1611
Published on সেপ্টেম্বর 13, 2015বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। সাইক্লোন, বন্যা এবং খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দীর্ঘকাল যাবত এদেশের ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরণের দুর্যোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে।
বিশ্বের অন্যতম স্বল্পোন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিনিয়োগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ।
শেখ হাসিনা পলিসি লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন। প্রতিবেশগতভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকালিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সামগ্রিক পদক্ষেপের স্বীকৃতি হচ্ছে এই পুরস্কার।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক অচিম স্টেইনার (Achim Steiner) বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনমূলক নীতিগত পদক্ষেপ এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা বাংলাদেশ তার উন্নয়নের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কার্যক্রম থেকে শুরু করে বাস্তুতন্ত্র (ecosystem) সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অনেক বেশি প্রস্তুত।”
'জলবায়ু পরিবর্তনকে দেশে জাতীয় অগ্রাধিকার ইস্যু এবং একইসঙ্গে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে জোরালো ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কয়েকদিনের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goals) এবং ডিসেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনের অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচির অগ্রগামী বাস্তবায়নকারী এবং অভিযোজন নীতির স্বপক্ষের একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
পুরস্কার সাইটেশনে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান ২০০৯’ এর উল্লেখ করে বলা হয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম উন্নয়নশীল দেশ যেখানে এ ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিল দ্বারা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এ তহবিলে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরকার বর্তমানে বার্ষিক বাজেটের ৬-৭% (যা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সমান) জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করছে। এর ২৫% আসছে আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতাদের কাছ থেকে। একটি ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরির কাজ চলছে যাতে জলবায়ু তহবিলের চাহিদা এবং সরবরাহ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তন কোন অতিরিক্ত চাহিদা হিসেবে নয় বরং সরকারের উন্নয়ন সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই প্রথমবারের বিষয়টিকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীতে বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে রাষ্ট্রকে সাংবিধানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে জলাভূমি এবং বণ্যপ্রাণী রক্ষাকে প্রাধিকার দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার গৃহীত বন নীতিমালা আবহাওয়ার বেশকিছু চরমভাবাপন্ন অবস্থার প্রতিকার হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অভিযোজনে বস্তুগত এবং আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াও, সরকার ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত ভবিষ্যত মোকাবিলায় জনগণকে প্রস্তুতি গ্রহণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এগুলোর মধ্যে বন্যাজনিত কারণে পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে স্বাস্থ্যসেবা, আগাম সতর্কীকরণে কম্যুনিটি দল গঠন এবং পরিবেশ-বান্ধব কৃষি প্রযুক্তিতে উৎসাহ প্রদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন প্রক্রিয়ার (Climate Change Mitigation) অংশ হিসেবে সরকার দূষণমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার হোম সিস্টেম গড়ে উঠেছে যা গ্রিড বহির্ভূত এলাকার ১০ শতাংশ জনগণের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাচ্ছে। এছাড়া সরকার দেশের সবচেয়ে বৃহৎ গ্যাস নির্গমন উৎস - ইটভাটা থেকে গ্যাস নির্গমন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছে।
পরিবেশ, মানবস্বাস্থ্য রক্ষা এবং জীবিকায়নের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে জাহাজ-ভাঙা শিল্প যাতে উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশ বিনষ্ট না করতে পারে সেজন্য নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ
চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ বার্ষিক সম্মাননা। পরিবেশ বিষয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়ে থাকে। পলিসি, বিজ্ঞান, ব্যবসা এবং সুশীল সমাজ এই ৪টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। পূর্ববর্তী পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নেতা-নেত্রীসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীগণ রয়েছেন যাঁদের নেতৃত্ব এবং কর্মকাণ্ড একটি টেকসই বিশ্ব সৃষ্টির এবং সবার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য কাজ করেছে। ৪টি ক্যাটাগরিতে এ পর্যন্ত ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।