380
Published on এপ্রিল 29, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে। বরং জনগণ তাদের চিরদিন ঘৃণা করবে। কারণ তারা মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে, জীবন্ত মানুষ পুড়ে মেরেছে এবং মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে।
তিনি আজ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ৩ মাসের অবরোধ ও হরতালে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন এবং আহত ব্যক্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের মাঝে চেক বিতরণকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিপুল সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু পরিবেশে গতকালের সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি একটি বা দু’টি হত্যাকা- ঘটিয়ে নির্বাচন বর্জন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অধিক সতর্কতার জন্য তারা এটা করতে পারেনি।
তিনি বলেন, দেশে এর আগে অনুষ্ঠিত ৫ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের চেয়েও গতকালের নির্বাচন অধিক শান্তিপূর্ণ ছিল। ২ হাজার ৭শ’র মধ্যে মাত্র কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ও কিছু বুথে গোলযোগ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কেবল মেয়র নয় কাউন্সিলর পদেও সিটি নির্বাচন হয়েছে। এজন্য কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। হিসেব করলে দেখা যাবে পূর্ববর্তী নির্বাচন ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের নির্বাচনী গোলযোগের চেয়ে গতকারের ঘটনা ছিল খুবই নগণ্য।
জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে বিএনপির এই অভিযোগ নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট দিতে বাধা দেয়া হলে বিএনপির প্রার্থীরা এত ভোট পেল কিভাবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়াল আলম ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা অন্যান্যের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ ২৫৮টি চেকে মোট ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এর মধ্যে নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ও আহত ব্যক্তিদের ৮ কোটি ৪১ লাখ এবং ৬৫ জন বাস মালিককে ২ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের ৩ মাসের নৃশংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ৭৭২টি চেকে ২৫ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার টাকা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলের কিছু নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এদেশের মানুষ ১৯৮১’র রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৭৮’র হ্যাঁ-না ভোট ও ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ঢাকায় মিরপুর উপনির্বাচন ও মাগুরা উপনির্বাচন দেখেছে।
তিনি বলেন, ওই ভয়াবহ নির্বাচনী কারচুপি থেকে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু করতে চেয়েছি। এখন অনেক উন্নত দেশ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই ইভিএম ব্যবস্থায় ভোট নেয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া এর বিরোধিতা করেন। কারণ তার ভোট ছিনতাইয়ের নীলনকশা ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া গত ৩ মাস হত্যার নেশায় মেতেছিলেন। মানুষের জীবন-জীবিকা অচল করে দিয়েছেন এবং ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের পর মানুষ কিভাবে ওই দলটিকে ভোট দেবে ?’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গতকালের নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি তাকে (এমাজউদ্দিন) প্রশ্ন করি যে তিনি জিয়ার হ্যাঁ ও না ভোট, তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বেগম জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেখেছেন কিনা? প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের নিজেদের ত্রুটি দেখতে পান না।’
তিনি বলেন, আমাদের দেশের একশ্রেণীর মানুষ একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞে বিপুল জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণভাবে নিরব থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নির্মমতায় অনেক মানুষ আপনজন ও প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এবং সরকার এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের নৃশংসতা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ আমরা সাধারণ মানুষের কল্যাণের রাজনীতি করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে, এই উভয় অবস্থায় জনগণের ক্ষতি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় এদেশের জনগণের পাশে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। জনগণের সেবাই হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বস্ত করে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত ও পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই অপরাধীদের তন্নতন্ন করে খুঁজে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে ভবিষ্যতেও তারা একই ধরনের ঘটনা ঘটাবে।