342
Published on নভেম্বর 8, 2015তিনি বলেন, এটা করে তারা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সংঘাত কবলিত অন্যান্য মুসলিম দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চায়। এক্ষেত্রে আমাদের স্বীকারোক্তি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও তাদের হামলার পথ সহজ করে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
গত ৩ থেকে ৫ নভেম্বর নেদারল্যান্ডে তাঁর তিনদিনের সরকারি সফর সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন মহল এ দেশেও সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে বাংলাদেশে আইএস’র উপস্থিতির কথা স্বীকার করাতে আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে। তিনি কোন দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, তারা ওইসব দেশের মতো আমাদের দেশকেও বিপর্যযকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চায় এবং এটাই হচ্ছে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ।
'বাংলাদেশে আইএস রয়েছে-এটা যদি তারা আমাদের কাছ থেকে স্বীকার করিয়ে নিতে পারে, তাহলে আমাদের দেশের অবস্থা কি হবে', এ প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক অথবা সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি চাই না।
আন্তর্জাতিক চক্রগুলো এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এবং দুর্ভাগ্যজনক যে স্থানীয় কিছু মানুষও এর সঙ্গে যুক্ত। এ ব্যাপারে সতর্ক না হলে জাতি হিসেবে আমাদের ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে হবে, উল্লেখ করে তিনি এ তৎপরতা সম্পর্কে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা চাই না কেউ আমাদের ভূমি ব্যবহার করুক বা এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটাক।
শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গি রয়েছে, এ তথ্যের স্বীকৃতি দিতে তাঁর সরকার উপর ব্যাপক চাপে রয়েছে, তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট। কারণ সম্প্রতি বিদেশী হত্যা, ব্লগার হত্যা ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার পেছনে কারা রয়েছে তা আমরা জানি। আমাদের সমাজে আমরা প্রত্যেকে একে অপরকে জানি ও চিনি, কেউই অপরিচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে অনেক ঘটনা ঘটছে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে থাকতে চায়। এক সময় এখানে জঙ্গিরা মাথা চাড়া দিয়েছিল, আমরা জনগণের সহায়তায় তাদের শক্ত হাতে দমন করেছি।
শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বলেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড, অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা হামলা ও হত্যার মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই হচ্ছে একটি বিশেষ গ্রুপের। ছাত্র জীবনে তারা ইসলামী ছাত্রশিবির অথবা বিএনপি’র রাজনীতি করতো। তারা এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত। এসব ঘটনায় আমরা বাইরের সম্পৃক্ততা দেখছি না।
দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণ শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে এ সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান যড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ও জীবনযাত্রার মান বাড়ছে, সে সময় তারা নিরাপত্তাহীনতার ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে যে, একদল অর্থ সরবরাহ করছে, অপর গ্রুপ হত্যা এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকার এ সব ঘটনার অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং আরো সংগ্রহের চেষ্টা করছে। অপরাধীরা ডিজিটালাইজেশনের ত্রুটির সুযোগ নিচ্ছে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারা এর পেছনে রয়েছে, সরকার ওইসব অপরাধীর লিংক খুঁজছে।
বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা সম্পর্কে কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্রের দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে বহু বাংলাদেশী নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কেউই এ ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করে না, কেন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলো তাদের জন্য অনিরাপদ।
তিনি বলেন, যদিও সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু এগুলো সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠা করা যায়, বাংলাদেশ বিদেশীদের জন্য নিরাপদ নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ খুবই জনবহুল একটি ছোট দেশ, যেখানে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যান্য দেশের চেয়ে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেশি নয়। যদি তুলনা করা হয় তাহলে আপনারা দেখবেন বাংলাদেশ ওইসব দেশের চেয়ে নিরাপদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কযেকটি দেশ একটি সমস্যা সৃষ্টি করতে চায় যাতে তারা বাংলাদেশে যে কোন সময় অনধিকার প্রবেশ করতে এবং ইসলামি জঙ্গীদের দমনের নামে যে কোন সময় অভিযান চালাতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এ কথা অকপটে বলতে পারি কেননা, আমি আমার দেশকে ভালোবাসি এবং দেশের জন্য আমি আত্মনিবেদিত।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কোন সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যখন জাতীয় ঐকমত্যের সুযোগ এসেছিল তখন তিনি (খালেদা জিয়া) সেই সুযোগ হারিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি বা রাজনৈতিক সংকট নেই, যার জন্য একজন খুনির সাথে সরকারের আলোচনায় বসা প্রয়োজন।
জাতীয় সংলাপের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা ও নির্বাচন ঘোষণার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া হত্যা ও নাশকতা মূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অতীতের সকল বাজে অভিজ্ঞতা উপেক্ষা করে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তিনি রাজনীতি ও দেশের স্বার্থে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়া বারংবার তাঁকে অবজ্ঞা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যোগদানের পরিবর্তে নির্বিচারে নিরাপরাধ মানুষ হত্যার পথ বেছে নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অতএব, মানুষ পোড়ানোর রেকর্ড আছে এমন কোনো লোকের সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো আগ্রহ আমার নেই।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম সমর্থন করলে এবং চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি খালেদা জিয়ার সমর্থন থাকলেই সরকার বিএনপি'র সাথে সংলাপের কথা চিন্তা করতে পারে।
তবে তাঁর সরকার দুটি শর্তে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কথা চিন্তা করতে পারে। প্রথমত, সংলাপের আগে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই আগুন ও পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত লোকদের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে এবং যেসব লোকেরা আগুনে পুড়ে বা অন্যভাবে আহত হয়ে ভুগছেন তাদের আরোগ্য লাভের ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাকে অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম সমর্থন করতে হবে এবং চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি তার সমর্থন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে কেউ যেনো তাঁর সঙ্গে কোনো সংলাপে বসার অনুরোধ না করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে যথাসম্ভব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং যে কোনো ঘটনার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে নিরলস সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অপরাধ কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং কারা একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং কারা সাংবাদিক, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যা করতে চায় সে বিষয়ে জনগণকে জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি অপরাধীদের অবস্থান ও আস্তানা চিনিয়ে দিতে সাংবাদিক ও দেশবাসীর সহযোগিতাও কামনা করেন।
শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে বলেন, তাঁর সরকার ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাঁর সরকার জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু তাঁর সরকার কখনোই জনগণের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করে এমন কোনো লেখককে কখনোই সমর্থন করে না। কোন ধর্মে বিশ্বাসী লোকদের সেটি মেনেই আঘাত না করার আহবান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজ ধর্মে তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে এবং অনুরূপ প্রতিটি ধর্মের প্রতি রয়েছে তার শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ লোকদের একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নৈতিকতা থাকা আবশ্যক।
তিনি উগ্র মৌলবাদীদের দ্বারা সংঘটিত কোনো নির্মম ঘটনার পর জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টি না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান। দুষ্কৃতকারীদের লক্ষ্য হচ্ছে, জনমনে ভীতি ছড়ানো। সুতরাং সাংবাদিকদের তাদের অশুভ উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের এমন কিছু লেখা উচিত হবে না যা পরিস্থিতিকে খারাপ করতে পারে। বরং সাংবাদিকদের দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করা ও তাদের গ্রেফতারে সরকারকে সহায়তা করা প্রয়োজন।