501
Published on নভেম্বর 2, 2015শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে সাধারণ লোকজন প্রতিরোধ করতে এগিয়ে এসেছিল বলে বোমা হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীরা যেমন সফল হতে পারেনি, তেমনি গুপ্ত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে এখন সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেল হত্যা দিবস পালন উপলক্ষে আজ বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে দেশের জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক গুপ্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের কয়েকজন আটক হয়েছে। এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নেপথ্যে তাদের মূল পরিকল্পনাকারী ও বড়ভাইদের সাথে বাকি খুনিদেরও আটক করা হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমীর হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম. এ. আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক ঘটনা ও গুপ্ত হত্যাকান্ডের জন্য বিএনপি এবং তাদের শরীকদের দায়ী করে বলেন, বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া সবসময় তার স্বামী সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের মতো হত্যার রাজনীতি করেছেন। তিনি দেশে এখন হত্যার রাজত্ব কায়েম করতে চান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সকল হত্যাকান্ড যুদ্ধাপরাধের বিচার ভন্ডুল করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা যুদ্ধাপরাধীদের এবং ১৯৭১ সালের খুনীদের রক্ষা করতে দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত দেশের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে না। তারা দেশকে ধ্বংস এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায়। তারা বাংলাদেশের জনগণকে দরিদ্র্য, অশিক্ষিত, নিরক্ষর রাখতে চায় এবং তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদেরকে দাবায়া রাখতে পারেনি। কোন ষড়যন্ত্র ও গুপ্ত হত্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণের প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অদম্য এবং কোন ষড়যন্ত্রের কাছে তারা মাথানত করবে না। প্রধানমন্ত্রী তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করতে জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।
বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের অংশ হিসেবেই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চার জাতীয় নেতাকেও বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মোশতাক ও জিয়া বাংলাদেশকে খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেন।
তিনি বলেন, জিয়া খুনীদের বিচার না করে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চাকরি দেয়াসহ বিভিন্নভাবে তাদের পুরস্কৃত করেছেন। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান হাজার হাজার যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেন। বঙ্গবন্ধু সরকার এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।
তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমান সামরিক আইনে অধ্যাদেশ জারি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন। সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে তাদেরকে রাজনীতি করার এবং ৩৮নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনগণ যখন একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, তখনই বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জনগণের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাকে ধূলিস্যাৎ করে দেয়া হয়। ফলে ২১ বছর বাংলাদেশের জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে থাকতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, দেশ তখন এগিয়ে যায়। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি থেমে যায়। বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছর শাসনামলে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিস্তার লাভ করে। দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত বর্তমান উন্নয়নের ধারা থেকে দেশকে বিচ্যুত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর দেশ। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। এটি সম্ভব হয়েছে দেশে টেকসই গণতন্ত্র থাকায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর কুখ্যাতি পেতে চায় না।