462
Published on জুন 2, 2015স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন ও অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত রেখে সংসদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭(১) বিধির আওতায় এই ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা শুরু হয়।
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে এর ওপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সরকারি দলের ড. হাছান মাহমুদ, মোতাহার হোসেন, নুরুল ইসলাম সুজন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল ও স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা শেষে স্পিকার ধন্যবাদ প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদিত হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সে দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার অংশ হিসাবেই অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এ চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনা পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো একের পর এক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি সমুদ্রসীমা বিজয়, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা পানি চুক্তিসহ বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
রওশন এরশাদ বৃটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তিনজন সদস্যকে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ারও প্রস্তাব করেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি সদস্যের আকুন্ঠ সমর্থন, ভারতের সকল রাজনৈতিক দলসহ প্রতিটি মানুষের যে ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা ছিল তা ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। তেমনিভাবে ১৯৭১ সালে ভারতের সরকার ও প্রতিটি মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে ১৯৭৪ সালে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
শিল্প মন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার গৌরব অর্জনসহ প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মান ও অর্জন এসেছে শেখ হাসিনার আন্তরিক চেষ্টা ও দুরদর্শী নেতৃত্বের ফলে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে এ চুক্তি সম্পাদিত করেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংসদে অনুমোদিত হয়েছিল। আর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব কূটনৈতিক দূরদর্শিতা আজ প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তথা জাতিকে এগিয়ে নেয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু কোনো বাধাই জাতির অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখতে পারেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব বাধা অতিক্রম করে জাতি এগিয়ে যাচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কূটনৈতিক তৎপরতার ধারাবাহিকতায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ছিটমহলে বসবাসকারী জনগণ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতি সমুদ্রসীমা লাভ করেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। ফারাক্কার পানি চুক্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই জাতির অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
জাতীয় পার্টির সদস্য এইচ এম এরশাদ বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন করতে গিয়ে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভা সে দেশের সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছে এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এক দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে অপর দেশের সংবিধান সংশোধন বিশ্বের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে যে ‘মুজিব ইন্দিরা’ চুক্তি হয়েছিল এটিকে যারা গোলামী চুক্তি বলেছে সেইসব অর্বাচীনরা আজ পরিত্যক্ত।
স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনে নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিগত ৪০ বছরে যা সম্ভব হয়নি সেখানে মাত্র এক বছরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারা তা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
এইচএম এরশাদ বলেন, এই চুক্তি অনুমোদনের ফলে অসংখ্য মানুষের জীবন সফল হয়েছে। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অসংখ্য মানুষের দুঃখ দুর্দশার অবসান হয়েছে। তাদের হাতে পতাকা তুলে দেয়া হয়েছে। যারা এই চুক্তিকে গোলামী চুক্তি বলেছে তাদের মুখে ছাই পড়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানের ফলে ছিট মহলের ৫১ হাজার মানুষের মানবেতর জীবন-যাপনের অবসান হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বিলটি পাস হওয়ার সময় ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার একজন সদস্যও এর বিরোধীতা করেনি। এতেই বোঝা যায়, ভারত এই চুক্তি সম্পাদনে কতটা আন্তরিক ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি পাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ জন্য তাকেসহ ভারতের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তিনি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা প্রথমে জলসীমা ও পরবর্তীতে স্থল সীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। এ সাফল্য শুধু সরকারের নয়, এটা গোটা জাতির বিজয়। এ বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার বিশ্ব দরবারে মর্যাদার দিক থেকে আরো একধাপ এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এসরকারের আমলে শুধূু স্থলসীমান্ত চুক্তি নয়, সমুদ্র সীমানা বিজয়, তিন বিঘা করিডোর চুক্তি, গঙ্গা পানি চুক্তিও শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সম্পাদিত হয়েছে। তিনি ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, তার সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় সুরাহার পথ আরো প্রশস্ত হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ও কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদিত হওয়ার পর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ না জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামীতে তিস্তা চুক্তিও সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন সরকারের একটি কূটনৈতিক সাফল্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ‘মুজিব-ইন্দিরা’ চুক্তির মাধ্যমে এর বীজ বপণ করা হয়েছিল।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও দূরদর্শী কূটনৈতিক তৎপরতায় ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতি একটি নিখুঁত মানচিত্র অর্জন করেছে। এ চুক্তি অনুমোদনের মাধ্যমে দুই ভ্রাতৃপ্রতীম প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ৬ জুনের সফর উপলক্ষে দু’দেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিপুল আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির এ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে অমীমাংসিত অন্যান্য বিষয়ও সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।