বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যভিত্তিক পর্যটন বিকাশে সকলকে একযোগে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

395

Published on অক্টোবর 27, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সম্মেলনের প্রতিনিধিরা এ অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে একটি রোডম্যাপ প্রস্তুতি করতে সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে তারা এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবেন।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে তিনি তাঁর দৃঢ় আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি এ সফরে বাংলাদেশকে আপনারা যেমন দেখলেন তা পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরেন।’
জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডাব্লিউটিও) সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ‘ডেভলপিং সাস্টেইনএ্যাবল এ্যান্ড ইনক্লুসিভ বুদ্ধিষ্ট হেরিটেজ এ্যান্ড প্রিলিগ্রিমজ সার্কিট ইন সাউথ এশিয়ান বুদ্ধিষ্ট থাইল্যান্ড’ শীর্ষক দু’দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

বিশ্বে সুপরিচিত বুদ্ধিষ্ট ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ এবং দেশীয় ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার পর দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই ও সমন্বিত আন্তঃসীমান্ত বুদ্ধিষ্ট ট্যুরিজম সার্কিট ও রুটের উন্নয়ন এবং মার্কেটিং পরিকল্পনার জন্য বাস্তবভিত্তিক রোডম্যাপ তৈরিই এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।

এই সম্মেলন বুদ্ধিষ্টদের সঙ্গে আঞ্চলিক দেশগুলোর ট্যুরিজম পরিচালনাকারীদের বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত ও শ্রীলংকার ট্যুরিজম পরিচালনাকারীদের মধ্যে একটি প্লাটফরম গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক খান ও ইউএনডব্লিউটিও মহাসচিব ড. তালেব রিফাই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

মন্ত্রীবৃন্দ, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক বাংলাদেশসহ বৌদ্ধ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ১৩টি দেশ- চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভুটান, নেপাল, ভারত ও শ্রীলংকার পর্যটন মন্ত্রীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনার এক দেশ। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা, হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়। বিশ্ব মানচিত্রে একটি নতুন পর্যটন গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার জন্য এদেশে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপদানই রয়েছে।

তিনি বলেন, এদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষ্টি, সভ্যতা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের অতিথিপরায়ণতা বিশ্বের যেকোন পর্যটককে আকৃষ্ট করে। আমার কাছে গোটা দেশই যেন এক বিশাল পর্যটন ভূমি। ষড়ঋতুর সম্ভারে নানারকম বৈচিত্র, সমতল ভূমি, হাওর-বাওড়, পাহাড়, টিলা আর ছায়া সুনিবিড় গ্রামগুলো নান্দনিক উৎকর্ষে যে কারো হৃদয় কাড়ে।

শেখ হাসিনা পর্যটন শিল্পের বিকাশে তাঁর সরকারের নেয়া পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, এ খাত সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবারো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এজন্য তিনি সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেয়ার জন্য বর্তমান প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রেক্ষাপটেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার জাতীয় পর্যটন নীতিমালা-২০১০ ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, পর্যটন আইন, ২০১০-এর মাধ্যমে জাতীয় পর্যটন সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতের শুল্কহার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস এবং মানসম্পন্ন হোটেলের জন্য বিনা শুল্কে ইকুয়েপমেন্ট ও একসেসরিজ আমদানির সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ সঙ্গে ৬০টিরও অধিক দেশের জন্য অন-এ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা প্রবর্তনের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটন চালু করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে কক্সবাজার জেলার সাবরাং-এ ১০২৮ একর জমির উপর বিশেষ পর্যটন অঞ্চল (ইটিজেড) গড়ে তোলার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইটিজেড নির্মাণে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণেরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীন নৌ-পর্যটনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক নৌ-পর্যটনে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করতে ভারতের সাথে নৌ-প্রটোকলে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রুজেও বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পর্যটকসহ যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সম্প্রতি বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) ‘মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট’ (এমভিএ) চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বলেন, এরফলে আন্তঃদেশীয় পর্যটকদের গমনাগমন বৃদ্ধি পাবে এবং এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকশিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের প্রচার ও বিপণন কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ বা ভিজিট বাংলাদেশ ইয়ার-২০১৬ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি এই শিল্পের প্রচার ও বিপণনের ওপরও সমধিক গুরুত্ব দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণগুলোকে তুলে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যটন পণ্য ও সেবাসমূহের প্রচার ও বিপণন এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কাজ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইউএনডাব্লিউটিও এবং প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশনসহ (পিএটিএ) বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যটন ফোরামে বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে। এ সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পর্যটন শিল্পের দেশ হিসেবে পরিচিতি করার নিরলস প্রয়াস চলছে।

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বলেন, এ সম্মেলন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিষ্ট স্থাপত্য, স্থাপত্য শৈলী ও নিদর্শনের উন্নয়ন এবং বিকাশে সহায়ক হবে।

তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বুদ্ধিষ্ট সার্কিটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।

পরে প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত স্যুভেনির কর্নার পরিদর্শন করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত