544
Published on মার্চ 14, 2015শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া একজন খুনী। তার হাতে রক্তের দাগ রয়েছে। তার শরীরে পোড়া মানুষের গন্ধ। আমরা কেন তার সঙ্গে আলোচনায় বসবো ? টেলিফোনে কথা বলার সময়ে যে মহিলা গালি দেয় এবং তার সন্তানের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে গেলে অফিসের গেট বন্ধ করে রাখে, সেই মহিলার সঙ্গে আমরা কেন আলোচনায় বসবো ?
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যিনি একজন জঙ্গিনেত্রী এবং যিনি পেট্রোল বোমা ও ককটেল দিয়ে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাকে হত্যা করে, যিনি জনগণকে মানুষ বলে মনে করেন না, তার সঙ্গে কে আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, বরং আমি তাকে পরামর্শ দেই, তিনি যেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আদালতে যেয়ে আত্মসমর্পন করেন। তার জন্য এটি সবচেয়ে ভাল হবে। তিনি যদি তা না করেন, সরকার বাধ্য হবে আদালতের আদেশ কার্যকর করতে।
প্রধানমন্ত্রী আজ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন ও পেট্রোল বোমা হামলা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস এবং মানুষ হত্যা ও উন্নয়ন, অর্থনীতি, শিক্ষা ধ্বংসের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি এএফএম মেজবাউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি এএফএম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের ঢাকা বিভাগের প্রতিনিধি এডভোকেট আনিসুর রহমান খান, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিনিধি একিউএম সিরাজুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খানের তৈরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৬ বছরে দেশে সার্বিক উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেনটেশন দেখানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনের সরকার বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, বেগম জিয়া আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। তিনি বলেন, কোন সচেতন মানুষ কখনোই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ চান না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছিলেন। তিনি এখন জনগণের উপর এর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তিনি জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তবে আমি যত সময় বেঁচে আছি, ততো সময় জনগণের ভাগ্য নিয়ে তাকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে যে ঘোষণা দিচ্ছেন, এখন পর্যন্ত এর কোন সুফল তিনি পাননি। জনগণ সবকিছু দেখছে এবং তারা সব কিছু জানে। বিএনপি নেত্রী যাদের দিকে তাকিয়ে আছেন, তাদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাচ্ছেন না। উত্তর অথবা পশ্চিম, কোন দেশ অথবা কোন মহলের কাছ থেকে তিনি সাড়া পাচ্ছেন না। তার জঙ্গীবাদ এবং আগুন দিয়ে মানুষ মারাকে কেউ সমর্থন দিতে পারে না।
শেখ হাসিনা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সফলতার উল্লেখ করে বলেন, তাঁর দল জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারায় সফল হয়েছিল। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছি এবং তাদের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছি। বেগম জিয়া জনগণের ভোট চুরি করায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ সম্পর্কে বলেন, খালেদা জিয়াকে জবাব দিতে হবে, তিনি তাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে অবশ্যই বলতে হবে, তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা সম্প্রতি খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিস থেকে কিছু ময়লা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে গেছে। খালেদা জিয়া সম্ভবত এই ময়লা ভর্তি ব্যাগে করে তাকে কোথাও পাচার করে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা খুঁজে বের করতে পারলে তাকে অবশ্যই গ্রেফতার হতে হবে।
শেখ হাসিনা যখন শোকাহত মাকে সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিসে গিয়েছিলেন, সে সময় তার দম্ভোক্তির উল্লেখ করে বলেন, তিনি একজন সরকার প্রধান হিসেবে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
খালেদা জিয়ার সংলাপের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে সংলাপের জন্য তিনি বিএনপি প্রধানকে ফোন করেছিলেন। ‘তবে ফোন রিসিভ করতে খালেদা জিয়া ৬ ঘণ্টা সময় নিয়েছেন এবং ফোন ব্যাক করার সৌজন্যও তিনি দেখাননি। টেলিফোন সংলাপকালে তিনি আমার সঙ্গে যে গলাবাজি ও ঝগড়া করেছেন তা আমাকে বিস্মিত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে যে কোন মন্ত্রণালয় এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে।
‘আমরা সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম যাতে নির্বাচনে কোন ত্রুটি না থাকে। তবে নির্বাচন বর্জন ছিল তার নিজের ভুল সিদ্ধান্ত।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে, তবে তারা সফল হয়নি। এজন্য তারা ৫৮২টি স্কুল জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং একজন প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি এবং ৪০ শতাংশ ভোটার এতে ভোট প্রদান করেছে।
নির্বাচনের পরে বর্তমান সরকারের বৈধতার বিষয় বিএনপি’র প্রশ্ন তোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া গোটা বিশ্ব সরকারকে বৈধতা দিয়েছে। ‘সরকার বৈধ না হলে বাংলাদেশ সিপিএ ও আইপিইউ নির্বাচনে বিজয়ী হতো না।’
তিনি বলেন, বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ এই দু’টি সংস্থায় বিজয়ের মাধ্যমে দেশ রেকর্ড স্থাপন করেছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, হাইকোর্ট জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল ও সামরিক স্বৈরাচারের অধীনে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ‘যদি জিয়ার শাসন অবৈধ হয়, তবে জিয়ার গঠিত বিএনপিও অবৈধ হবে।
তিনি খালেদা জিয়াকে বলেন, নিজের আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন।’
গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী নারী ও শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য তার দলের নেতা- কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জনগণের খুনিরা তার (খালেদা জিয়া) কাছে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি- জামায়াতের হামলায় আগুনে পুড়ে যেসব মানুষ মারা গেছেন তাদের প্রতি তিনি (খালেদা জিয়া) কোনরকম সহানুভূতি প্রকাশ করেননি।এর মাধ্যমে সবার কাছে তার চরিত্র স্পষ্ট হয়ে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন সব সময় দাবি করেন তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশের জন্য তার কি কোন দায়দায়িত্ব আছে ? দায়িত্বশীল হলে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার সময় তিনি হরতাল ডাকতে পারেন না বলে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী আইন-আদালত মানেন না। তিনি বলেন, ‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলোর শুনানীর তারিখ ৬৭ বার নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মাত্র সাত দিন হাজিরা দিয়েছেন। এবং ওই সাতদিন বিচারককে ভয় দেখানোর জন্য তিনি তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে গেছেন।’
দেশে গণমাধ্যমের কোন স্বাধীনতা নেই- বিএনপি নেত্রীর এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে কিভাবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো একজন পলাতক আসামির সংবাদ সম্মেলন সম্প্রচার করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) মিথ্যাচার হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলসকেও ছাড়িয়ে গেছে এবং গোয়েবলস বেঁচে থাকলে তিনিও খালেদা জিয়ার মিথ্যাচারে লজ্জা পেতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি- জামায়াত জোটের সমালোচনা করে বলেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে, অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে নগ্নভাবে চেষ্টা করছে’।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্ব হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণে এবং চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ মদদে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটেছে এবং তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন তাঁর সরকার সকল সমস্যার সমাধান করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখনই বিএনপি- জামায়াত চক্র দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপি নেত্রী ও তার ছেলের সীমাহীন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বড় ধরনের দুর্নীতি করে তারা কি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যে, এফবিআই এজেন্টদের তারা ঘুষ হিসেবে টাকা দিয়েছে।
বিভিন্ন ক্রান্তিকালে এবং জাতির আন্দোলনে পেশাজীবীদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নের্তৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবং স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়নে তারা মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
তিনি বলেন, ’১/১১- এর পরে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন’।
আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের গত ছয় বছরের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল