জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

346

Published on আগস্ট 16, 2015
  • Details Image

তিনি বলেন, বাঙালি জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। বাঙালি জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি।

অতীতে তাঁর ওপর বার বার হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো চক্রান্তই তাঁকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো চক্রান্তকে পরোয়ানা করি না। আল্লাহ জীবন দেয়া ও নেয়ার মালিক। আমি সবসময় এটি বিশ্বাস করি এবং এর ওপর নির্ভর করি। আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে কখনো মাথানত করিনি এবং করবোও না।’

আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় অংশ নেন সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিশিষ্ট লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। অন্ষ্ঠুানে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃতিকার শিমুল মোস্তফা।

এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদ, চার জাতীয় নেতা, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা, ভাই-বোন ও নিকটজনদের হারানোর পর তাঁর আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, জাতির ভাগ্য পরিবর্তন যার জন্য আমার বাবা-মা ও ভাই-বোন জীবন দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে জাতিকে গোটা বিশ্বের সামনে কলংকিত করা হয়েছে। আমি জাতিকে আবার শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করতে এবং দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন ছিলো একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতি গঠনের মাধ্যমে জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা। আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সে স্বপ্ন পূরণ করা এবং সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি খুনীদের আশ্রয় দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন ও দেশের আদর্শ ভূলুন্ঠিত করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৯৭৫ সালের খুনীদের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর শুরু করে বাংলাদেশকে কলংকমুক্ত করেছি।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, এ মহান নেতা বাঙালি জাতিকে একটি নিজস্ব দেশ অর্জনে নেতৃত্ব দেন। এ জন্য বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই এবং কারা ভোগ করেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বিজয়ের পর বাঙালি বীরত্ব ও সাহসের জন্য গর্বিত ছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে জাতিকে কলংকিত করা হয় এবং বিশ্বের সামনে একটি ‘খুনী জাতি’ হিসেবে জাতির মাথানত করা হয়।

তিনি বলেন, এতে শুধু জাতি তার জনককে হারায়নি- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস বিকৃত এবং সংবিধানকেও ভূলুন্ঠিত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, কি দুর্ভাগ্য, যে জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য এ মহান নেতা তাঁর সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন- সে দেশের জনগণের হাতে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৫ দিন আগে তিনি এবং তাঁর বোন বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ৬ বছর সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান তাদের দেশে ফিরতে দেয়নি। এমনকি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবনের বাইরে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁকে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করতে দেয়া হয়নি। সে সময় ভবনটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের বর্ণনা দিয়ে বলেন, দেশের জনগণের কাছে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে তারা কিছু না কিছু পায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। একদিন বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগ প্রধান একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে দলের নেতা-কর্র্মীদের প্রতি আহবান জানান।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত