রাজনৈতিক স্বার্থে মানুষ পোড়াচ্ছেন খালেদা জিয়াঃ প্রধানমন্ত্রী

481

Published on মার্চ 8, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থের জন্য হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- পেট্রোল ঢেলে, ককটেল মেরে দেশের মানুষকে হত্যার অধিকার তাকে (বেগম জিয়া) কে দিয়েছে?’

তিনি বলেন, বেগম জিয়া দাবি করেন যে, তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য ও তাদের কল্যাণের জন্য- রাজনীতি মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য নয়। এ জন্য তিনি এ ধরনের নৃশংসতার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে নারী সমাজসহ দেশের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা কোনভাবেই সহ্য করা যায় না। খালেদা জিয়াকে তার নির্মম ও নৃশংস কর্মকা-ের শাস্তি পেতেই হবে।

শেখ হাসিনা রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব নারী দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর উন্নয়ন’।

নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।

এই মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আর্জেন্টিনা মেতাভেল পিককিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

এতে দেশের নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।

তথাকথিত আন্দোলনের নামে হরতাল ও অবরোধ ডাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন এখন সরকারেও নেই, সংসদেও নেই। তিনি তার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য এখন কোথাও নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বেগম জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই নির্বাচন ভন্ডুল করতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নির্বাচন ভন্ডুল করতে তারা সফল হননি।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন যে, কী ধরনের আন্দোলন তারা করছেন? বেগম জিয়া তার বাসা ছেড়ে নিজেকে অফিসের মধ্যে আটকে রেখে পেট্রোল ঢেলে, ককটেল মেরে মানুষ হত্যা করছেন। পেট্রোল ঢেলে ও বোমা মেরে অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা ও শিশুদের হত্যা করার কথা কি ভাবা যায় ?

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্রের নৃশংসতা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু কেউ-ই রক্ষা পাচ্ছে না।

নারী বিরোধী প্রচারণা বন্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি এ লক্ষ্যে নারী-পুুরুষ নির্বিশেষ সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মহল ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারী বিদ্বেষী অপপ্রচার করে নারীদের গৃহবন্দী রাখতে চায়।

দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। এ জন্য নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে সকল বাধা পেরিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

স্বাধীনতার পর নারী সমাজের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭২-এর সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

নারী সমাজের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে নারীদের কল্যাণে কাজ করে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নারী উন্নয়নমুখী নীতির কারণে এখন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, অনেক বিচারক, সচিব ও উপাচার্য হচ্ছেন নারী।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত আসন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে ফলপ্রসূ কর্মসূচি নিয়েছে।

এছাড়া জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়নসহ নারী সমাজের উন্নয়নে বিগত ৬ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও নারী স্বাক্ষরতায় ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘসহ অনেক দেশ ও সংস্থা নারী সমাজের উন্নয়নে বাংলাদেশের নিরলস প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিপুল ভোটে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, যা বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা ও ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের নারীরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩ ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করেছে। এখন মন্ত্রণালয়গুলো জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করছে।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত