785
Published on অক্টোবর 12, 2015সরকারি নথি থেকে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে সিপিপি প্রণয়ন করা বঙ্গবন্ধুর একটি সাহসী উদ্যোগ ছিল।
আর্থিক সঙ্কটের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র এক বছর ছয় মাস বয়স অতিক্রমকালে বঙ্গবন্ধু আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সিপিপি’র কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পরিচালক খায়রুল আনাম খান বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সাড়ে তিন লাখ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ব্যাপক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কমপক্ষে এক ঘন্টা ধরে চলে এই ঘূর্ণিঝড় এতে লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ানক এবং বিধ্বংসী শক্তি দেখে কেঁপে উঠেছিল। এটি বাঙালি জাতির জন্য একটি বিয়োগান্তক ইতিহাসও ছিল।
ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠী। অথচ ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিস্মিত হয়েছিলেন।
খান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুননির্মাণে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শীঘ্রই দেশের উপকূলীয় অংশে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। যেখানে বার বার বিধ্বংসী ক্ষমতাশালী ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে বিপুল সংখ্যক জীবন ও সম্পদ হানী হচ্ছে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অংশে আগের যুগেও বিভিন্ন মাত্রার প্রায় ২৫০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। যার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি ঘূর্ণিঝড় অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬২, ১৯৬৩ ও ১৯৬৫ সালে আঘাত করা তিনটি ঘূর্ণিঝড় ভীষণভাবে তান্ডব চালিয়েছিল, এতে প্রায় এক লাখ লোক নিহত হয়।
তিনটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ফলস্বরূপ ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করার জন্য লীগ অফ রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে নির্দেশ দিয়ে একটি রেজলুশ্যনের করা হয়।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস এবং নিষ্ঠুর তান্ডব বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে দাগ কেটে ছিল। তিনি উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী প্রভাব কখনো ভুলে যাননি, এর ফলস্বরূপ বঙ্গবন্ধু লীগ অফ রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং বাংলাদেশ রেডক্রসের সহায়তায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
সিপিপি’র শুরুতে এটির সাংগঠনিক কাঠামো কার্যকর ও টেকসই করতে এর সঙ্গে একটা গবেষণা কর্মসূচির প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল।
খান বলেন, গবেষণা ফলাফলের ভিত্তিতে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের চালিকা শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে বলা হয়েছে, যা কমিউনিটি ভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ম নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব নিশ্চিত করবে।
সিপিপি তাদের মানবিক সহায়তা প্রসারিত করতে ২০ হাজার ৪৩০জন স্বেচ্ছাসেবককে অনুপ্রাণিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।
বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে ‘মুজিব কেল্লা’ হিসেবে পরিচিত আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। যেখানে মানুষেরা নিজেরা ও তাদের গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে আশ্রয় নিতে পারে।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গৃহিত এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল, যা এখনো মাইলফলক হয়ে আছে।