ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ ভাগ হয়ে নতুন দু’টি বিভাগ হবে : প্রধানমন্ত্রী

498

Published on এপ্রিল 18, 2015
  • Details Image

ঢাকা বিভাগও দুই ভাগ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা ডাবল রেল লাইনট্রাক উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভাগগুলো ভাগ হবে। স্বাধীনতার পর ১৯টি সাব-ডিভিশন থেকে ৬৪টি জেলা সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ডের পুনর্গঠন কাজের, লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ ডবল রেললাইন এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডাবল গেজে পরিণত করার কাজের উদ্বোধন করেন।

রেলওয়ে মন্ত্রী মুজিবুল হক, পরিকল্পনা মন্ত্রী এ এইচ এম মোস্তফা কামাল, স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম লাকসামে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন।

লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডবল লাইন প্রকল্পে মোট ৮০.৪৭ কিলোমিটার ডবল রেললাইন ট্রাক নির্মিত হয়েছে। লাকসাম থেকে চট্টগ্রামে মিরেরসরাইয়ের চিনকি আস্তানা পর্যন্ত রেললাইনে ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬০৭ কোটি টাকা।

এই রেললাইন লাকসাম জংশন, নাওতি লাঙ্গলকোট, হাসানপুর, গুণাবতী, সর্সাদি, ফেনী জংশন, কালীদহ, ফাজিলপুর, মুহুরিগানি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে চিনকি আস্তানা স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হবে।

ডবল রেললাইন ৮০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচলে সহায়ক হবে। এতে ২৫ মিনিট সময় কম লাগবে। পাশাপাশি বর্তমানে দৈনিক ৩৬ জোড়া ট্রেন চলাচলের বিপরীতে দৈনিকসর্বোচ্চ ৭০ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁর সরকার রেলওয়েকে আধুনিক ও সময়োপযোগী গণপরিবহন বিশেষকরে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের লোকদের পরিবহন হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে গত কয়েক বছর এ খাতের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডবল লাইন ট্রাক ২০১৯ সালে চালু হবে এবং সরকার দোহাজারি-গুণধুম লাইন দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ করছে। এই লাইন ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।

রেলওয়ে খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের ২৫ বছরের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে তাঁর সরকার ২৭ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৬টি নতুন প্রকল্প এবং ১৮ হাজার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯টি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।

রেল ও জলপথকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি বিবেচনা করে তার সরকার অনেক রেলপথ পুনঃস্থাপন করেছে যা ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী যে সকল রেল লাইন ধ্বংস করেছিল, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তা পুনঃনির্মাণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে রেলপথ বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অনেক রেলপথ বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত দেশের জন্য কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনি, তারা কেবল দেশের ক্ষতিই করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেলওয়ের জন্য আমরা অনেক বগি কিনেছি কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেছে।’ তিনি বলেন, যেহেতু বিএনপি দেশ সৃষ্টি করেনি, তাই দেশের জন্য তাদের কোন মমতা নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য মুক্ত দেশ গড়তে আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ২০২১ সাল নাগাদ আমরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই।’
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাত্র পাঁচ বছরে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে গেছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, শিক্ষার হার বাড়িয়েছি, প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়েছি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছি এবং একইভাবে দেশকে সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়েছি।

কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে হত্যাকান্ড, ভীতি সৃষ্টি ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম অবলম্বন করে সকল সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছে। ফলে জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ বছরের সেপ্টম্বর মাসের মধ্যে টঙ্গী-ভৈরব বাজার ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এছাড়া, পায়রা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে এবং পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে সারা দেশে ৪৭৪ কিলোমিটার রেল লাইন সংস্কার করেছে। এছাড়া, নতুন কোচ ও লোকোমোটিভ কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ষষ্ঠ পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় রেলওয়ে খাতে অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফরিদপুর, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, মংলা সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার, মাওয়া, পাবনা এবং ঢালারচরকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত