বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি চলবে না : প্রধানমন্ত্রী

382

Published on মে 16, 2015
  • Details Image

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি আর থাকবে না। যারা দেশ ধ্বংস করার জন্য বাস ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে ও মানুষ মেরেছে, তাদের কোন ক্ষমা নেই। বাংলাদেশে তাদের বিচার অবশ্যই হবে।

তিনি গতকাল বিকেলে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ প্রদানকালে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আপনাদের বন্ধু নয়। এ দুটি দল জনগণ ও মানবতার শত্রু। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনা আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসন কি ছিল তা দেখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং দেশের অগ্রগতির জন্য আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মঈনউদ্দিন মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন এমপি, আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, আব্দুল ওয়াদুদ বিশ্বাস এমপি, মো. আইনউদ্দিন এমপি, গোলাম মোস্তফা এমপি এবং আবদুল মালেক এমপি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে নয়, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন করতে চায়। তিনি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি এ বিষয়ে আপনাদের সমর্থন চাই। তিনি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যারা ধ্বংসের রাজনীতি করে,তাদেরকে না বলুন এবং আওয়ামী লীগের পতাকার তলে আসুন এবং উন্নয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে অবশ্যই বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হওয়া। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ অন্ততঃ দিনে দু’বেলা পেটপুরে খেতে পারে। তরুনদের কর্মসংস্থান হয়, স্কুল শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পায়, বিনামূল্যে ওষুধ পায়, স্বাস্থ্য সেবা পায়, বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের উন্নতি হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে। আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে চাই এবং এর সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সমৃদ্ধ হবে। প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপনের আগেই তাদের খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার একমাত্র বোন ছাড়া সবাইকে হারিয়েছি। আমি মাত্র একটি উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করছি। সেটি হলো- দেশবাসীকে সমৃদ্ধ জীবন উপহার দেয়া। যার জন্য আমার পিতা তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমার পিতা আপনাদেরকে ভাল বাসতেন। আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছি। ফলে আমার লক্ষ্য হচ্ছে- আপনাদের কল্যাণ ও উন্নয়ন করা।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদেরকে বিচারের আওতায় আনার তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি আবারো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি জনগণের যে কোন ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে তাদেরকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদেরকে এমন শাস্তি দেয়া হবে, যাতে আর কখনো এ ধরনের অপরাধ না করে।

শেখ হাসিনা বলেন, চর এলাকায় সোলার বিদ্যুৎ দিয়ে আলোকিত করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করা হবে এবং সোনা মসজিদ, মালদা ও মুর্শীদাবাদ থেকে বাস সার্ভিস চালু করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী এর আগে সমাবেশস্থল থেকে সদ্য নির্মিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শিবতলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্বরূপনগরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের সদ্য নির্মিত একাডেমিক ভবন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচারার এর (বিআইএনএ) সাব-স্টেশন এবং গোমস্তাপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন উদ্বোধন করেন।

এছাড়া তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল ১শ’ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের, কানসাট-রহনপুর-বোলাহাট সড়ক উন্নয়ন কাজ, পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে জেলার আলতুলি এলাকা রক্ষার প্রকল্প কাজ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, বিশেষত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে যে বিদ্যুৎ সংকট ছিল তা দূর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, কানসাটে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলওয়ে সেবার পুনর্গঠন, স্টেডিয়াম নির্মাণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে প্রকৌশলীকে জীবন্ত দগ্ধ করাসহ ওই স্টেশনটিকে পুড়িয়ে দেয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৮ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করলেও জনগণকে বিদ্যুৎ দেয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, সাহেবের ঘাটে মহানন্দা নদীর উপর বহু কাক্সিক্ষত দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ, অবহেলিত চরাঞ্চলের দীর্ঘদিনের স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন।

তিনি জেলা হাসপাতাল আধুনিকায়ন, কানসাট-ভোলারহাট সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে জেলাকে রক্ষা এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ওই এলাকায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উগ্রপন্থীরা এমনকি একজন নারী ইউপি সদস্য নূরজাহানকে পর্যন্ত বাঁচতে দেয়নি। তারা ২০১৩ সালে ও তার পরবর্তীতে যে হিংস্রতা প্রদর্শন করেছে, বাংলাদেশের জনগণ তা আর কখনো দেখেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে মঙ্গা ছিল উত্তরাঞ্চলের নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করে এবং মঙ্গাপ্রবণ এলাকায় জনগণের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করে আওয়ামী লীগ মৌসুমী কর্মহীনতা দূর করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ভূমিহীন জনগণের মধ্যে খাসজমি বিতরণ এবং যাদের বাড়িঘর নেই তাদেরকে বাড়ি দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, গত ছয় বছরে পাঁচ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং আগামী তিন বছরে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নেমে আসবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আম উৎপাদকারী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাঁর সরকার আম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, মসলা উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকরা মাত্র চার শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণের সুযোগ নিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সাধারণ মানুষের জীবিকার ওপর আঘাতের রাজনীতিকে উৎসাহিত করছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ৯২ দিন হরতাল-অবরোধ পালন করেছেন। এতে খালেদার কোন ক্ষতি হয়নি, বরং সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তাই আপনাদেরকে শপথ নিতে হবে মানুষ হত্যা ও তাদের জীবন-জীবিকা ধ্বংসকারী কোন দলকে আর ভোট দেবেন না।’

ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের তোষামোদি করেছে এবং প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে ঝুলে থেকেও কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি এবং সমুদ্রসীমা নির্ধারণ আওয়ামী লীগের সফল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টারই ফসল।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নির্বাচনে তাঁর ভাগনি জয়লাভের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরেও নিজেদেরকে তুলে ধরছি। কিন্তু দেখুন বিএনপির একজন নেতা দেশকে হত্যা ও ধ্বংস ছাড়া দেশকে আর কিছুই দিতে পারেননি।’ তার ছেলে এখন বিদেশে পালিয়ে আছে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত