390
Published on জুন 6, 2015প্রধানমন্ত্রী শনিবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলেন, দু’টি দেশকে এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ঘোষণাকে ফলপ্রসূ করতে হবে। ভারত অবশ্যই আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দু’টি দেশ যৌথভাবে জনগণের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমাদের জন্যও বড় আনন্দের বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, এটা সত্যিকার অর্থে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং আমরা আমাদের এই সম্পর্ক এক অতি উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।’
শেখ হাসিনা ১৯৭৪ সালের স্থল সীমানা চুক্তি অনুমোদনের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ ৬৮ বছরের পুরানো একটি মানবিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশী যে, অবশেষে স্থল সীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং এই অর্জনের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করি।’
শেখ হাসিনা এই চুক্তির প্রতি সর্বসম্মত সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য ভারতের জনগণ ও সকল রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান এবং এই চুক্তির ব্যাপারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শান্তির দক্ষিণ এশিয়া বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু সকল প্রতিবেশীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিলেন যাতে এখানকার জনগণের কল্যাণে প্রতিটি লোক ভাল প্রতিবেশী হিসাবে পাশাপাশি বসবাস করতে পারে এবং গঠনমূলক নীতি অনুসরণ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ওই দূরদর্শী বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালে বিরাট অবদান রেখেছে যার জন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কথপোকথন ছিল উষ্ণ, আন্তরিক ও সুদূরপ্রসারী। আমরা পরস্পরের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারগুলো উপলব্ধি করি। আমরা ক্রমবিকাশমান সম্পর্কের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও প্রধানমন্ত্রী মোদী একমত হয়েছেন যে, উভয় দেশ ও এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বৃহত্তর পরিসরে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় নৌযান চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তি এবং অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল নবায়ন এবং সেই সাথে নতুন বাস সার্ভিস চালুÑ এ অঞ্চলে বৈষম্য হ্রাস ও সর্বাধিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার লক্ষ্যে আমাদের অঙ্গিকারের প্রতিফলন।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব চুক্তিতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো অধিকতর বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি ইস্যুর ব্যাপারে মোদী সচেতন এবং এ ব্যাপারে তাঁর সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। উভয় দেশ বাণিজ্য ভারসাম্য কমিয়ে আনতে মংলা ও ভেড়ামারায় ভারতের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “ভারতীয় বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে।”
সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলোর মধ্যে রযেছে- অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইটি ও সংস্কৃতি। এ ধরনের বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতা আমাদের মধ্যে অংশীদারিত্বের গভীরতা, বিশালতা ও পরিপক্কতাই প্রকাশ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে তিনি মোদীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “সীমান্ত এলাকা শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ করার বিষয়ে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ পদর্শনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উভয় দেশের জনগণের সঙ্গে জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ হচ্ছে দুই দেশের সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্ক।
তিনি বলেন, আসামের গৌহাটিতে কূটনৈতিক মিশন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, খুলনা ও সিলেটেও অনুরূপ মিশন চালু করতে সম্মত হয়েছে ভারত।
তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আমাদের ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক আস্থা ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।’
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল