362
Published on সেপ্টেম্বর 8, 2015তিনি বলেন, ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এবং সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) বাস্তবায়নে আমরা অত্যন্ত সফল হয়েছি। দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানব সম্পদে পরিণত করা হলে দেশের উন্নয়নের গতি আরো জোরদার হবে।
আপনাদের সকল কার্যক্রম পুনরায় চালু করুন, আপনাদের সকল কাজে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতার দ্বার অবারিত থাকবে।
মঙ্গলবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০১৫’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান বিয়াত্রিস কালদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব মেজবাউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. রুহুল আমিন সরকার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সাক্ষরতা কর্মসূচির তাৎপর্য হলো সবার চোখ খুলে দেয়া এবং অক্ষর জ্ঞান মানুষের অন্তর দৃষ্টি খুলে দেয়, মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। সর্বোপরি চেতনার উন্মেষ ঘটায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলা। জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, একটি শিক্ষিত প্রজন্ম ছাড়া সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়।
তাই তিনি স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলা দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি ৩৬ হাজার ১শ’ ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭শ’ ২৪ জন শিক্ষকের পদ সরকারিকরণ করেন।
তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর শিক্ষা কমিশনের অন্যান্য সুপারিশমালা আর বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষাঙ্গনে নেমে আসে চরম নৈরাজ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর আমাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, দেশের সাক্ষরতা বৃদ্ধির বিশাল অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সকল দেশে যখন সময়ের সাথে সাথে সাক্ষরতার হার বাড়ে, কিন্তু আমাদের দেশে বিএনপি-জামায়াতের ২০০১-২০০৬ আমলে সাক্ষরতার হার আমাদের রেখে যাওয়া ৬৫ শতাংশ থেকে কমে ৪৪ শতাংশ দাঁড়ায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ব ব্যাংক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পে সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা দেয়। এই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার পুনরায় কার্যক্রম চালু করে এরফলে বর্তমানে সাক্ষরতার হার বেড়ে ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) সকলের জন্য অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক করে যান। বঙ্গবন্ধুর সরকারের পর আমাদের সরকার দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছে। একই সঙ্গে এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) এবং সবার জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, এলক্ষ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা থাকলেও ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি আমরা নিশ্চিত করেছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ঝরেপড়ার কারণসমূহ চিহ্নিত করেছি। ঝরেপড়া রোধে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তি চালু করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝরেপড়া রোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল চালু করা হয়েছে এবং এ সকল ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ৮০’র দশকে ঝরেপড়ার হার ৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমরা ২০.৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ঝরেপড়া রোধে এমপি, মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের স্থানীয় স্কুলে স্বউদ্যোগে মিড-ডে মিল চালুর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, অভিভাবকদের সহায়তায় প্রতিটি স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি তহবিল গঠন করবে এবং মিড-ডে মিল পরিচালনা করবে। এতে মিড-ডে মিল পরিচালনায় অনুদান গ্রহণ করা হবে এটা হতে পারে রান্না করা খাবার, ফল অথবা অন্যান্য খাদ্য আইটেম। এ ধরনের উদ্যোগ মিড-ডে মিল কার্যক্রম স্থায়ী রূপ পাবে।
প্রথম শ্রেণীতে শিশুদের ভর্তি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যেকোন শিশু যখন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির বয়স হবে, তারা ভর্তি হবে এজন্য ভর্তির আগে ছাপানো প্রশ্নপত্রে তাদের কোন পরীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এটা তাদের অধিকার এবং এটা ছাপানো প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার বিষয় নয়।
এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন এবং শিশুরা যাতে তাদের নিজ নিজ এলাকার বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এলিট শ্রেণীর শিশুরা যদি ব্যয়বহুল স্কুল পড়াশোনা করে এক্ষেত্রে কোন বাধা নেই তবে সাধারণ জনগণ যেন তাদের শিশুদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে এজন্য এসব স্কুলের অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন।
তিনি পার্বত্য ও চর এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।