েছে।

তিনি বলেন, সে সময় অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সময়ে দেশে অনেক বড় বড় অগ্নি, নৌ ও সড়ক দুর্ঘটনা, ভূমিধস এবং ভবনধসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অত্যন্ত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। রানা প্লাজা ভবন ধস; নিমতলী, তাজরীন ফ্যাশনসহ বসুন্ধরা শপিং মলের অগ্নিকা-ে তাদের সফলতার স্বাক্ষর রয়েছে। এ সব দুর্ঘটনায় সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সকল আইন-শৃংক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।

বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ২শ’ কোটি টাকার সর্বাধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং আরও যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের অগ্নিকান্ড বা ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে চিন্তা করা হযনি।

প্রধানমন্ত্রী গত বছর তাঁর চীন সফরকালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় অনুদান হিসেবে ৫০টি এম্বুলেন্স, ১শ’টি টোয়িং ভেহিকেল (পাম্প টানা গাড়ী), ১৫০টি ফায়ার ফাইটিং মোটর সাইকেল, ১টি বড় পানিবাহী গাড়ী, ১টি ফোমের গাড়ি এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় অন্যান্য উদ্ধার যন্ত্রপাতি দেয়াায় চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সুসজ্জিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শি পদক্ষেপের পর ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার এ জরুরি সেবাখাতের মানোন্নয়নে আবারও জরুরি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে এ প্রতিষ্ঠানটি আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে। জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার মাত্র ২ মাসের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানকে আবার ঢেলে সাজাই। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ন্যূনতম একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেই। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১শ’টি নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ও চালু হয়েছে। দেশব্যাপী ২৯৮টি ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং আরও ২৫১টি ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, ৪টি প্রকল্পের আওতায় এসকল ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৬ সাল নাগাদ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ শেষ হবে। প্রকল্পগুলি শেষ হলে দেশে মোট ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা হবে ৫৪৯টি এবং বর্তমানের ৮ হাজার ৩৫৪ জন জনবল বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৫ হাজারে উন্নীত হবে। এরফলে দেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে আমার বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ করে বিধ্বস্ত ভবনে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় ৫টি আন্তর্জাতিক মানের আরবান সার্চ এন্ড রেসকিউ টিম গড়ে তুলেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেশে ও বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি সহায়ক শক্তি হিসেবে সারাদেশে ৬২ হাজার কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ভলান্টিয়ারের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। যারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরসহ শিল্পখাতে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কর্মীকে অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পরিদর্শন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি ২১৮টি ইন্সপেক্টর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

তিনি অগ্নিনিরাপত্তা ও অন্যান্য দুর্যোগ সম্পর্কে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ জন্য তাঁর সরকার উদ্যোগ নেবে। কারণ শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

তিনি সমুদ্র সীমানায় বাংলাদেশের বিজয়ের কথা উল্লেখ করে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বে ওযাচের মতো একটি গ্রুপ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত