428
Published on এপ্রিল 7, 2015তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী অঙ্গীকার করেছিলেন সরকারের পতন না ঘটিয়ে তিনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু সরকার উৎখাত করে গলায় ফুলের মালা নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়া তার ভাগ্যে জোটেনি। বরং আদালত থেকে জামিনের পর ব্যর্থতা ও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তিনি ঘরে ফিরে গেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাদের এক সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গত তিন মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের আরোপিত হরতাল ও অবরোধ ব্যর্থ করে দিতে অবদান রাখার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানাতে এ সভা আহ্বান করা হয়। এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও এডভোকেট সাহারা খাতুন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ এবং এডভোকেট কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জনগণ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন প্রতিহত করতে তারা ব্যাপক অবদান রেখেছেন। এটি জনগণের বিজয়। যারা স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে চায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এটি তাদের বিজয়। এটি তাদের বিজয়, যারা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চায়।
এ বিজয়কে ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা কেউ যাতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে।’ তবে যে কোন ধরনের কালবৈশাখী অথবা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি জানি, আপনারা সতর্ক রয়েছেন। তবে আপনাদেরকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কাউকে জনগণের ক্ষতি করতে দেবে না। কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ দেশের স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের উন্নয়ন। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগই এ লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। কেননা এই দলেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা এনেছে।
আওয়ামী লীগ প্রতিটি বাড়িতে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে পারবে বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা সবসময় জনগণের পাশে থাকার জন্য এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে জনগণের সুখে-দুঃখে সাথী হতে হবে ও তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ তারাই আমাদের শক্তি। জনগণ এই প্রজাতন্ত্রের মালিক। সংবিধানের ৭ ধারায় এটি উল্লেখ রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দলের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, এটি সংবিধানের একটি বিধি এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। জাতির জনকের নির্দেশ ও আদর্শ মেনে চলে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
দেশে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করার জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন অনেক কিছু সৃষ্টি করে। অন্যদিকে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে তখন তারা সবকিছুই ধ্বংস করে। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে না। তারা হাওয়া ভবন খুলে ‘কমিশন’ খাওয়ার জন্য ব্যস্ত ছিল।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণ শান্তিতে থাকে এবং দেশ বিশ্বে একটি মডেল হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশ সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদে নিমজ্জিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল-অবরোধের নামে গত তিন মাস যাবত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েম করেছিল। তিনি বলেন, তারা ১৫০ জনের বেশি লোককে পুড়িয়ে মেরেছে। বাস-ট্রাক, সিএনজি, লঞ্চ ও ট্রেনে এ সময়ে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা ২০১৩ সালেও এ ধরনের অপরাধ করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শান্তিকামী জনগণ হরতাল-অবরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। তা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া ‘ভাঙা রেকর্ডের’ মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতি দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং দারিদ্র্যতার হার ২৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, এছাড়া তাঁর সরকার সারাদেশে অনেক ফ্লাইওভার, ওভার পাস, বড় সেতু নির্মাণসহ দেশে রেল, সড়ক ও বিভিন্ন খাতে অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, ফ্লাইওভার, ওভারপাস নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ ও পানির অভাব পূরণ করার ফলে ঢাকা মহানগরী বিশ্বের যে কোন উন্নত মহানগরীর সঙ্গে এখন তুলনীয় হতে পারে।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল