বাংলাদেশ হরতাল-অবরোধের ক্ষতি পুষিয়ে নেবেঃ প্রধানমন্ত্রী

464

Published on এপ্রিল 14, 2015
  • Details Image

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সকলকে একসঙ্গে কাজ করার ও সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস যে, বাংলাদেশের জনগণের যে কোন পরিস্থিতি পুষিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সঠিক নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেশকে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে নেবে।

তিনি আজ বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে নাটোর ও ফেনী জেলা উন্নয়ন কমিটি এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ ও ৪ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ৯২ দিন দলীয় কার্যালয়ে জীবনযাপন করেন। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি এবং নিরপরাধ মানুষকে জীবন্ত দগ্ধ করেছেন। জনগণের প্রতি ন্যূনতম ভালবাসা থাকলে কোন রাজনীতিক এ ধরনের নৃশংস কাজ করতে পারতেন না।

তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। খালেদা জিয়া সরকারের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ বিএনপি নেত্রীর কর্মকান্ডে জণগণের সমর্থন ছিল না। বরং তাকে আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে ঘরে ফিরে যেতে হয়েছে।’

বিএনপি চেয়ারপার্সনকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে সরকার পতনের চিন্তা করার মতো শক্তি তার আর হবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ শান্তি চায়। এজন্য জনজীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। জঙ্গী কর্মকান্ড, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও মানুষ হত্যার জন্য দায়ী প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আদালতে সোপর্দ করতে হবে।

তিনি এ লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে তাদের অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য এ কাজ করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁঞা ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

যথাসময়ে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন ও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য তিনি প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে প্রথমে নিজ নিজ এলাকায় গৃহহীন মানুষদের খুঁজে বের করে খাস জমি বরাদ্দ দেয়া ছাড়াও তাদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের দ্রুত উন্নয়ন চাই, কেননা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কারণে একটি বিজয়ী জাতি কখনোই অন্য দেশের উপর দীর্ঘদিন নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আজ ভিডিও কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য হল মাঠ প্রশাসনের গতিশীলতা আনা এবং উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের তরিৎ বাস্তবায়ন।
‘আমরা প্রত্যেক জেলায় উন্নয়ন চাই। জেলাসমূহে উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন, নাগরিক সমস্যা, গতিশীলতা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে নতুন ধারণা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্স সহায়তা করে।’

ভিডিও কনফারেন্সকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যে দেশের অগ্রগতির পথে একটি ধাপ হিসেবে উল্লেখ তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সংস্থাসমূহ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহ অতিক্রম করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ভিডিও কনফারেন্স সহায়তা করে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি উন্নত এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করা। তিনি বলেন, ‘একটি দারিদ্রমুক্ত জাতি গঠনে আমাদেরকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। ২০২১ সাল নাগাদ আমরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই।’

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, বাংলাদেশের জনগণ বুঝতে পারে- সরকারের মূল দায়িত্ব জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে কাজ করা।

কিন্তু ২০০১ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ওই সম্ভাবনা ধূলিস্মাৎ হয়ে যায় এবং হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদী কার্যক্রম শুরু হয়। এর ফলে জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে।

‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় দেশ জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীদের দেশে পরিণত হয়। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি খাতে দেশ পিছিয়ে পড়ে’ একথা উল্লেখ করে তিনি এটা কোন একটি দেশের জন্য খুবই ব্যতিক্রম দেশটি ইতোমধ্যে উন্নয়নের যে মাত্রা অর্জন করেছে সেখান থেকে পিছিয়ে পড়েছে।

‘কিন্তু বাস্তবতা হল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে’ একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াত তাদের স্বার্থে ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে এবং দেশের উন্নয়ন অথবা কল্যাণে তারা কখনোই নিবেদিত ছিল না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদের পুরো সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ, গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্যদেরকে হত্যা এবং অপরাধমূলক কর্মকা-ে তারা ব্যস্ত ছিল’।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, তাদের অনেককে বিদেশ থেকে দেশে আনা এবং দেশকে বিপরীত দিকে নিয়ে গিয়ে জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে জঘন্য কাজটি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আলবদর রাজাকার প্রধান এবং গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারীদের তার মন্ত্রিসভার সদস্য করে এবং জাতীয় পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার স্বামীর অসম্পন্ন কাজ শেষ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের জনগণ ২০০৮ সালে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। তিনি বলেন, বিএনপি এবং বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগ ওই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে তখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এমন এক সময় ক্ষমতায় আসে যখন বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি দেশ বিএনপি-জামায়াত জোটের অপশাসনে ধুকছিল। তিনি বলেন, মাত্র ৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। তিনি আরো বলেন, আজ বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র এবং উন্নয়নের আদর্শ হিসেবে বিশ্বে আবির্ভুত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন আবার উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখনই বিএনপি ও জামায়াত নৈরাজ্য শুরু করেছে। ২০১৩ সালে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- ছিল অবর্ণনীয় এবং ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জনের নামে তারা আবার ২০১৫ সালে নৈরাজ্য শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের জনগণ এক বছর শান্তি ও স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গত জানুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন তার নেতাকর্মীদেরকে নৈরাজ্য ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দেন। তিনি অমানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেন, যার ফলে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে সরকারি সম্পত্তি।
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে ফেনী ও নাটোরে দুঃসহ পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিরা একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে কেটে টুকরো টুকরো করে কবর দিয়েছে। অন্য একজন নেতাকে মেরে পা উপরে দিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যা করা হতো এবং বিএনপি সরকারের মন্ত্রীরা ওইসব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা নাটোর এবং ফেনীর জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা ওইসব এলাকায় আবার মাথা তুলতে না পারে। তিনি উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে জনগণকে সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত