369
Published on জুলাই 21, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের আর্থিক নীতি ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনাদের আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। এতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর প্রধান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আমি জানি যে দায়িত্ব পালনকালে সরকারি কর্মকর্তাদের সুবিধা-অসুবিধা উভয়ই মোকাবেলা করতে হয়। তবে আপনাদের প্রথম দেশের কথা বিশেষ করে দরিদ্র ও শ্রমিক শ্রেণীর বিষয় চিন্তা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিভাবে টিকে থাকবো এটা বড় বিষয় নয়। আমাদের কম সুবিধাভোগী এবং দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই হবে আমাদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কি পেলাম বা পেলাম না, এটা বড় করে দেখলে চলবে না। আমাদের নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের প্রধান বিবেচনা হবে যে, দেশ ও জনগণের জন্য আমরা কতটা সেবা দিতে পারলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলা গড়া ও জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ও দেশের উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুফল সবার মাঝে পৌঁছে দিতে কাজ করে।
তিনি বলেন, সকল সামাজিক খাতে ব্যাপক সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
এ প্রসঙ্গে তিনি বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই মেগা প্রকল্প আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, এটি নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করবো। আমরা আমাদের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝেও এ ধরনের আস্থা থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের সামগ্রিক কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য অর্জনে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয় এবং সামনের সারির উন্নত দেশে পরিণত করতে ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারের নেয়া কর্মসূচি ও প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে সম্পন্নের জন্য তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন।
নিম্ন ও উচ্চবিত্তের মধ্যে আয় বৈষম্য হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নিম্ন আয়ের মানুষকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত ৬ বছরে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে এবং দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ জন্য তিনি তাঁর সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হবে একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবেই থাকতে চাই না। মিলেমিশে কাজ করলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্তে¡ও বাংলাদেশে বিগত ৬ বছরে জিডিপি ৬ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ১৩১৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫.২ বিলিয়নে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের অধিকতর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিশ্বে এ দেশের ভৌগলিক গুরুত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে মোটরযান চুক্তি (মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশে উৎসব ও আনন্দঘন পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থার প্রধানগণ পাওয়ার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ড উপস্থাপন করেন।