375
Published on সেপ্টেম্বর 25, 2015তিনি বলেন, ‘একটি দেশ নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের যে কোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার এবং যে কোন লক্ষ্য অজর্নের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বাংলাদেশ বহু দুর্যোগ ও বিপদ মোকাবেলা করেছে। এসব প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দেশবাসীকে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত করে তুলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত অপশক্তি পরাজিত হয়েছে এবং বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশ নয়।
শেখ হাসিনা ঈদুল আজহা উপলক্ষে লাগার্ডিয়া ম্যারিয়ট মিশন হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর সম্মানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণদানকালে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশ নয়। আমি বিশ্বাস করি, আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো অসাধ্য সাধন সম্ভব। হা-হুতাশ করলে কিছুই পাওয়া যায় না। কাজেই আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলছি, এ বিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই চলবো। আমাদের যে সম্পদ রয়েছে তার সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি বলেন, সরকার এমডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যা যা করেছে তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগিয়ে যাবে এবং এসডিজি’র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে তার এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী এই দেশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কেউই দমিয়ে রাখতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কারো কাছে ভিক্ষা চায় না। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যাবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের যে কোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং যে কোন লক্ষ্য অজর্নের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বাংলাদেশ বহু দুর্যোগ ও বিপদ মোকাবেলা করেছে। এসব প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দেশবাসীকে এর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত করে তুলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত অপশক্তি পরাজিত হয়েছে এবং বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি)-র বেশকিছু ক্ষেত্রে অর্জিত দৃশ্যমান সাফল্য তুলে ধরে বলেন, অবিচল আস্থা এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার পাশাপাশি দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এমডিজি অর্জন সম্ভব করে তুলেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বর্তমান অধিবেশনে প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
গত ২০০০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এমডিজি প্রণয়নকালেও তাঁর উপস্থিতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ১৫ বছরের জন্য এমডিজি প্রণয়নের অধিবেশনে বিশ্বের সব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমিও উপস্থিত ছিলাম।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেকগুলো লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য লাভকারী অন্যতম একটি দেশ। ‘এটি আমার অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার যে, এবারের এসডিজি প্রণয়নের শীর্ষ সম্মেলনেও আমি যোগদান করছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণই এ সাফল্যের প্রধান হাতিয়ার তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ অর্জন ছিলো অসম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন কোন অর্জনের কথা বলি, তখন আমাদের এ কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, বাংলাদেশ ১৬ কোটি জনসংখ্যার ছোট একটি দেশ। এ বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে সার্বিক উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশের জনগণের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ্য রয়েছে এবং তারা যে কোন কিছু অর্জন করতে পারে।
তারা এটা বহুবার প্রমাণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এক রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। সুতরাং যে কোনো জিনিস অর্জন তাদের কাছে কঠিন নয়Ñ এটা বঙ্গবন্ধুই তাদের শিখিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর হৃদয়ে একটি কষ্ট সব সময়ই বাজে আর তা হলোÑ বাংলাদেশ দুর্যোগ, দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি দেশ। তিনি বলেন, ‘এটি আমার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে, এই দেশটিকে এমন একপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার আর দরকার হবে না। বরং আমরা স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারবো।’
তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রগতির পথে পা বাড়িয়েছে এবং দেশটি ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, এটা আমাদের লক্ষ্য, যাতে ভবিষ্যতে কেউই বাংলাদেশকে অবহেলা করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে বুধবার আটদিনের সরকারি সফরে এখানে এসে পৌঁছেছেন এবং এই প্রথম দেশের বাইরে ঈদ উদযাপন করছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর তিনি গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। তিনি বলেন, গণভবনের দরজা সকলের জন্যই খোলা থাকে। ধনী-গরীব সকলে একাকার হয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। এবার পারলাম না বলে দুঃখিত। তবে আপনাদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারছি, এ জন্য ভালো লাগছে।
প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিন সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করে বাকিরা যাতে সুস্থভাবে হজ পালন শেষে দেশে ফিরে আসতে পারেন তা কামনা করেন।
এর আগে দিনের শুরুতে শেখ হাসিনা হোটেল ওয়ালডর্ফ এ্যাস্টোরিয়াতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলটিতেই অবস্থান করছেন।