531
Published on আগস্ট 2, 2015
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই নির্মমভাবে তাঁর পরিবারের সব সদস্য, ভাগিনা এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন চত্বরে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালি জাতির বিজয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়াই ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড।
খুনীরা চেয়েছিল যাতে বাঙালি জাতি আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। নীল নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি জাতীয় চার নেতাকে তারা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করে।
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি।
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারন করে বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে তিনি তাঁর পুত্র জয় ও কন্যা পুতুল এবং তাঁর একমাত্র জীবিত বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানি যান। তিনি বলেন, “আমরা ভাবতেও পারিনি যে, আমাদের জন্য এ রকম দুর্যোগ অপেক্ষা করছে।”
প্রধানমন্ত্রী কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, “আমরা সবাইকে দেশে রেখে গিয়েছিলাম। এবং ১৫ দিন পরে আমরা একই সময়ে তাদেরকে হারিয়েছিলাম, এটা কতটা বেদনাদায়ক ছিল!”।
শেখ হাসিনা বলেন, খুনী মোশতাক ও জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এবং তাঁকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়। তিনি বলেন, কিন্তু যখন আওয়ামী লীগ তাঁকে (শেখ হাসিনা) দলের সভাপতি নির্বাচিত করে তখন তিনি সে সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খুনীচক্র একই সময়ে তিনটি বাড়িতে হামলা চালায় এবং ঠান্ডা মাথায় নিরিহ নারী ও শিশুসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যা করে।
এমনকি, খুনীরা কৃষক লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের এবং তাঁর দুই মেয়ে, ছোট ছেলে, নাতি’সহ বাড়ির আরও ১৬ জনকে হত্যা করে।
৪০ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংষ হত্যাকান্ড এবং ৪০তম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষক লীগ এ রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতিকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি তাঁর সারা জীবন জনমানুষের মুখে হাসি ফুটাতে বাঙ্গালী জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নিরলস কাজ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগনকে একটি প্লাটফরমে একত্র করেছিলেন। ঠিক সেইসময় তাঁর স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করতেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, ‘জাতির জনক এখন আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর আদর্শ, তাঁর লক্ষ্য এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি যে পথ আমাদের দেখিয়ে গেছেন তা এখনো আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। আমরা তাঁর স্বপ্ন পূরণে লড়াই করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।
শেখ হাসিনা কালরাত্রির ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে হারিয়েছি। ঘাতকরা আমার মাকে হত্যা করেছে- যিনি সাধারণত বঙ্গবন্ধু জেলে গেলে রাজনীতির হাল ধরতেন এবং তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছায়ার মতো থাকতেন ও তাঁর প্রেরণা যোগাতেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বিশ্বাস ছিল অবশেষে সত্যের জয় হবে। অতএব তিনি কখনো একটি সমৃদ্ধ ও শান্তির বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যচ্যুত হননি।
তিনি বলেন, ‘আমার পিতা জাতিকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। ঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীরা এই স্বাধীনতা নস্যাতে তাদের সকল প্রচেষ্টাই নিয়েছে। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে কেউ এই জাতিকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্বদাই কৃষকদের সম্পর্কে বলতেন, তারা দেশের অর্থনীতির মেরুদ-। তিনি বলেন, তাঁর সরকার কৃষি ক্ষেত্রেও সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং তাদের কল্যাণে সকল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে এবং নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার বর্তমান সাফল্যে কৃষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কৃষকদের কাছে সকল কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করেছে এবং কৃষকরা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। তিনি বলেন, সার চাওয়ার কারণে বিএনপি ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছে। আর এখন প্রায় এক কোটি ৪৫ লাখ কৃষক সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শস্য ও বীজে বৈচিত্র আনতে গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে এগিয়ে নিতে এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন সত্যে পরিণত করতে তিনি কৃষক লীগকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।