মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবেঃ সেনাবাহিনীর জেনারেলদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

382

Published on জুলাই 26, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদেরকে সব কিছুর উর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে। সেনাবাহিনীতে যাঁরা নেতৃত্ব দিবেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে আপনারা অধীনস্থদের প্রতি যত্নবান হবেন।’

তিনি রোববার সেনা সদর দপ্তরে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০১৫-এ ভাষণকালে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মাদ শফিউল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যাালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য মৌলিক এবং মুখ্য বিষয়। এটি আপনাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত হয় ।

প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পদে পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য এবং নেতৃত্বের যোগ্যতাকে বিবেচনায় নিতে জেনারেলদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমেই যে কোন বিজয় বা সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
শৃঙ্খলাকে একটি সুসংগঠিত বাহিনীর মেরুদণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদোন্নতির প্রশ্নে শৃঙ্খলার বিষয়টি অন্য কোন গুণাবলীর সাথে তুলনীয় নয়। এজন্য শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনো প্রকার আপোষ অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী পদোন্নতির জন্য জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকেও মূল্যায়নের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কাজে হাত দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অবিচল আস্থা, গভীর বিশ্বাস এবং অকৃত্রিম ভালবাসা। এজন্য তিনি নিজ সন্তানদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছিলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেনাবাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ৬ বছবে তাঁর সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর জন্য যা কাজ হয়েছে ইতোপূর্বে তা আর কোন সরকারের আমলে হযনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে অনেকগুলো ইউনিট গঠন এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারী ইনষ্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার এবং এনসিও’স একাডেমির মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা করেছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর তাঁর সরকার ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে এবং এর বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী করতে অত্যাধুনিক মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, সেলফ প্রোপেল্ড গান সিষ্টেম, রাডার, এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, মাল্টিপল লঞ্চড রকেট সিস্টেম, আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার, ইউটিলিটি বিমান ছাড়াও সিগন্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করেছে।

তিনি বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশনের ১ বিলিয়ন ডলার সামরিক ঋণ প্রোটোকলের আওতায় ৬টি এম আই -১৭১ হেলিকপ্টার, ৩৩০টি এপিসি এবং ১০টি আর্মাড রিকভারী ভেহিকেল ক্রয় এবং ১৭৪টি টি-৫৯ ট্যাংকের উন্নীতকরণের চুক্তি স¤পাদিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর ফায়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এক ব্যাটারী এম এল আর এস ক্রয় করা হয়েছে এবং আরও দুইটি এম এল আর এস ব্যাটারী ২০১৬ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীতে সংযোজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ এম এল আর এস রেজিমেন্ট সাভার সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এছাড়া ২০১৭ সালের মধ্যে দুইটি এফ এম -৯০, সারফেস টু এয়ার মিসাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে। এতে সেনাবাহিনীতে সমর শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তারা আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে পারবে।

তিনি বলেন, জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন গঠন করা হয়েছে। নবগঠিত ১৭ পদাতিক ডিভিশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে আগামী ৫ বছরে পর্যায়ক্রমে আরো ৩০টি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য নবগঠিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড পূর্ণোদ্যমে কাজ করছে। রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং বান্দরবানের রুমায় পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভুমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূতি উজ্জ্বল করেছে এবং সেনাবাহিনী আজ দেশে-বিদেশে আস্থা ও শৃঙ্খলার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ফ্লাইওভার ও সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণে সেনাবাহিনীর ভ’মিকার প্রশংসা করে বলেন, তাদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীতে তাঁর সরকারের জনশক্তি বৃদ্ধি, বহুতল ভবন নির্মাণ করে আবাসন ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান এবং অনেক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অর্থনীতি, দারিদ্র্য বিমোচনসহ আর্থ-সমাজিক খাতে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন,বিশ্ব ব্যাংক আমাদের নিম্ম-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে গোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ ডলারে। দারিদ্রের হার কমে ২২ দশমিক ২৭ শতাংশে নেমে এসেছে। রফতানি আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ২ ভাগ। রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্যে আমরা স্বংয়সম্পূর্ণতা অর্জণ করেছি। খাদ্য উৎপাদন ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজারে পৌছেছে।

তিনি বলেন,দেশে এখন ৭৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। দারিদ্রসীমা ২২ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। জনগণ তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা গ্রহণ করছেন। আমরা ৫২৭৫টি ডিজিটাল কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এই সব উন্নয়নের অংশিদার। আপনরা সর্বোচ্চ দেশ্রপ্রেম ও কর্তব্য পরানয়তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাবেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত